পৃষ্ঠাসমূহ

পাখির বাসার মত মন


রাত দশটা। বাহিরে বৃষ্ঠি হচ্ছে। বীথিকা বারান্দার গ্রিলে হাত রেখে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছে। মৃদুল বাথরুম থেকে বের হয়ে গলা খেকি দিলে তা বীথিকার কানে পৌঁছল। সে যেন নিজেকে খুঁজে পায়। তারপর সোজা হেঁটে ডাইনিং এর টেবিলে সাজিয়ে রাখা ডিনারের দিকে গেল। মৃদুল তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছতে মুছতে রাতের খাবার খেতে এলো। কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই। ছোট্ট এ বাসায় মাত্র দুজন মানুষ। বিয়ের তিন বছর যাবৎ এরা এখানেই থাকছে। এখানে একটা বেসরকারী ব্যাংকে মৃদুল চাকরী করে। কিছু দিনের মধ্যে বীথিকারও স্থানীয় একটা কলেজে চাকুরী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। র্নিঝঞাট এই দম্পতি এখন পর্যন্ত কোন সন্তান নেয় নি। পরিবারকে তারা জানিয়ে দিয়েছে আরো একটু গুছিয়ে তারপর সন্তান নেবে। মৃদুল ও বীথিকার সেটেল্ট ম্যারেজ হলেও এরা খুবই পরিতৃপ্ত দম্পতি ছিল গতকাল পর্যন্তও!
কিন্তু আজ সকালেই একটা ঝামেলা ঘটে গেছে। বীথিকার কলেজ জীবনের এক বয়ফ্রেন্ড কি মনে করে মৃদুলের অফিসে আসে। যাওয়ার সময় কিছু ছবি ও চিঠি বীথিকাকে দেয়ার জন্য দিয়ে যায়। প্যাকেটের মুখ খোলা থাকায় মৃদুল তা খোলে দেখে। বাসায় ফিরে সে এক একটি ছবি ও চিঠি বীথিকার সামনে ছুড়ে মারে। বীথিকা এসব দেখে 'থ' বনে যায়! কাজল যতই আবেগ-প্রবণ ছেলে হউক এত বছর পর সে এই কাজ করতে পারে, তা বীথিকা কল্পনায় ভাবতে পারেনি। এদিকে বীথিকা কখনো তার প্রথম প্রেমের কথা মৃদুলকে বলেনি। আজ সে মৃদুলের কাছে কতটা নিচু হয়ে গেল_ ভাবতে ভাবতে তার মাথা আরো নিচে নেমে যায়। বিকালের ঘটনার পর থেকে মৃদুল তার সাথে একটি কথাও বলেনি। যে মৃদুল বাসায় ফিরে অফিসের সব ঘটনা না বলে থাকতে পারে না, সে কিনা আজ কোন কথা বলে বেরিয়ে গেল আর ফিরল এই এখন।
দুজন শব্দহীনভাবে রাতের খাবার শেষ করল। বেডরুমে মৃদুল পাশ ফিরে শোয়ে থাকে। কাজকর্ম শেষ করে বীথিকা রুমে যায়। সে বিছানার একপাশে বসে হঠাৎ ফুফিয়ে কেঁদে ফেলে। অনেকণ কাঁদতে থাকে। এক সময় কি ভেবে মৃদুল পাশ ফিরে বীথিকার কাঁধে হাত রাখে। জলে টলমল চোখে বীথিকা মৃদুলের দিকে তাকায়। তারপর অপরাধী দৃষ্ঠিতে বলে_ আমার ভুল হয়ে গেছে। মৃদুল একটু মুছকি হাসে। তারপর বীথিকার হাত তার হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে_ কোথায় ভুল করেছ, কলেজে নাকি আমার কাছে গোপন করে?
বীথিকা আস্তে করে মৃদুলের বুকে মাথা রাখে।