এর দ্বারা পোস্ট করা
suMon azaD (সুমন আজাদ)
ক্রসফায়ার এর পর যে হত্যাকান্ড নিয়ে বাংলাদেশীদের চিন্তার কারণ রয়েছে তা হল গুপ্তহত্যা বা গুম করে দেয়া। গুপ্ত হত্যা কি? গুপ্তহত্যা বা গুমখুনের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য থাকলেও “ফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ারেন্স” বা কাউকে অদৃশ্য করে দেয়ার কৌশলটি লাতিন আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে গত শতকের সত্তর দশকে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, “ফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ারেন্স” বা কাউকে অদৃশ্য করে দেয়ার ঘটনাটি তখনই ঘটে, যখন:
রাষ্ট্র বা কোন রাজনৈতিক সংগঠন অথবা তাদের কোন একজনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদপুষ্ট কোনো তৃতীয় পক্ষ যখনই কাউকে বলপূর্বক গোপনে ধরে নিয়ে যায় এবং আটকে রাখে, এবং সে বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রদান করে না, যাতে করে আটকে থাকা ব্যক্তি আইনের আশ্রয় নিতে পারে। [উইকিপিডিয়া, ফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ারেন্স]
উইকিপিডিয়া আরো লিখেছে, কাউকে অদৃশ্য করে দেয়ার অব্যবহিত পরের ঘটনাটিই হল তাকে খুন করা। এক্ষেত্রে আটক ব্যক্তিকে প্রথমে নির্যাতন করা হয়, তারপর খুন করে লাশ গায়েব করে দেয়া হয়। এই হত্যার দায়দায়িত্ব কেউ স্বীকার করে না, ফলে চিরকালের জন্য “অদৃশ্য” থেকে যায়।
রহস্যজনকভাবে কিছু মানুষের নিখোঁজ হওয়া এবং নিখোজ হওয়ার কিছুদিন পর কিছু নিখোজ ব্যক্তিদেরর পচা-গলা লাশ পাওয়া যাওয়া সত্যিই একটি ভয়ানক ব্যপার কিন্তু এই ব্যপারটিই ঘটে যাচ্ছে গত এক-দেড় বছর যাবৎ ধরে। খবরের কাগজ গুলোতে প্রায়ই এই ধরনের খবর আসছে।
বলা নাই কওয়া নাই জল-জ্যান্ত মানুষ নিখোঁজ হচ্ছে কোন কোন ক্ষেত্রে নিখোঁজ ব্যাক্তিদের পরিবারের কাছে ফোন করে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করা হচ্ছে। আবার করো ক্ষেত্রে মৃত্যুই হচ্ছে শেষ পরিনতি। আর যাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি বা
কোন মুক্তিপণ আদায়ের ফোন আসেনি ধারনা করা হচ্ছে তারাও হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। এই পর্যন্ত মিডিয়া হতে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ি ৪৫ জন নিখোজ হয়েছেন তাদের ২৪ জনের মৃতদেহ বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গিয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের
পরিবারের কাছ থেকে জানা যায় অনেক সময় তাদের বাসা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পরে থানায় যোগাযোগ করা হলে তারা উত্তর দেয় তারা এই ব্যপারে কিছুই জানে না। সরকার ও বিরোধী দল এই ব্যপারে একে অপরকে দোষ দিচ্ছে। সরকার বলছে এইটা বিরোধী দলের কাজ তারা যুদ্ধঅপরাধীদের বিচার ঠেকাতে এই কৌশল অবলম্বন করছে আর বিরোধী দল বলছে সরকার তাদের দলের
নেতা-কর্মীদের অপহরণ করে হত্যা করছে। যাই হোক যারা নিখোঁজ হচ্ছে বা হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে তারা এদেশেরই মানুষ আমরা তাদের হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারি না, আমরা হত্যার বিচার চাই।
বাংলাদেশে একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে যাদের রয়েছে প্রচুর ক্ষমতা। তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে । এরা অপরাধী সন্দেহে ভাল মানুষকে পর্যন্ত ক্রসফায়ার করে , সাধারণ ছাত্রকে সন্ত্রাসি বানিয়ে গুলি করে পঙ্গু করে ফেলে, সন্ত্রাসিদের রাজনৈতিক গডফাদারদের বাঁচাতে হাত বেধে গুলিকরে
হত্যাকরে পরে মিডিয়ায় বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ সন্ত্রাসি নিহত বলে প্রচার করে, শিকারোক্তি আদায়ের নামে অমানুষিক নির্যাতন করে, সাধারণ ছাত্রদের ধরে নিয়ে মিডিয়ায় জঙ্গি বলে চালিয়ে দেয়। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনের জন্য ট্রাফিক পুলিশ
থাকলেও মাঝে মাঝে তারাই হয়ে যায় ট্রাফিক কন্ট্রলার। মটরসাইকেল,প্রাইভেটকার থামিয়ে চাঁদা তোলে। তাদের অত্যাচার আর বিচার বিহীন হত্যাকান্ডের সমালোচনা
সবসময় বিভিন্ন দেশী-বিদেশী মানবাধীকার সংগঠনগুলো করে থাকে। বর্তমান সরকার যখন বিরোধী দল ছিল তারাই ছিল এই বাহিনীর সবচাইতে বড় সমালোচক তারা বলেছিল
তারা ক্ষমতায় গেলে তারা এই বাহিনীকে বলুপ্ত করবে অথচ তারা যখন সরকার হলো তখন এই বাহিনীকে বিলুপ্ত করাতো দুরের কথা বরং এই বাহিনী আরও লাগামহীন হয়ে গেছে।
সম্গ্রতি বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘনের প্রশ্নে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশে মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান ড: মিজানুর যে শঙ্কা প্রকাশ
করেছন তাতে রীতিমত শিহরে উঠার আবস্থা। এক সাগর রক্ত আর শত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে যে দেশটি স্বাধীন হয়েছিল, সে দেশ আজ ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হবে এই আশংকা সত্যি আমাদের জন্য চরম বেদনার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে মানুষের আশা আকাঙ্খার বাস্থবায়ন করার কথা ছিল ঠিক সে সময়
তৎকালীন ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে যে দুঃশাসন কায়েম করেছিল তাকেও হার মানিয়েছে।
মানবাধিকার অর্থই হচ্ছে মানুষ তার অধিকার নিশ্চিতভাবে যে কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই ভোগ করবে। অথচ বাংলাদেশ আজ তার অবস্থান বিপরীত মেরুতে নিয়ে গেছে। যে সরকার নিজের খেয়াল খুশীমত নিজ কার্য চরিতার্থ করার জন্য রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশের মানুষকে নির্যাতন করে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, সে সরকারের হাতে মানবাধিকার নিশ্চিত করা অসম্ভব। এখন দরকার রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করার প্রশ্নে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় গণআন্দোলনের মাধ্যমে একটি নিখাদ সুস্থ, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা, যা রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করবে।
সামরিক শাসকদের কথা বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের আমলে এভাবে রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনা ছিল আমাদের সব কল্পনার বাইরে। কিন্তু এখন কল্পনাতীতভাবে এসব ঘটনা ঘটছে। ঘটনাবলীর নৃশংসতা দেখে দেশবাসী এখন বুঝতে পারছে, যারা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে তারা গণতান্ত্রিক সরকারের সমর্থক নয়। আমাদের জনগণের জন্য বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের তরুণদের জন্য একটি উপলব্ধি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল যে, আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও কার্যত তাদের প্রবণতা ফ্যাসিতান্ত্রিক। এ দেশের তরুণ প্রজন্ম ১৯৭২-১৯৭৫’র পর্ব দেখেনি। দেখলে অবশ্য তাদের পক্ষে হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন হতো না যে দলটি চরিত্রগতভাবে আসলে ফ্যাসিবাদী। ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী যখন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তখনও গুণ্ডামি ও লাঠিবাজি করে এ উদ্যোগকে বানচাল করে দেয়ার প্রয়াস নেয়া হয়। ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে নতুন একটি বামপন্থী দল গঠনের উদ্যোগ হিসেবে মওলানা ভাসানী গণতান্ত্রিক কনভেনশন ডেকেছিলেন। সেই কনভেনশনে যোগ দিয়েছিলেন তত্কালীন পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের সর্বজনমান্য নেতারা। তাদের মধ্যে ছিলেন খান আবদুল গাফফার খান, প্রিন্স আবদুল করিম, আবদুস সামাদ আচাকজাই, মিয়া ইফতেখার উদ্দিন, হাজি মোহাম্মদ দানেশ, মাহমুদ আলী, মোহাম্মদ তোয়াহাসহ আরও অনেকে। সেদিনও এসব শ্রদ্ধেয় নেতাকে নির্মম লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত করা হয়েছিল। সুতরাং আওয়ামী ইতিহাসে রক্তাক্ত করার ঘটনা নতুন কিছু নয়। সে কারণে এদের আজকের আচরণ দেখে অবাক হইনি।
জাতি হিসাবে আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস দীর্ঘ দিনের কিন্তু ১৯৭১ সালের সংগ্রামের পর জাতির প্রত্যাশা ছিল তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম হয়তো বা আর করতে হবেনা। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও বাংলাদেশের মানুষকে মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে গুপ্ত হত্যা সাম্প্রতিককালে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ শিরোনাম হিসেবে বারে বারে উঠে আসছে। বিষয়টা হঠাৎ করে এতোই প্রকটভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, বর্তমান সরকারের প্রতি নীতিগতভাবে সহানুভূতিশীল মহলও এ ব্যাপারে নীরব থাকতে পারছেন না। গুপ্ত হত্যা আতঙ্ক এখন শহরে-গ্রামে সর্বত্র সাধারণ মানুষকে এক নিদারুণ অস্বস্তি ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। অতীতের একাধিক বারের মতো বিভিন্ন কণ্ঠে আওয়াজ উঠছে, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। পুলিশের আইজি গত ১৭ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দেশে গুপ্ত হত্যা চলছে বলে স্বীকার করেন, তবে এর সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন। সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার ব্যাপারগুলো পুলিশ নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে বলে তিনি জানান। এদিকে বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন যে, বিএনপি-জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার পাশাপাশি দেশকে অস্থিতিশীল করতে হত্যা, গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে এবং নানাবিধ ষড়যন্ত্র করছে। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সন গুম ও খুনের জন্য কিম্বা এসব নৃশংস কর্মকাণ্ড বন্ধে ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন। এতে করে দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বর্ধনশীল গুপ্তখুনের ব্যাপারে জনমণে আতঙ্ক ও সংশয় দিন দিন বেড়ে চলেছে। এ অবস্থা বেশী দিন এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। জন-নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধের প্রয়োজনে অতি দ্রুত এগুলো বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। গুম খুন প্রভৃতি চরম মানবতা বিরোধী অপরাধ। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের ভাষায় ‘এখন ক্রস ফায়ারের স্থান দখল করেছে গুপ্তহত্যা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবী করছে যে, এই গুপ্তহত্যার সাথে তারা জড়িত নয়। কিন্তু এর একটা রহস্য উদঘাটন হওয়া দরকার।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, টিআইবি এবং আইন ও শালিস কেন্দ্রের কর্মকর্তা এডভোকেট সুলতানা কামাল এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। দেশের সুশীল সমাজ এখন প্রায় প্রতিদিন এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত এই ভীতিকর পরিস্থিতির অবসানের লক্ষ্যে কী পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে, তা দেখার উদ্দেশ্যে সরকারের প্রতি তাকিয়ে আছেন।
গুম খুন সংক্রান্ত ব্যাপারে জনমনে উদ্বেগের কারণ এই যে, গত বিজয় দিবসের পূর্ববর্তী মাত্র তিন সপ্তাহ কাল সময়ে অন্ততঃ ২৭ জন নিখোঁজ হয়েছে। লাশ পাওয়া গেছে কয়েকজনের। সরকারী হিসেবে গত দু’বছর এগারো মাসে ১২ হাজার খুনের কথা জানা গেছে। এই হিসেবের বাইরে গুম ও খুনের সংখ্যা কয়েক হাজার বলে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে। সচেতন মহল এ অবস্থাকে জননিরাপত্তাহীন বলে বর্ণনা করছেন। এ অবস্থা হঠাৎ করে একদিনে সৃষ্টি হয়নি। বিভিন্ন মহল এবং মিডিয়া বহু পূর্ব থেকেই এ ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষীয় তরফ থেকে এসব তথ্য অস্বীকার করে বার বার বলা হয়েছে যে, অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ব্যতীত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোন প্রকার অবনতি ঘটেনি বলে উল্লেখ করে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা থেমে থাকেনি। এ বিষয়টা উচ্চতর আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। উচ্চতর আদালতের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে, কাউকে গ্রেফতার কিম্বা আটক করতে গেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন গ্রেফতারের আগে নিজেদের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করবেন। গ্রেফতারের এক ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃতের অবস্থান সম্পর্কে তার পরিবারের সদস্যদেরকে অবহিত করতে হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক শ্রেণীর কর্তা বা কর্মী তা অনুসরণ করছেনা বলে অভিযোগ প্রকাশিত হচ্ছে। এতে করে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে এবং সরকার ও প্রশাসন সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অতীতে বিএনপি সরকারের আমলে অপারেশন ক্লিন হার্টের মধ্য দিয়ে সূচিত বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলো কঠোরভাবে সমালোচিত হয়েছিল। সমালোচকদের শীর্ষে ছিলেন তদানীন্তন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী সরকার গঠনের পর জনগণের প্রত্যাশা ছিল যে এসব ভয়াবহ কাণ্ড-কারখানা থেকে সমাজ ও জনগণ রেহাই পাবে। কিন্তু তা হচ্ছে না। বরং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডগুলো সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে মানবাধিকার কমিশনগুলোর বিশ্লেষণে প্রতিভাত হচ্ছে।
রাষ্ট্র বা কোন রাজনৈতিক সংগঠন অথবা তাদের কোন একজনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদপুষ্ট কোনো তৃতীয় পক্ষ যখনই কাউকে বলপূর্বক গোপনে ধরে নিয়ে যায় এবং আটকে রাখে, এবং সে বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রদান করে না, যাতে করে আটকে থাকা ব্যক্তি আইনের আশ্রয় নিতে পারে। [উইকিপিডিয়া, ফোর্সড ডিজঅ্যাপেয়ারেন্স]
উইকিপিডিয়া আরো লিখেছে, কাউকে অদৃশ্য করে দেয়ার অব্যবহিত পরের ঘটনাটিই হল তাকে খুন করা। এক্ষেত্রে আটক ব্যক্তিকে প্রথমে নির্যাতন করা হয়, তারপর খুন করে লাশ গায়েব করে দেয়া হয়। এই হত্যার দায়দায়িত্ব কেউ স্বীকার করে না, ফলে চিরকালের জন্য “অদৃশ্য” থেকে যায়।
রহস্যজনকভাবে কিছু মানুষের নিখোঁজ হওয়া এবং নিখোজ হওয়ার কিছুদিন পর কিছু নিখোজ ব্যক্তিদেরর পচা-গলা লাশ পাওয়া যাওয়া সত্যিই একটি ভয়ানক ব্যপার কিন্তু এই ব্যপারটিই ঘটে যাচ্ছে গত এক-দেড় বছর যাবৎ ধরে। খবরের কাগজ গুলোতে প্রায়ই এই ধরনের খবর আসছে।
বলা নাই কওয়া নাই জল-জ্যান্ত মানুষ নিখোঁজ হচ্ছে কোন কোন ক্ষেত্রে নিখোঁজ ব্যাক্তিদের পরিবারের কাছে ফোন করে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করা হচ্ছে। আবার করো ক্ষেত্রে মৃত্যুই হচ্ছে শেষ পরিনতি। আর যাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি বা
কোন মুক্তিপণ আদায়ের ফোন আসেনি ধারনা করা হচ্ছে তারাও হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। এই পর্যন্ত মিডিয়া হতে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ি ৪৫ জন নিখোজ হয়েছেন তাদের ২৪ জনের মৃতদেহ বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া গিয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের
পরিবারের কাছ থেকে জানা যায় অনেক সময় তাদের বাসা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পরে থানায় যোগাযোগ করা হলে তারা উত্তর দেয় তারা এই ব্যপারে কিছুই জানে না। সরকার ও বিরোধী দল এই ব্যপারে একে অপরকে দোষ দিচ্ছে। সরকার বলছে এইটা বিরোধী দলের কাজ তারা যুদ্ধঅপরাধীদের বিচার ঠেকাতে এই কৌশল অবলম্বন করছে আর বিরোধী দল বলছে সরকার তাদের দলের
নেতা-কর্মীদের অপহরণ করে হত্যা করছে। যাই হোক যারা নিখোঁজ হচ্ছে বা হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে তারা এদেশেরই মানুষ আমরা তাদের হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারি না, আমরা হত্যার বিচার চাই।
বাংলাদেশে একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে যাদের রয়েছে প্রচুর ক্ষমতা। তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে । এরা অপরাধী সন্দেহে ভাল মানুষকে পর্যন্ত ক্রসফায়ার করে , সাধারণ ছাত্রকে সন্ত্রাসি বানিয়ে গুলি করে পঙ্গু করে ফেলে, সন্ত্রাসিদের রাজনৈতিক গডফাদারদের বাঁচাতে হাত বেধে গুলিকরে
হত্যাকরে পরে মিডিয়ায় বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ সন্ত্রাসি নিহত বলে প্রচার করে, শিকারোক্তি আদায়ের নামে অমানুষিক নির্যাতন করে, সাধারণ ছাত্রদের ধরে নিয়ে মিডিয়ায় জঙ্গি বলে চালিয়ে দেয়। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনের জন্য ট্রাফিক পুলিশ
থাকলেও মাঝে মাঝে তারাই হয়ে যায় ট্রাফিক কন্ট্রলার। মটরসাইকেল,প্রাইভেটকার থামিয়ে চাঁদা তোলে। তাদের অত্যাচার আর বিচার বিহীন হত্যাকান্ডের সমালোচনা
সবসময় বিভিন্ন দেশী-বিদেশী মানবাধীকার সংগঠনগুলো করে থাকে। বর্তমান সরকার যখন বিরোধী দল ছিল তারাই ছিল এই বাহিনীর সবচাইতে বড় সমালোচক তারা বলেছিল
তারা ক্ষমতায় গেলে তারা এই বাহিনীকে বলুপ্ত করবে অথচ তারা যখন সরকার হলো তখন এই বাহিনীকে বিলুপ্ত করাতো দুরের কথা বরং এই বাহিনী আরও লাগামহীন হয়ে গেছে।
সম্গ্রতি বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘনের প্রশ্নে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশে মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান ড: মিজানুর যে শঙ্কা প্রকাশ
করেছন তাতে রীতিমত শিহরে উঠার আবস্থা। এক সাগর রক্ত আর শত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে যে দেশটি স্বাধীন হয়েছিল, সে দেশ আজ ধীরে ধীরে গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হবে এই আশংকা সত্যি আমাদের জন্য চরম বেদনার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে মানুষের আশা আকাঙ্খার বাস্থবায়ন করার কথা ছিল ঠিক সে সময়
তৎকালীন ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে যে দুঃশাসন কায়েম করেছিল তাকেও হার মানিয়েছে।
মানবাধিকার অর্থই হচ্ছে মানুষ তার অধিকার নিশ্চিতভাবে যে কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই ভোগ করবে। অথচ বাংলাদেশ আজ তার অবস্থান বিপরীত মেরুতে নিয়ে গেছে। যে সরকার নিজের খেয়াল খুশীমত নিজ কার্য চরিতার্থ করার জন্য রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশের মানুষকে নির্যাতন করে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, সে সরকারের হাতে মানবাধিকার নিশ্চিত করা অসম্ভব। এখন দরকার রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করার প্রশ্নে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় গণআন্দোলনের মাধ্যমে একটি নিখাদ সুস্থ, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা, যা রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করবে।
সামরিক শাসকদের কথা বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের আমলে এভাবে রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনা ছিল আমাদের সব কল্পনার বাইরে। কিন্তু এখন কল্পনাতীতভাবে এসব ঘটনা ঘটছে। ঘটনাবলীর নৃশংসতা দেখে দেশবাসী এখন বুঝতে পারছে, যারা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে তারা গণতান্ত্রিক সরকারের সমর্থক নয়। আমাদের জনগণের জন্য বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের তরুণদের জন্য একটি উপলব্ধি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল যে, আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও কার্যত তাদের প্রবণতা ফ্যাসিতান্ত্রিক। এ দেশের তরুণ প্রজন্ম ১৯৭২-১৯৭৫’র পর্ব দেখেনি। দেখলে অবশ্য তাদের পক্ষে হৃদয়ঙ্গম করা কঠিন হতো না যে দলটি চরিত্রগতভাবে আসলে ফ্যাসিবাদী। ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী যখন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তখনও গুণ্ডামি ও লাঠিবাজি করে এ উদ্যোগকে বানচাল করে দেয়ার প্রয়াস নেয়া হয়। ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে নতুন একটি বামপন্থী দল গঠনের উদ্যোগ হিসেবে মওলানা ভাসানী গণতান্ত্রিক কনভেনশন ডেকেছিলেন। সেই কনভেনশনে যোগ দিয়েছিলেন তত্কালীন পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের সর্বজনমান্য নেতারা। তাদের মধ্যে ছিলেন খান আবদুল গাফফার খান, প্রিন্স আবদুল করিম, আবদুস সামাদ আচাকজাই, মিয়া ইফতেখার উদ্দিন, হাজি মোহাম্মদ দানেশ, মাহমুদ আলী, মোহাম্মদ তোয়াহাসহ আরও অনেকে। সেদিনও এসব শ্রদ্ধেয় নেতাকে নির্মম লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত করা হয়েছিল। সুতরাং আওয়ামী ইতিহাসে রক্তাক্ত করার ঘটনা নতুন কিছু নয়। সে কারণে এদের আজকের আচরণ দেখে অবাক হইনি।
জাতি হিসাবে আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস দীর্ঘ দিনের কিন্তু ১৯৭১ সালের সংগ্রামের পর জাতির প্রত্যাশা ছিল তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম হয়তো বা আর করতে হবেনা। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও বাংলাদেশের মানুষকে মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে গুপ্ত হত্যা সাম্প্রতিককালে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ শিরোনাম হিসেবে বারে বারে উঠে আসছে। বিষয়টা হঠাৎ করে এতোই প্রকটভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, বর্তমান সরকারের প্রতি নীতিগতভাবে সহানুভূতিশীল মহলও এ ব্যাপারে নীরব থাকতে পারছেন না। গুপ্ত হত্যা আতঙ্ক এখন শহরে-গ্রামে সর্বত্র সাধারণ মানুষকে এক নিদারুণ অস্বস্তি ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। অতীতের একাধিক বারের মতো বিভিন্ন কণ্ঠে আওয়াজ উঠছে, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। পুলিশের আইজি গত ১৭ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দেশে গুপ্ত হত্যা চলছে বলে স্বীকার করেন, তবে এর সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেছেন। সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার ব্যাপারগুলো পুলিশ নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে বলে তিনি জানান। এদিকে বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন যে, বিএনপি-জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার পাশাপাশি দেশকে অস্থিতিশীল করতে হত্যা, গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে এবং নানাবিধ ষড়যন্ত্র করছে। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সন গুম ও খুনের জন্য কিম্বা এসব নৃশংস কর্মকাণ্ড বন্ধে ব্যর্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন। এতে করে দেশে আশঙ্কাজনকভাবে বর্ধনশীল গুপ্তখুনের ব্যাপারে জনমণে আতঙ্ক ও সংশয় দিন দিন বেড়ে চলেছে। এ অবস্থা বেশী দিন এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। জন-নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধের প্রয়োজনে অতি দ্রুত এগুলো বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। গুম খুন প্রভৃতি চরম মানবতা বিরোধী অপরাধ। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের ভাষায় ‘এখন ক্রস ফায়ারের স্থান দখল করেছে গুপ্তহত্যা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবী করছে যে, এই গুপ্তহত্যার সাথে তারা জড়িত নয়। কিন্তু এর একটা রহস্য উদঘাটন হওয়া দরকার।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, টিআইবি এবং আইন ও শালিস কেন্দ্রের কর্মকর্তা এডভোকেট সুলতানা কামাল এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। দেশের সুশীল সমাজ এখন প্রায় প্রতিদিন এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত এই ভীতিকর পরিস্থিতির অবসানের লক্ষ্যে কী পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে, তা দেখার উদ্দেশ্যে সরকারের প্রতি তাকিয়ে আছেন।
গুম খুন সংক্রান্ত ব্যাপারে জনমনে উদ্বেগের কারণ এই যে, গত বিজয় দিবসের পূর্ববর্তী মাত্র তিন সপ্তাহ কাল সময়ে অন্ততঃ ২৭ জন নিখোঁজ হয়েছে। লাশ পাওয়া গেছে কয়েকজনের। সরকারী হিসেবে গত দু’বছর এগারো মাসে ১২ হাজার খুনের কথা জানা গেছে। এই হিসেবের বাইরে গুম ও খুনের সংখ্যা কয়েক হাজার বলে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে। সচেতন মহল এ অবস্থাকে জননিরাপত্তাহীন বলে বর্ণনা করছেন। এ অবস্থা হঠাৎ করে একদিনে সৃষ্টি হয়নি। বিভিন্ন মহল এবং মিডিয়া বহু পূর্ব থেকেই এ ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষীয় তরফ থেকে এসব তথ্য অস্বীকার করে বার বার বলা হয়েছে যে, অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ব্যতীত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোন প্রকার অবনতি ঘটেনি বলে উল্লেখ করে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা থেমে থাকেনি। এ বিষয়টা উচ্চতর আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। উচ্চতর আদালতের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে, কাউকে গ্রেফতার কিম্বা আটক করতে গেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন গ্রেফতারের আগে নিজেদের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করবেন। গ্রেফতারের এক ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারকৃতের অবস্থান সম্পর্কে তার পরিবারের সদস্যদেরকে অবহিত করতে হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক শ্রেণীর কর্তা বা কর্মী তা অনুসরণ করছেনা বলে অভিযোগ প্রকাশিত হচ্ছে। এতে করে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে এবং সরকার ও প্রশাসন সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অতীতে বিএনপি সরকারের আমলে অপারেশন ক্লিন হার্টের মধ্য দিয়ে সূচিত বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলো কঠোরভাবে সমালোচিত হয়েছিল। সমালোচকদের শীর্ষে ছিলেন তদানীন্তন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী সরকার গঠনের পর জনগণের প্রত্যাশা ছিল যে এসব ভয়াবহ কাণ্ড-কারখানা থেকে সমাজ ও জনগণ রেহাই পাবে। কিন্তু তা হচ্ছে না। বরং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডগুলো সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে মানবাধিকার কমিশনগুলোর বিশ্লেষণে প্রতিভাত হচ্ছে।
এর দ্বারা পোস্ট করা
suMon azaD (সুমন আজাদ)
সৌদি আরবে কোরান এর বিধানের অপপ্রয়োগে!!!
আট বাংলাদেশীর শীরচ্ছেদ
একই অপরাধে ব্রিটিশ, কানাডা, আমেরিকা, ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ’র আইন মানা হয় না
কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই অপপ্রয়োগ কেনো?
::
কিছুদিন আগে সৌদি আরবে ৮ বাংলাদেশীর শিরচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু তা কি শরীয়ত সম্মত ছিল? তাদের কি অপরাধ ছিল? ৮ জন মিলে একজন কে হত্যা এবং ডাকাতি? যাই হোক কুরআন শরীফে খুনীর শাস্তির ফয়সালা হলো কতল। কিন্তু ৪ জন চাক্ষুষ সাক্ষী অবশ্যই লাগবে। যদি চার জন সাক্ষী না পাওয়া যায় তাহলে ওই অপরাধীকে শাস্তি দেয়া যাবেনা। কিন্তু সৌদি কর্তৃপক্ষ বা মামলার বাদী এ বিষয়ে চারজন সাক্ষী পেশ করতে পারে নি। আসামীদের স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে। কিন্তু আসামীরা কি স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছায় দিয়েছে তার কোন প্রমান নেই। তাদেরকে বল প্রয়োগ করে ও স্বীকারোক্তি আদায় করা হতে পারে যা ইসলামে গ্রহনযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য এই সৌদি ওহাবী সরকার তারা অপরাধীদের বিষয়ে হিন্দু রাষ্ট্র ভারতের সাথে চুক্তি করেছে যে অপরাধীদেরকে সৌদি আরব থেকে পাঠিয়ে দেয়া হবে এবং শাস্তি প্রদান করবে ভারত। কিন্তু একই বিষয়ে দুই নীতি কেন? তাও মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সহানুভূতি পাওয়ার কথা ছিলো বেশী। তা না করে এই ইয়েমেনী দস্যু এবং ইহুদী বংশধর ওহাবী সৌদি সরকার বাংলাদেশের প্রতি বৈষম্য করেছে। ইসলামী বিধানের দোহাই দিয়ে ৮ জনকে কতল করেছে। কিন্তু তারা প্রকৃত পক্ষে ইসলামী বিধানের ভুল এবং অপপ্রয়োগ করেছে। এরা অআসলে ইসলাম-মুসলিম কারো বন্ধু নয়। এরা মুসলমান নামধারী মুনাফিক যারাকিনা ইহুদী, কাফির-মুশরিকদের দালালী করে মুসলমানদের ক্ষতি করতে চায়। এরা ইসলাম ইসলাম করলে ও হারাম রাজতন্ত্র চালায়। এ মুসলিম নামধারী মুনাফিকদের ব্যাপারে সাবধান!!!!!!!!!!!!
নভেম্বর ১৭ ও ২৩, ২০০০:
রিয়াদে ২ টি বম্ব ব্লাস্ট এ বেশ কিছু মানুষ হতাহত হয়।
ফেব্রুয়ারী ৪, ২০০১:
কানাডিয়ান উইলিয়াম সিম্পসন ও ব্রিটিশ আলেকজান্ডার মাইকেল ও আরও কয়েকজন প্রকাশ্যে টিভিতে স্বিকার করে যে তারা সেই সব বম্ব ব্লাস্ট ঘাটয়েছে।
এপ্রিল ২০০২:
জানা যায় যে ২০০১ সালে তাদের মৃত্যু দন্ড ঘোষনা করা হয়েছে।
নভেম্বার ২০০২:
উইলিয়াম সিম্পসন এর বাবা আশা প্রকাশ করেন তার ছেলে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। প্যারিসে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সৌদী পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রিন্স সৌদ আল-ফয়সাল বলেন, কানাডার মত বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের এক নাগরিকের মুক্তির জন্য তার রাষ্ট্র যথাসাধ্য চেষ্টা করছে ও করে যাবে।
মে, ২০০৩:
উইলিয়াম সিম্পসন এর সৌদী ল'ইয়ার শেখ সালাহ্ সি.বি.সি নিউজ কে জানান তারা সৌদী রাজ পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং সংকেত পেয়েছেন যে তাদের এ আবেদন গৃহিত হবে এবং উইলিয়াম সিম্পসন খুব শিঘ্রই মুক্তি পাবে।
আগস্ট ২০০৩:
সৌদী বাদশাহ'র ক্ষমার প্রেক্ষিতে উইলিয়াম সিম্পসন সহ আরও ৫ ব্রিটিশ নাগরিক মুক্তি পায়।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করা হয় ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লস্ উইলিয়াম সিম্পসন সহ আরও ৫ ব্রিটিশ নাগরিক মুক্তির ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
ঈষদ সংক্ষিপ্ত। সূত্র : http://www.cbc.ca/news/background/sampson/
আট বাংলাদেশীর শীরচ্ছেদ
একই অপরাধে ব্রিটিশ, কানাডা, আমেরিকা, ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ’র আইন মানা হয় না
কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই অপপ্রয়োগ কেনো?
::
কিছুদিন আগে সৌদি আরবে ৮ বাংলাদেশীর শিরচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু তা কি শরীয়ত সম্মত ছিল? তাদের কি অপরাধ ছিল? ৮ জন মিলে একজন কে হত্যা এবং ডাকাতি? যাই হোক কুরআন শরীফে খুনীর শাস্তির ফয়সালা হলো কতল। কিন্তু ৪ জন চাক্ষুষ সাক্ষী অবশ্যই লাগবে। যদি চার জন সাক্ষী না পাওয়া যায় তাহলে ওই অপরাধীকে শাস্তি দেয়া যাবেনা। কিন্তু সৌদি কর্তৃপক্ষ বা মামলার বাদী এ বিষয়ে চারজন সাক্ষী পেশ করতে পারে নি। আসামীদের স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে। কিন্তু আসামীরা কি স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছায় দিয়েছে তার কোন প্রমান নেই। তাদেরকে বল প্রয়োগ করে ও স্বীকারোক্তি আদায় করা হতে পারে যা ইসলামে গ্রহনযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য এই সৌদি ওহাবী সরকার তারা অপরাধীদের বিষয়ে হিন্দু রাষ্ট্র ভারতের সাথে চুক্তি করেছে যে অপরাধীদেরকে সৌদি আরব থেকে পাঠিয়ে দেয়া হবে এবং শাস্তি প্রদান করবে ভারত। কিন্তু একই বিষয়ে দুই নীতি কেন? তাও মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সহানুভূতি পাওয়ার কথা ছিলো বেশী। তা না করে এই ইয়েমেনী দস্যু এবং ইহুদী বংশধর ওহাবী সৌদি সরকার বাংলাদেশের প্রতি বৈষম্য করেছে। ইসলামী বিধানের দোহাই দিয়ে ৮ জনকে কতল করেছে। কিন্তু তারা প্রকৃত পক্ষে ইসলামী বিধানের ভুল এবং অপপ্রয়োগ করেছে। এরা অআসলে ইসলাম-মুসলিম কারো বন্ধু নয়। এরা মুসলমান নামধারী মুনাফিক যারাকিনা ইহুদী, কাফির-মুশরিকদের দালালী করে মুসলমানদের ক্ষতি করতে চায়। এরা ইসলাম ইসলাম করলে ও হারাম রাজতন্ত্র চালায়। এ মুসলিম নামধারী মুনাফিকদের ব্যাপারে সাবধান!!!!!!!!!!!!
নভেম্বর ১৭ ও ২৩, ২০০০:
রিয়াদে ২ টি বম্ব ব্লাস্ট এ বেশ কিছু মানুষ হতাহত হয়।
ফেব্রুয়ারী ৪, ২০০১:
কানাডিয়ান উইলিয়াম সিম্পসন ও ব্রিটিশ আলেকজান্ডার মাইকেল ও আরও কয়েকজন প্রকাশ্যে টিভিতে স্বিকার করে যে তারা সেই সব বম্ব ব্লাস্ট ঘাটয়েছে।
এপ্রিল ২০০২:
জানা যায় যে ২০০১ সালে তাদের মৃত্যু দন্ড ঘোষনা করা হয়েছে।
নভেম্বার ২০০২:
উইলিয়াম সিম্পসন এর বাবা আশা প্রকাশ করেন তার ছেলে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। প্যারিসে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সৌদী পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রিন্স সৌদ আল-ফয়সাল বলেন, কানাডার মত বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের এক নাগরিকের মুক্তির জন্য তার রাষ্ট্র যথাসাধ্য চেষ্টা করছে ও করে যাবে।
মে, ২০০৩:
উইলিয়াম সিম্পসন এর সৌদী ল'ইয়ার শেখ সালাহ্ সি.বি.সি নিউজ কে জানান তারা সৌদী রাজ পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং সংকেত পেয়েছেন যে তাদের এ আবেদন গৃহিত হবে এবং উইলিয়াম সিম্পসন খুব শিঘ্রই মুক্তি পাবে।
আগস্ট ২০০৩:
সৌদী বাদশাহ'র ক্ষমার প্রেক্ষিতে উইলিয়াম সিম্পসন সহ আরও ৫ ব্রিটিশ নাগরিক মুক্তি পায়।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করা হয় ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লস্ উইলিয়াম সিম্পসন সহ আরও ৫ ব্রিটিশ নাগরিক মুক্তির ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
ঈষদ সংক্ষিপ্ত। সূত্র : http://www.cbc.ca/news/background/sampson/
লেবেলসমূহ:
সাম্প্রতিক বিষয়
এর দ্বারা পোস্ট করা
suMon azaD (সুমন আজাদ)
‘পরম্পরা’ কবিতার শুর“তে একটা নিয়মের পরম্পরা লক্ষ্য করা যায়। মাত্রার
নিয়ম মেনে প্রতি চরণে অন্তমিল; আমাদের কবিতায় ছন্দের অর্থাৎ মাত্রার
প্রাচুর্য এবং বাধ্যবাদকতা আর তার মান্যকাল কিংবা আজ্ঞাবহকালের কথা
মনে করিয়ে দেয়। যখন অন্তমিলকে-ই অনেক কবিতা-প্রেমি মতান্তরে কবিতা-
শাসকরা মনে করতেন আসল জিনিস অর্থাৎ ‘প্রকৃত কবিতা’।
ফেরার ই”েছ প্রবল রোমান্টিক আবহের প্রতীকি বিন্যাস। বিষয়ে, ভাষার
উপলব্ধিতে, বর্ণনায়- এই সময়ের কবিতা।
ফে.ই- কবিতার প্রথম পংক্তি যদি কবির নিজের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে ভাব ঠিক
আছে শুধু যতি চিহ্নের সমস্যা ছাড়া। কেননা, কবি নিজেকে এড্রেস করলে
কমা ব্যবহার করবেন কেন? আর যদি সার্বজনিন করতে চান অর্থাৎ কথক নিজে
হয়ে পাঠককে এড্রেস করা তাহলে ঝামেলা হয়ে গেল। তৃতীয় স্ট্রোঞ্জায় নিজের
উপ¯ি’তি কবিতাটিতে ভাবকে এলোমেলো করে দিয়ে কবিতা হওয়ার পক্ষেই অš
—রায় হয়ে দাঁড়াল! সুরীন্দ্রনাথ ছন্দ সম্পর্কে সেই যে উক্তি করেছিলেন,
সাধারণত, মাত্রা ঠিক রাখতে এবং ছন্দে থাকতে একটা অভ্যাস গড়ে তুললেই
লাভবান হওয়া যায়। আর সেই অভ্যাসটা হ”েছ শব্দ বিন্যাসের বিজোড়ে
বিজোড় গাঁথ, জোরে গাঁথ জোড়। এর ফলে গদ্যরীতির কবিতায় অক্ষবৃত্তের
ছন্দত মুক্তক ছন্দ সাবলিল হয়ে উঠল।
কবিতা পড়ছি আর লক্ষ্য করছি, “এই রীতি ভর করেছে মামুনের কবিতায়।
কিš‘ তিনি হয়ত ঠিক করেছেন ব্যাকরণ জেনে লিখবেন না। যার ফলে ই”ছায় কি
অনি”ছায় ছন্দ্র পতন হ”েছ। অবশ্য একে মাত্রা পতন-ই বলা ভাল। যদিও ব্যাকরণ
মেনে লিখা কবির একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। আর আমি মনে করি না প্রকৃত
কবিতার জন্য এটা কোন ফ্যাক্টর।
“যেটা শিকার”- শারীরিক আবহের কবিতা। মাত্র দুটি উদ্বৃতিতে
কবিতাটি রচিত হয়েছে। প্রথমটির কথক কবি নিজে। দ্বিতীয়টি নিজেই
চিহ্নিত করে দিয়েছেন। ফ্রয়েডের লিবিডো যখন প্রভাব বিস্তার করছে তখন
কবি অন্য ঠোঁটের গীতিকাব্য আকঁলেন জ্বলজ্যান্ত ভাষায়
“তারার ফসিলে কোনদিন
অমাবস্যা পেলে
ডেকে নিও রাতের গুহায়।
তবে এই কবিতাতেও আবার সেই কথক বিরম্বনা কথকের এলোমেলো বিস্ত
ারে কবি না পাঠক বিভ্রান্ত প্রশ্নসাপেক্ষ।
তার অনেকগুলো কবিতাতেই সঞ্চারী পড়ে মনে হয়েছে এগুলোই সব, আর
কিছর দরকার নেই। অনেক ক্ষেত্রে কবিতার ভেতরে প্রবেশের পূর্বের মনে হয়েছে
বাকীগুলো বোধহয় বিস্তার। তার সঞ্চারীগুলোর দু’বার আবেদন আমাকে
এমনটা ভাবতে বাধ্য করেছে।
স্যাটায়ার ধর্মী কবিতা হ”েছ গিয়ে দুগ্ধবতী সিরিজের শেষ কবিতা। এই ৩
নাম্বার কবিতাটিতে ব্যাঙ্গের স্বার্থকতা প্রকাশ পেয়েছে
“ প্রান্তরে দাহ দাহ আগুন শাসনে
গাঙ্গেয় অববাহিকা ভূগোলের হিসাব খাতায়
বিশ্বের তৃতীয় বধূ, দুগ্ধবতী হয়।”(দ্র“ত)
এখানে পিতার আদলে অভিভাবক দেশগুলোর চরিত্র চিত্রন তাদের দাদাগিরির
ছাপচিত্র। সুন্দরভাবে অংকিত হয়েছে। পোষ্ট কলোনিয়াল চিন্তা।
“আমরা..............কিনে যাই” স্যাটায়ারের মধ্যে নিজেদের অপ্রাপ্তি ও
ব্যর্থতার নিরঙ্কুশ প্রকাশ মনে করিয়ে দেয় পূর্ববর্তী প্রজন্মের একটি
শক্তিশালী বৈশিষ্টের কথা। আর অসঙ্কোচ আত্ম-উন্মোচন-ই ছিল নব্বই দশকের
কবিকূলের উলেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যের সাথে কাজী নাসির মামুনের
কবিতার স্বার্থকতা কোথায়? খুঁজলে সহজেই চোখে পড়ে, “সাহসী আত্ম
বিশেষন” প্রক্রিয়াটি। নাসির কবিতাকে “আমরা” শব্দটির ব্যবহার করে
তাকে দিয়েছেন সার্বজনীনতার আস্বাদ আর প্রতিনিধত্ব করেছেন শূণ্য
দশকের সকলের। নিজেদের উন্মোচন করেই ক্ষান্ত হননি, বিশেষণ করেছেন ব্যক্তির
সহজাত স্বার্থকতার। মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন, দাঁড় করিয়েছেন- মিরর
অফ মাইন্ড (মান্ড মিররের)। সেলফ জাজমেন্ট এর।
“আর এই মান্ড মিররের দেখা পাওয়া যায় কবির পরবর্তী কবিতা,
আত্মকামে আমার........... আমার” এ। কবিাতর প্রথম পংক্তি “আয়না লাবণ্য
ধরে আমার ছায়ার।”
ছন্দ পতন কিংবা মাত্রার হিসেবের গড়মিল রয়েছে এমন অভিযোগ
উপ¯’াপন করতে চাইলে সব কবিতার দিকে হাত না বাড়িয়ে একটা কবিতা
থেকেই দেখানো যাবে, যেমন- “বসন্তে মায়ের কথার ফুলঝুড়ি” কবিতাটি
অক্ষরবিত্ত ছন্দের। আর অক্ষরবিত্ত ছন্দে শব্দের প্রথম যুগ্ম ধ্বনি একমাত্রার মূল্য
পায়। আর সেই হিসেবে- একদিন/সলতে/ভাসতে/ছিঁড়ে যায়। মাত্রা কিংবা
ছন্দ প্রসঙ্গ আসত না যদি না কাজী নাসির মামুনের কবিতায় ঐ
প্রবণতাটা না থাকত। কথা হ”েছ নিয়ম না মানলে নাই, কিš‘ মেনে যদি ভুল
থাকে তা কি একজন কবির জন্য দুঃখজনক নয়? সেখানে শূণ্য দশকের
পতাকাবাহীদের মধ্যে তিনি একজন।
প্রাণি প্রার্থনা
লাটিম তাড়িত বালক
ঃ কিশোর বা কৈশোরিক।
সঞ্চিত সোলক
ঃ বুক বা যুবতী মেয়েরা।
গোপন অহম
ঃ মাস্টারবেশনে আগ্রহী করে তুলে এমন কিছু।
সময়সড়ক
ঃ সেশনজত
গতির বাইজি
ঃ সময়/বয়স
বোতল
ঃ যৌনাঙ্গ।
তরলবন্দিজিন
ঃ প্রজননের উপাদান
সচল স্পপেজ
ঃ শুয়ে থাকা।
ফেরারি গোলাপ ঃ গণিকা
শৃগাল চতুর
ঃ শেয়ালের কুমির শাবল ভক্ষণের কৌশল/এক জিনিস বারবার
দেখিয়ে ঠকানো।
হাইরোগিফিক্স ঃ
কুকুরী- প্রচলিত অর্থ খুঁজলে ভয়াবহ অর্থ দাঁড়ায়। কিছু লুপ্ত অর্থ
বুঝতে পারলে হৃদয়ে চিন করে উঠবে।
“কুকুরীর জন্য সংবেদনা”- এই একটি কবিতার আলোচনা লিখেই মনে হয় দিস্তার পর দিস্তা শেষ করা যাবে। এই প্রসঙ্গে বুঃ বসুর কথা মনে পড়ছে। তিনি ১৯৪০ সালে......................। এখন বদ্ধদেব বসু থাকলে বলা যে, দ্যাখেন
বস, বাউলা সাহিত্যে একজন কবি আবারো রোমান্টিক আবহে প্রেমের
কবিতা অত্যন্ত সাহসের সাথে প্রথম কাব্যগ্রন্তেই সন্নিবেশ করেছেন।
পারলে এই কবিতাটিকে “লখিন্দরের গান” থেকে বাদ দেন তো কিংবা সমগ্র
প্রেমবাহিত কবিার ইতিহাস থেকে বাদ দিয়ে দ্যাখেন তো। কেন জানি আজ
কবিতাটি নিয়ে গর্ব করতে ই”েছ হ্েচছ। (আবেগী উ”চারণ)
পতনে কালিন্দি নিশায় ঃ
১। অতিরিক্ত যাতচিহ্ন দৃশ্যে বেঘাত ঘটায়। অনেকের ফরমেটে স্বরবৃত্ত ছন্দের
অনেকটাই দুর্বল বিস্তার।
২। নারী দেহের বর্ণনায় আগ্রাসনের পুরনো আখ্যান রূপকের আশ্রয়ে
প্রতিপাদ্য হয়ে উঠে।
৩। উপনিবেশিক শাসব ব্যব¯’া ও উত্তর উপনিবেশিক চিন্তার সঞ্চার ঘটেছে
(১) অংশে। কিš‘ ঐ আাচর স্বরবৃত্তের আদলে থাকতে গিয়ে অন্তমিল আর অমিল
অনেকটা অগোছালো করে তুলেছি কবিতাটির অংশ বিশেষকে।
ডাহুক সয়েছি ক্ষয়....
(৮+৬) স্তবকের ১৮ মাত্রার প্রচলিত সনেটগু”ছ। কাজী নাসির মানুষের কবিতা
পড়ে মনে হয় পেটার্ন গত কোন বৈচিত্র্যের প্রতি তেমন একটা নিরীক্ষাপ্রবণ
নন তিনি। আর প্রচলিত ব্যাকরণীয় অনুসঙ্গ বিনিমার্নের প্রতি খুব একটা
ঝোঁক নেই। তবে নিয়মে থাকার একটা সাধারণ প্রবণতা ঠিকই আছে। তবে
এ-ও সত্য নিকটবর্তী দশকের দার্শনিক বি”িছন্নতা, প্রতিষ্ঠান মুখি
হওয়া না হওয়ার দোদুল্যমানতা, কবিতার সামাজিকরণ নিয়ে নিজেদের মধ্যে
তৈরী হওয়া কনট্রাডিকশন (১) বাংলাদেশেও ক্ষীণ ও ধীর পদ্ধতিতে এই রণকৌশল
গ্রহণ করেছেন প্রতিষ্ঠান বিরোধী নব্বইয়ের কবিগণ। এটা শুভ লক্ষণ ও সঠিক
কৌশল। কেননা, কবিতার আস্বাদ গ্রহণের অধিকার সকল পাঠকের। “যেহেতু
কবিতার আস্বাদ গ্রহণের অধিকার সকলের আছে বলে নব্বইয়ের অনেক কবিদের
বিশ্বাস তাই কবিতার ভাষাও বোধ সকলের গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা ছিল। কিš‘
তারা তা করেন নি। শিল্প অসম্মত মৌলিক কবিতাকে আপতঃদৃষ্টিতে দুর্বোধ্য
ও দুরূহ বলে মনে হত। কোনো মৌলিক কবিতা অন্তদৃষ্টি সম্পন্নতার কারণে
সাধারণের কাছে অদ্ভূত ও দুর্বোধ্য বলে মনে হতেই পারে।” আর তার পক্ষে
যুক্তি হিসেবে উপ¯’াপন করা হয়েছে র্যাঁেধা সুচীন্দ্রনাথদের কথা। কিš‘
তথাগত প্রাতিষ্ঠানিক কাগজের গতানুগতিক ধারার পাঠকরা র্যাঁধো
সুধীন্দ্র পড়েন না। আর কন্ট্রাডিকশনটা এখানেই। এক দিকে সকলের কাছে
পৌঁছার জন্য রণ কৌশলে পরিবর্তনে অজুহাত অন্যদিকে দুর্বোধতা। যার
ফলে বিভক্তি ও কাব্যিক বি”িছন্নতা ছিল নব্বইয়ের সাধারণ ব্যাপার।
বি”িছন্ন নিরীক্ষার ফলে ¯’ায়িত্ব পায়নি কোন আলাদা বৈশিষ্ট্যের কবিতা
ধারা। আর যে লোকজধারার ব্যবহার নব্বইয়ের কবিতায় নতুন এসেছে বলে মনে
করা হয়, তার জবাব পাওয়া যায় আল মাহমুদ, ওমর আলী, রফিক আজাদের কবিতার
দিকে তাকালে। সবচেয়ে বড় কথা রাজনৈতিক উদাসীনতার ফলে মৌলবাদের
প্রশ্রয় ও বেরে উঠার অন্তরায় হিসেবে কোন শক্তিশালী আদর্শিক বৈশিষ্ট
দাঁড় করতে না পারা। এটা মূলত ঘটেছে প্রতিষ্ঠানের দ্বার¯’ হয়ে একাই থানায়
সবাই মিলে খাবার গ্রহণের ফলে।
আর পূর্ববর্তী দশকের কিংবা সহযাত্রী অগ্রজনের প্রভাব ও ভাবের নিজস্ব স্বাতন্ত্রে জন্য। শূণ্য দশকের অনেককে অত্রিম করতে হয়েছে সংশয়ী সময়কাল। যারা একটু সময় নিয়ে বই প্রকাশ করেছেন আমার মনে হয় তারাই
ভালোবাসি দানবের মতো/অভ্রভেদী পাখি
প্রিমিটিভিজম এর উদাহরণ।
“নদী” কবিতাটি আশির দশকের প্রকরণ সবর্স কবিতার গন্ধমাখা।
কৈশোরিক ও যৌবনের স্মৃতি আক্রান্ত ভাবাবেগ ভরা। যা কবিতার চেয়ে
বিবৃতির সংমিশ্রণ, অন্যান্য কবিতার বৈশিষ্ট্যের সাথে ঠিক যায় না।
তেমনি যায় না স্বববৃত্ত ছন্দের অন্তমিলের প্রতি মনোযোগী কবিতাগুলো
(কুমুরের ফুল হয়ে আয় ইত্যাদি)।
কবিতার প্রতি একজন কবির প্রেম নিজের উরসের মত। অনেক ক্ষেত্রেই
স্মৃতিতাড়িত, মানবিক দুর্বলতা অতিক্রম করে কবিতা নির্বাচন সম্ভব হয়
না। ফলে শূণ্যের একজন উলেখযোগ্য থেকে গুর“ত্বর্পূ হয়ে উঠা কবিকেও
সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।
অন্তমিল ও সনেটের প্রতি ঝোক বেশী কাজী নাসির মামুনের। অথচ তা যদি মাত্রাগত কিংবা পংক্তিগত কিংবা স্তবকে বৈচিত্র থাকতো তাহলে মেনে নেয়া যেত। একমাত্র শব্দের গুপ্তাব¯’া ও বিষয়ের কেন্দ্রিকীকরণ উপর ভর দিয়ে ভাব-কবিতার তরীখানা কতদূরই বা নেয়া সম্ভব?
হুমায়ূন আজাদ কবিদের তিনটি ভাগে ভাগ করে ছিলেন আর তা হল...........
মামুন যতিচিহ্নের ব্যাপারে আগ্রহী। আর তার এই আগ্রহ বহুত নিয়ে
প্রকাশ পেয়েছে প্রচলিত সনেটরীতির ক্ষেত্রে।
তার সিরিজ কতিবাগুলোতে একটি ্রবণতা লক্ষ্য করা যায় তা হল সিরিজের
বিন্যাসে ডিসকনটিনিটি অর্থাৎ অধারাবাহিকতা। কনটিনিটি ভাঙ্গা
যদিও পোস্ট-মডার্ন মন মানসিকতার বৈশিষ্ট্য, তবে তা যদি হয় একই
কবিতার ক্ষেত্রে। কিš‘ এখানে কবি সিরিজে বিন্যাসে এমনটা করলেন কেন,
ভাববার বিষয়। এখানে কবিতার ডিসকনটিনিটি গ্রš’টা ধরা দি”েছ
বিপরীতার্থে। কবির ভিন্ন সময়ে লিখিত (সম্ভবত) এলামেলো চিন্তার
ধারাবাহিক প্রতি¯’াপন হিসেবে সিরিজের নির্মাণ অনেকটা আরোপিত
প্রস্তাবের নমুনা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
কাজী নাসির সম্পর্কে একটি অ¯’ায়ী এবং ভাব বিস্তারী মন্তব্য করা যায় এমন যে, “এই কবি নিয়ম ভাঙ্গার কোন নিয়ম নিয়ে কাব্য জগতে আসেন নি পক্ষান্তরে নিয়মের বাহিরে যাবারও যেতন একটা প্রয়াস চালান নি। শুধু মেধার পূরণ ঘটাতে চেয়েছে প্রথম বইটিতে।
শব্দ নির্মাণে আগ্রহী কবি আরো একটি দিকে এগিয়েছে ডিসকভার এর
নেশায় আর তা হল ইরোটিসিজম। যৌনতার ক্রিফটগ্রাফিক নির্মাণ, শূণ্য
দশকের উত্থানশীল কবিতার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের উলেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে
নিঃসন্দেহে আলোচিত হবে।
“লখিন্দরের গান” সিরিজের সনেটের প্যাটার্ন কবিতাটির বিষয়ব¯‘র আবহের
সাথে মিলানোর প্রয়াস মনে হয়েছে পোস্ট-কলনিয়াল কনসেপ্টে বিষয়কে ঐ
বিষয়ের প্রেক্ষিতে দেখা এবং সাবরটার্নকে গুর“ত্ব দেয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়।
কিš‘ পরবর্তীতে ডিসকনটিনিটি বিশেষত সিরিজহ বিস্তারে অন্য
ভাবনায় ফেলে দেয়। তাহলে কি প্যাটার্ন নির্মাণে আদো কবির তেন আবহ
তৈরীর ই”েছ কাজ করে নি শুধু আমার নিজস্ব ভাবনা।
লখিন্দরের গান পড়ে ভাবছিলাম বেহুলার কথা। যেন এমন আর কি, আজও বাড়ি ফেরা
হল া। এজন্য দুঃখ নেই। শুধু কথা থাকে বেড়ালটা আজো দরজার কাছে বসে
থাকবে। অর্থাৎ যন্ত্রিকতার বাহিরের অনূভব। যেন তারপরও তার কথা মনেপড়ে
টাইপ কিছু। অনেকটা মহিলাদের মেটার্নটি বু-কালীন সময়ের মত। মাতৃ
ত্বের নীল সময়ে অযাচিত দুঃখবোধে কেঁদে উঠে হৃদয়।
মিয়া বাড়ির বৈঠক খানায় যজ্ঞ বুড়ির গালগল্প পড়ে রঙধনুর সাত বড় হাতের
মুঠোয় পাওয়া মানে পাউয়ার এর আধিপত্যের কথা মনে পড়ল। আর মনে পড়ল
মিশেল ফুকোর পাউয়ার থিউরিটি। যা মানুষকে শাসন করে মানসিক শারীকি
ও রীতি প্রকৃতির মাধ্যমে।
নব্বইয়ের কবিরা ভেবেছিলেন, সুখ তাদের একান্ত বিষয় তা কখনোই
সামাজিক নয়। সমাজ সভ্যতার রাজনীত কিংবা বিশ্বের সাথে এর কোন
সংশিষ্টতা নেই। কিš‘ শূণ্য এখন পর্যন্ত মনে হ”েছ এই ভাবনাটির সাথে
একাত্ত নয়। কেননা বিষয়িক বৈচিত্রতা আত্ম-সমালোচনা তাও যদি পোস্ট
কলনিয়াল ভাবধারার আবর্তিত হয়।
নব্বইয়ের যে সকল কবিতা এখনও সমান সক্রিয় এবং প্রতিস্ঠিত নিজস্ব
স্বরে কবিতা চর্চা করে বলেছেন মূলত তাদের প্রেক্ষিতেই শূণ্যের ভিক্তিকরণ।
যারা অতি কিংবা এখনও নিজের স্বরটি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন নি সঙ্গত
কারণে তাদেরকে আলোচনায় না আনাটাই যুক্তিযুক্ত। কারণ সচরাচর প্রতিষ্ঠিত
নিজস্ব স্বরেই কবিতা অব্যাহত রাখেন কবিরা।
পিতার সৌধের নিজে ভূমিষ্ঠ কুকুর
নাম লিকে নিজেদের
তবে সুখ কোন মহিষের নাম?
ভরসার মাতৃত্বকোড়ে প্রলোভন অবশিষ্ট থাকে।
ত.স.কো.ম.না
রাজনৈতিক মহত্বের বলি, জাতির পিতা ও তার বলিদান, আমরা আজ জনে জনে
জানি। গজিয়ে উঠা পরগাছারা আজ বিরাট মহিরূহ সমান। নিজেদের নাম
এরা ইতিহাসে ই”েছ মত উঠা”েছ, মুছে দি”েছ।
দেশের আর্তসামাজিক প্রেক্ষাপট অতীত ইতিহাস, ইতিহাসের কলঙ্ক ও সেই
কলঙ্কের শেকড়সহ পুনর“ত্থান সবকিছু চমৎকার ভাবে উঠে এসেছে। “তবে
সুখ....... কবিতায়। উত্থানশীল কবিতার বৈশিষ্ট্য ধারণ করে ক্রিপ্টোগ্রাফি
রচনায় স্বাক্ষর রেখেছেন কাজী নাসির মামুন।
শূন্য দশকে এসে আবার হৃদয়তাড়িত অনুভূতিগুলো গভীর সিম্ফোনী নিয়ে
কবিদের লেখায় জেগে উঠছে। আর সঙ্গত কারণেই তা ক্রিপ্টোগ্রাফিকভাবে।
অনুভূতি ধরা দি”েছ অনেকটা মেনেলা সিনেমার সেই শেষ সংলাপের মত
“আমি এই জীবনে অনেক মেয়েদের সাথে মিশেছি। অনেককেই ভাল লেগেছে।
তারা আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আমাকে মনে রাখবে তো? আমি বলেছি রাখব।
শুধু ঐ মেয়েটাকে কখনোই ভুলব না যে আমাকে কোনদিন বলেনি আমাকে মনে
রেখ।”
ডাইমেনশনাল সময়ে মনও বহুগামী হয়। আবার অসংকুচে বিশেষণ করে।
সোসাল ফ্লিক্সিবিলিটি ও কিংবা উদার নৈতিকতার পরিপূর্ণ ছাপ কেবল
শূণ্যের সাহসী তারণ্যের রচনাকেই খোঁজা যেতে পারে।
রাজা গোপালের শাসনামল, বাইকামুলী দাসী, কংক দাশী, থিবিস, মহান্ত।
এলিয়ট যেমন ফ্রিভার্স এর পাশপাশি কবিতায় মুক্ত ছন্দের সাথে লিরিক এর
ব্যবহার করেছেন তেমনি কাজী নাসির মামুনের কবিতায়ও দেখা যায়।
নাসির মামুনের কবিতা শুর“ হয়েছে পরম্পরা দিয়ে। যা শুর“ টিএস এলিয়টের
দ্যা লাভ সং অব জে আলফ্রেট প্র“ফক কবিতাটির স্টাইল-এ। যদিও বাংলা
সাহিত্যের এলিয়টের প্রভাব এলিয়ট চর্চা নতুন কিছু নয়। রবী ঠাকুর থেকে
জীবনানন্দ সবাই কোন কোন ভাবে এলিয়ট দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।
বইয়ে শিরোনাম কবিতাটি মামুন লিখেছেন মিথলজিকেল এসপেক্ট নিয়ে।
সিরিজ কবিতাটির সূচনা সনেটের আঙ্গিকে দেখে মিথের বৈশিষ্ট্যের সাথে
আঙ্গিকে কবি কবিতাটি সামঞ্জস্য আনতে চেয়েছেন বলে মনে হয়। কিš‘ এর
অধারাবাহিকতা (ডিসকনটিনিয়াস) পাঠককে এলোমেলো ভাবনার সামনে
দাঁড় করিয়ে দেয়। সিরিজ কবিতা কিংবা দীর্ঘ কবিতা স্বভাবতই কবির
কাছে একটুস বেশী মনোযোগ দাবি করে।
সূর্যই নাটের গুর“
“লখিন্দর বেহুলা জাগাও, কুলনাশা মরা দেশ।”
ও পাখি ও বৃক্ষ,
ও আমার লাটিম ঘুরানো মাঠ
দেখাবো সাহস?
লখিন্দরের গান শেষ হয় এভাবে
মাছে বাতে স্বপ্নমোড়া গুপ্ত পুলসেরাত;
আমার দখল নেবে কে আছে এমন?
বাঙালির জাতিয়তাবোধের দৃপ্ত উ”চারণের মধ্য দিয়ে এর অবিনাশী স্রোতের
প্রতিকূলে দাঁড়াতে চেয়েছেন কাজী নাসির মামুন। লক্ষ্য করছি উত্তরে
উপনিবেশিক চেতনা জাগ্রত হ”েছ আমাদের মধ্যে। আর এই জাগ্রহত চেতনার
সারনীতি ক্রমশঃ লম্বা হ”েছ ধৃষ্ট লাঠিয়ালদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পা”েছ,
যা আমাদের পরিচয় করিয়ে দি”েছ নিজের সাথে নিজেকে।
সুমন চট্টোপাধ্যায়ের “জাতিস্মর” গানে সুন্দর একটা কলি আছে।
“.......... বেহুলারা কখনো বিধবা হয় না
এটা বাংলার রীতি।”
নিয়ম মেনে প্রতি চরণে অন্তমিল; আমাদের কবিতায় ছন্দের অর্থাৎ মাত্রার
প্রাচুর্য এবং বাধ্যবাদকতা আর তার মান্যকাল কিংবা আজ্ঞাবহকালের কথা
মনে করিয়ে দেয়। যখন অন্তমিলকে-ই অনেক কবিতা-প্রেমি মতান্তরে কবিতা-
শাসকরা মনে করতেন আসল জিনিস অর্থাৎ ‘প্রকৃত কবিতা’।
ফেরার ই”েছ প্রবল রোমান্টিক আবহের প্রতীকি বিন্যাস। বিষয়ে, ভাষার
উপলব্ধিতে, বর্ণনায়- এই সময়ের কবিতা।
ফে.ই- কবিতার প্রথম পংক্তি যদি কবির নিজের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে ভাব ঠিক
আছে শুধু যতি চিহ্নের সমস্যা ছাড়া। কেননা, কবি নিজেকে এড্রেস করলে
কমা ব্যবহার করবেন কেন? আর যদি সার্বজনিন করতে চান অর্থাৎ কথক নিজে
হয়ে পাঠককে এড্রেস করা তাহলে ঝামেলা হয়ে গেল। তৃতীয় স্ট্রোঞ্জায় নিজের
উপ¯ি’তি কবিতাটিতে ভাবকে এলোমেলো করে দিয়ে কবিতা হওয়ার পক্ষেই অš
—রায় হয়ে দাঁড়াল! সুরীন্দ্রনাথ ছন্দ সম্পর্কে সেই যে উক্তি করেছিলেন,
সাধারণত, মাত্রা ঠিক রাখতে এবং ছন্দে থাকতে একটা অভ্যাস গড়ে তুললেই
লাভবান হওয়া যায়। আর সেই অভ্যাসটা হ”েছ শব্দ বিন্যাসের বিজোড়ে
বিজোড় গাঁথ, জোরে গাঁথ জোড়। এর ফলে গদ্যরীতির কবিতায় অক্ষবৃত্তের
ছন্দত মুক্তক ছন্দ সাবলিল হয়ে উঠল।
কবিতা পড়ছি আর লক্ষ্য করছি, “এই রীতি ভর করেছে মামুনের কবিতায়।
কিš‘ তিনি হয়ত ঠিক করেছেন ব্যাকরণ জেনে লিখবেন না। যার ফলে ই”ছায় কি
অনি”ছায় ছন্দ্র পতন হ”েছ। অবশ্য একে মাত্রা পতন-ই বলা ভাল। যদিও ব্যাকরণ
মেনে লিখা কবির একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। আর আমি মনে করি না প্রকৃত
কবিতার জন্য এটা কোন ফ্যাক্টর।
“যেটা শিকার”- শারীরিক আবহের কবিতা। মাত্র দুটি উদ্বৃতিতে
কবিতাটি রচিত হয়েছে। প্রথমটির কথক কবি নিজে। দ্বিতীয়টি নিজেই
চিহ্নিত করে দিয়েছেন। ফ্রয়েডের লিবিডো যখন প্রভাব বিস্তার করছে তখন
কবি অন্য ঠোঁটের গীতিকাব্য আকঁলেন জ্বলজ্যান্ত ভাষায়
“তারার ফসিলে কোনদিন
অমাবস্যা পেলে
ডেকে নিও রাতের গুহায়।
তবে এই কবিতাতেও আবার সেই কথক বিরম্বনা কথকের এলোমেলো বিস্ত
ারে কবি না পাঠক বিভ্রান্ত প্রশ্নসাপেক্ষ।
তার অনেকগুলো কবিতাতেই সঞ্চারী পড়ে মনে হয়েছে এগুলোই সব, আর
কিছর দরকার নেই। অনেক ক্ষেত্রে কবিতার ভেতরে প্রবেশের পূর্বের মনে হয়েছে
বাকীগুলো বোধহয় বিস্তার। তার সঞ্চারীগুলোর দু’বার আবেদন আমাকে
এমনটা ভাবতে বাধ্য করেছে।
স্যাটায়ার ধর্মী কবিতা হ”েছ গিয়ে দুগ্ধবতী সিরিজের শেষ কবিতা। এই ৩
নাম্বার কবিতাটিতে ব্যাঙ্গের স্বার্থকতা প্রকাশ পেয়েছে
“ প্রান্তরে দাহ দাহ আগুন শাসনে
গাঙ্গেয় অববাহিকা ভূগোলের হিসাব খাতায়
বিশ্বের তৃতীয় বধূ, দুগ্ধবতী হয়।”(দ্র“ত)
এখানে পিতার আদলে অভিভাবক দেশগুলোর চরিত্র চিত্রন তাদের দাদাগিরির
ছাপচিত্র। সুন্দরভাবে অংকিত হয়েছে। পোষ্ট কলোনিয়াল চিন্তা।
“আমরা..............কিনে যাই” স্যাটায়ারের মধ্যে নিজেদের অপ্রাপ্তি ও
ব্যর্থতার নিরঙ্কুশ প্রকাশ মনে করিয়ে দেয় পূর্ববর্তী প্রজন্মের একটি
শক্তিশালী বৈশিষ্টের কথা। আর অসঙ্কোচ আত্ম-উন্মোচন-ই ছিল নব্বই দশকের
কবিকূলের উলেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যের সাথে কাজী নাসির মামুনের
কবিতার স্বার্থকতা কোথায়? খুঁজলে সহজেই চোখে পড়ে, “সাহসী আত্ম
বিশেষন” প্রক্রিয়াটি। নাসির কবিতাকে “আমরা” শব্দটির ব্যবহার করে
তাকে দিয়েছেন সার্বজনীনতার আস্বাদ আর প্রতিনিধত্ব করেছেন শূণ্য
দশকের সকলের। নিজেদের উন্মোচন করেই ক্ষান্ত হননি, বিশেষণ করেছেন ব্যক্তির
সহজাত স্বার্থকতার। মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন, দাঁড় করিয়েছেন- মিরর
অফ মাইন্ড (মান্ড মিররের)। সেলফ জাজমেন্ট এর।
“আর এই মান্ড মিররের দেখা পাওয়া যায় কবির পরবর্তী কবিতা,
আত্মকামে আমার........... আমার” এ। কবিাতর প্রথম পংক্তি “আয়না লাবণ্য
ধরে আমার ছায়ার।”
ছন্দ পতন কিংবা মাত্রার হিসেবের গড়মিল রয়েছে এমন অভিযোগ
উপ¯’াপন করতে চাইলে সব কবিতার দিকে হাত না বাড়িয়ে একটা কবিতা
থেকেই দেখানো যাবে, যেমন- “বসন্তে মায়ের কথার ফুলঝুড়ি” কবিতাটি
অক্ষরবিত্ত ছন্দের। আর অক্ষরবিত্ত ছন্দে শব্দের প্রথম যুগ্ম ধ্বনি একমাত্রার মূল্য
পায়। আর সেই হিসেবে- একদিন/সলতে/ভাসতে/ছিঁড়ে যায়। মাত্রা কিংবা
ছন্দ প্রসঙ্গ আসত না যদি না কাজী নাসির মামুনের কবিতায় ঐ
প্রবণতাটা না থাকত। কথা হ”েছ নিয়ম না মানলে নাই, কিš‘ মেনে যদি ভুল
থাকে তা কি একজন কবির জন্য দুঃখজনক নয়? সেখানে শূণ্য দশকের
পতাকাবাহীদের মধ্যে তিনি একজন।
প্রাণি প্রার্থনা
লাটিম তাড়িত বালক
ঃ কিশোর বা কৈশোরিক।
সঞ্চিত সোলক
ঃ বুক বা যুবতী মেয়েরা।
গোপন অহম
ঃ মাস্টারবেশনে আগ্রহী করে তুলে এমন কিছু।
সময়সড়ক
ঃ সেশনজত
গতির বাইজি
ঃ সময়/বয়স
বোতল
ঃ যৌনাঙ্গ।
তরলবন্দিজিন
ঃ প্রজননের উপাদান
সচল স্পপেজ
ঃ শুয়ে থাকা।
ফেরারি গোলাপ ঃ গণিকা
শৃগাল চতুর
ঃ শেয়ালের কুমির শাবল ভক্ষণের কৌশল/এক জিনিস বারবার
দেখিয়ে ঠকানো।
হাইরোগিফিক্স ঃ
কুকুরী- প্রচলিত অর্থ খুঁজলে ভয়াবহ অর্থ দাঁড়ায়। কিছু লুপ্ত অর্থ
বুঝতে পারলে হৃদয়ে চিন করে উঠবে।
“কুকুরীর জন্য সংবেদনা”- এই একটি কবিতার আলোচনা লিখেই মনে হয় দিস্তার পর দিস্তা শেষ করা যাবে। এই প্রসঙ্গে বুঃ বসুর কথা মনে পড়ছে। তিনি ১৯৪০ সালে......................। এখন বদ্ধদেব বসু থাকলে বলা যে, দ্যাখেন
বস, বাউলা সাহিত্যে একজন কবি আবারো রোমান্টিক আবহে প্রেমের
কবিতা অত্যন্ত সাহসের সাথে প্রথম কাব্যগ্রন্তেই সন্নিবেশ করেছেন।
পারলে এই কবিতাটিকে “লখিন্দরের গান” থেকে বাদ দেন তো কিংবা সমগ্র
প্রেমবাহিত কবিার ইতিহাস থেকে বাদ দিয়ে দ্যাখেন তো। কেন জানি আজ
কবিতাটি নিয়ে গর্ব করতে ই”েছ হ্েচছ। (আবেগী উ”চারণ)
পতনে কালিন্দি নিশায় ঃ
১। অতিরিক্ত যাতচিহ্ন দৃশ্যে বেঘাত ঘটায়। অনেকের ফরমেটে স্বরবৃত্ত ছন্দের
অনেকটাই দুর্বল বিস্তার।
২। নারী দেহের বর্ণনায় আগ্রাসনের পুরনো আখ্যান রূপকের আশ্রয়ে
প্রতিপাদ্য হয়ে উঠে।
৩। উপনিবেশিক শাসব ব্যব¯’া ও উত্তর উপনিবেশিক চিন্তার সঞ্চার ঘটেছে
(১) অংশে। কিš‘ ঐ আাচর স্বরবৃত্তের আদলে থাকতে গিয়ে অন্তমিল আর অমিল
অনেকটা অগোছালো করে তুলেছি কবিতাটির অংশ বিশেষকে।
ডাহুক সয়েছি ক্ষয়....
(৮+৬) স্তবকের ১৮ মাত্রার প্রচলিত সনেটগু”ছ। কাজী নাসির মানুষের কবিতা
পড়ে মনে হয় পেটার্ন গত কোন বৈচিত্র্যের প্রতি তেমন একটা নিরীক্ষাপ্রবণ
নন তিনি। আর প্রচলিত ব্যাকরণীয় অনুসঙ্গ বিনিমার্নের প্রতি খুব একটা
ঝোঁক নেই। তবে নিয়মে থাকার একটা সাধারণ প্রবণতা ঠিকই আছে। তবে
এ-ও সত্য নিকটবর্তী দশকের দার্শনিক বি”িছন্নতা, প্রতিষ্ঠান মুখি
হওয়া না হওয়ার দোদুল্যমানতা, কবিতার সামাজিকরণ নিয়ে নিজেদের মধ্যে
তৈরী হওয়া কনট্রাডিকশন (১) বাংলাদেশেও ক্ষীণ ও ধীর পদ্ধতিতে এই রণকৌশল
গ্রহণ করেছেন প্রতিষ্ঠান বিরোধী নব্বইয়ের কবিগণ। এটা শুভ লক্ষণ ও সঠিক
কৌশল। কেননা, কবিতার আস্বাদ গ্রহণের অধিকার সকল পাঠকের। “যেহেতু
কবিতার আস্বাদ গ্রহণের অধিকার সকলের আছে বলে নব্বইয়ের অনেক কবিদের
বিশ্বাস তাই কবিতার ভাষাও বোধ সকলের গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা ছিল। কিš‘
তারা তা করেন নি। শিল্প অসম্মত মৌলিক কবিতাকে আপতঃদৃষ্টিতে দুর্বোধ্য
ও দুরূহ বলে মনে হত। কোনো মৌলিক কবিতা অন্তদৃষ্টি সম্পন্নতার কারণে
সাধারণের কাছে অদ্ভূত ও দুর্বোধ্য বলে মনে হতেই পারে।” আর তার পক্ষে
যুক্তি হিসেবে উপ¯’াপন করা হয়েছে র্যাঁেধা সুচীন্দ্রনাথদের কথা। কিš‘
তথাগত প্রাতিষ্ঠানিক কাগজের গতানুগতিক ধারার পাঠকরা র্যাঁধো
সুধীন্দ্র পড়েন না। আর কন্ট্রাডিকশনটা এখানেই। এক দিকে সকলের কাছে
পৌঁছার জন্য রণ কৌশলে পরিবর্তনে অজুহাত অন্যদিকে দুর্বোধতা। যার
ফলে বিভক্তি ও কাব্যিক বি”িছন্নতা ছিল নব্বইয়ের সাধারণ ব্যাপার।
বি”িছন্ন নিরীক্ষার ফলে ¯’ায়িত্ব পায়নি কোন আলাদা বৈশিষ্ট্যের কবিতা
ধারা। আর যে লোকজধারার ব্যবহার নব্বইয়ের কবিতায় নতুন এসেছে বলে মনে
করা হয়, তার জবাব পাওয়া যায় আল মাহমুদ, ওমর আলী, রফিক আজাদের কবিতার
দিকে তাকালে। সবচেয়ে বড় কথা রাজনৈতিক উদাসীনতার ফলে মৌলবাদের
প্রশ্রয় ও বেরে উঠার অন্তরায় হিসেবে কোন শক্তিশালী আদর্শিক বৈশিষ্ট
দাঁড় করতে না পারা। এটা মূলত ঘটেছে প্রতিষ্ঠানের দ্বার¯’ হয়ে একাই থানায়
সবাই মিলে খাবার গ্রহণের ফলে।
আর পূর্ববর্তী দশকের কিংবা সহযাত্রী অগ্রজনের প্রভাব ও ভাবের নিজস্ব স্বাতন্ত্রে জন্য। শূণ্য দশকের অনেককে অত্রিম করতে হয়েছে সংশয়ী সময়কাল। যারা একটু সময় নিয়ে বই প্রকাশ করেছেন আমার মনে হয় তারাই
ভালোবাসি দানবের মতো/অভ্রভেদী পাখি
প্রিমিটিভিজম এর উদাহরণ।
“নদী” কবিতাটি আশির দশকের প্রকরণ সবর্স কবিতার গন্ধমাখা।
কৈশোরিক ও যৌবনের স্মৃতি আক্রান্ত ভাবাবেগ ভরা। যা কবিতার চেয়ে
বিবৃতির সংমিশ্রণ, অন্যান্য কবিতার বৈশিষ্ট্যের সাথে ঠিক যায় না।
তেমনি যায় না স্বববৃত্ত ছন্দের অন্তমিলের প্রতি মনোযোগী কবিতাগুলো
(কুমুরের ফুল হয়ে আয় ইত্যাদি)।
কবিতার প্রতি একজন কবির প্রেম নিজের উরসের মত। অনেক ক্ষেত্রেই
স্মৃতিতাড়িত, মানবিক দুর্বলতা অতিক্রম করে কবিতা নির্বাচন সম্ভব হয়
না। ফলে শূণ্যের একজন উলেখযোগ্য থেকে গুর“ত্বর্পূ হয়ে উঠা কবিকেও
সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।
অন্তমিল ও সনেটের প্রতি ঝোক বেশী কাজী নাসির মামুনের। অথচ তা যদি মাত্রাগত কিংবা পংক্তিগত কিংবা স্তবকে বৈচিত্র থাকতো তাহলে মেনে নেয়া যেত। একমাত্র শব্দের গুপ্তাব¯’া ও বিষয়ের কেন্দ্রিকীকরণ উপর ভর দিয়ে ভাব-কবিতার তরীখানা কতদূরই বা নেয়া সম্ভব?
হুমায়ূন আজাদ কবিদের তিনটি ভাগে ভাগ করে ছিলেন আর তা হল...........
মামুন যতিচিহ্নের ব্যাপারে আগ্রহী। আর তার এই আগ্রহ বহুত নিয়ে
প্রকাশ পেয়েছে প্রচলিত সনেটরীতির ক্ষেত্রে।
তার সিরিজ কতিবাগুলোতে একটি ্রবণতা লক্ষ্য করা যায় তা হল সিরিজের
বিন্যাসে ডিসকনটিনিটি অর্থাৎ অধারাবাহিকতা। কনটিনিটি ভাঙ্গা
যদিও পোস্ট-মডার্ন মন মানসিকতার বৈশিষ্ট্য, তবে তা যদি হয় একই
কবিতার ক্ষেত্রে। কিš‘ এখানে কবি সিরিজে বিন্যাসে এমনটা করলেন কেন,
ভাববার বিষয়। এখানে কবিতার ডিসকনটিনিটি গ্রš’টা ধরা দি”েছ
বিপরীতার্থে। কবির ভিন্ন সময়ে লিখিত (সম্ভবত) এলামেলো চিন্তার
ধারাবাহিক প্রতি¯’াপন হিসেবে সিরিজের নির্মাণ অনেকটা আরোপিত
প্রস্তাবের নমুনা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
কাজী নাসির সম্পর্কে একটি অ¯’ায়ী এবং ভাব বিস্তারী মন্তব্য করা যায় এমন যে, “এই কবি নিয়ম ভাঙ্গার কোন নিয়ম নিয়ে কাব্য জগতে আসেন নি পক্ষান্তরে নিয়মের বাহিরে যাবারও যেতন একটা প্রয়াস চালান নি। শুধু মেধার পূরণ ঘটাতে চেয়েছে প্রথম বইটিতে।
শব্দ নির্মাণে আগ্রহী কবি আরো একটি দিকে এগিয়েছে ডিসকভার এর
নেশায় আর তা হল ইরোটিসিজম। যৌনতার ক্রিফটগ্রাফিক নির্মাণ, শূণ্য
দশকের উত্থানশীল কবিতার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের উলেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে
নিঃসন্দেহে আলোচিত হবে।
“লখিন্দরের গান” সিরিজের সনেটের প্যাটার্ন কবিতাটির বিষয়ব¯‘র আবহের
সাথে মিলানোর প্রয়াস মনে হয়েছে পোস্ট-কলনিয়াল কনসেপ্টে বিষয়কে ঐ
বিষয়ের প্রেক্ষিতে দেখা এবং সাবরটার্নকে গুর“ত্ব দেয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়।
কিš‘ পরবর্তীতে ডিসকনটিনিটি বিশেষত সিরিজহ বিস্তারে অন্য
ভাবনায় ফেলে দেয়। তাহলে কি প্যাটার্ন নির্মাণে আদো কবির তেন আবহ
তৈরীর ই”েছ কাজ করে নি শুধু আমার নিজস্ব ভাবনা।
লখিন্দরের গান পড়ে ভাবছিলাম বেহুলার কথা। যেন এমন আর কি, আজও বাড়ি ফেরা
হল া। এজন্য দুঃখ নেই। শুধু কথা থাকে বেড়ালটা আজো দরজার কাছে বসে
থাকবে। অর্থাৎ যন্ত্রিকতার বাহিরের অনূভব। যেন তারপরও তার কথা মনেপড়ে
টাইপ কিছু। অনেকটা মহিলাদের মেটার্নটি বু-কালীন সময়ের মত। মাতৃ
ত্বের নীল সময়ে অযাচিত দুঃখবোধে কেঁদে উঠে হৃদয়।
মিয়া বাড়ির বৈঠক খানায় যজ্ঞ বুড়ির গালগল্প পড়ে রঙধনুর সাত বড় হাতের
মুঠোয় পাওয়া মানে পাউয়ার এর আধিপত্যের কথা মনে পড়ল। আর মনে পড়ল
মিশেল ফুকোর পাউয়ার থিউরিটি। যা মানুষকে শাসন করে মানসিক শারীকি
ও রীতি প্রকৃতির মাধ্যমে।
নব্বইয়ের কবিরা ভেবেছিলেন, সুখ তাদের একান্ত বিষয় তা কখনোই
সামাজিক নয়। সমাজ সভ্যতার রাজনীত কিংবা বিশ্বের সাথে এর কোন
সংশিষ্টতা নেই। কিš‘ শূণ্য এখন পর্যন্ত মনে হ”েছ এই ভাবনাটির সাথে
একাত্ত নয়। কেননা বিষয়িক বৈচিত্রতা আত্ম-সমালোচনা তাও যদি পোস্ট
কলনিয়াল ভাবধারার আবর্তিত হয়।
নব্বইয়ের যে সকল কবিতা এখনও সমান সক্রিয় এবং প্রতিস্ঠিত নিজস্ব
স্বরে কবিতা চর্চা করে বলেছেন মূলত তাদের প্রেক্ষিতেই শূণ্যের ভিক্তিকরণ।
যারা অতি কিংবা এখনও নিজের স্বরটি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন নি সঙ্গত
কারণে তাদেরকে আলোচনায় না আনাটাই যুক্তিযুক্ত। কারণ সচরাচর প্রতিষ্ঠিত
নিজস্ব স্বরেই কবিতা অব্যাহত রাখেন কবিরা।
পিতার সৌধের নিজে ভূমিষ্ঠ কুকুর
নাম লিকে নিজেদের
তবে সুখ কোন মহিষের নাম?
ভরসার মাতৃত্বকোড়ে প্রলোভন অবশিষ্ট থাকে।
ত.স.কো.ম.না
রাজনৈতিক মহত্বের বলি, জাতির পিতা ও তার বলিদান, আমরা আজ জনে জনে
জানি। গজিয়ে উঠা পরগাছারা আজ বিরাট মহিরূহ সমান। নিজেদের নাম
এরা ইতিহাসে ই”েছ মত উঠা”েছ, মুছে দি”েছ।
দেশের আর্তসামাজিক প্রেক্ষাপট অতীত ইতিহাস, ইতিহাসের কলঙ্ক ও সেই
কলঙ্কের শেকড়সহ পুনর“ত্থান সবকিছু চমৎকার ভাবে উঠে এসেছে। “তবে
সুখ....... কবিতায়। উত্থানশীল কবিতার বৈশিষ্ট্য ধারণ করে ক্রিপ্টোগ্রাফি
রচনায় স্বাক্ষর রেখেছেন কাজী নাসির মামুন।
শূন্য দশকে এসে আবার হৃদয়তাড়িত অনুভূতিগুলো গভীর সিম্ফোনী নিয়ে
কবিদের লেখায় জেগে উঠছে। আর সঙ্গত কারণেই তা ক্রিপ্টোগ্রাফিকভাবে।
অনুভূতি ধরা দি”েছ অনেকটা মেনেলা সিনেমার সেই শেষ সংলাপের মত
“আমি এই জীবনে অনেক মেয়েদের সাথে মিশেছি। অনেককেই ভাল লেগেছে।
তারা আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আমাকে মনে রাখবে তো? আমি বলেছি রাখব।
শুধু ঐ মেয়েটাকে কখনোই ভুলব না যে আমাকে কোনদিন বলেনি আমাকে মনে
রেখ।”
ডাইমেনশনাল সময়ে মনও বহুগামী হয়। আবার অসংকুচে বিশেষণ করে।
সোসাল ফ্লিক্সিবিলিটি ও কিংবা উদার নৈতিকতার পরিপূর্ণ ছাপ কেবল
শূণ্যের সাহসী তারণ্যের রচনাকেই খোঁজা যেতে পারে।
রাজা গোপালের শাসনামল, বাইকামুলী দাসী, কংক দাশী, থিবিস, মহান্ত।
এলিয়ট যেমন ফ্রিভার্স এর পাশপাশি কবিতায় মুক্ত ছন্দের সাথে লিরিক এর
ব্যবহার করেছেন তেমনি কাজী নাসির মামুনের কবিতায়ও দেখা যায়।
নাসির মামুনের কবিতা শুর“ হয়েছে পরম্পরা দিয়ে। যা শুর“ টিএস এলিয়টের
দ্যা লাভ সং অব জে আলফ্রেট প্র“ফক কবিতাটির স্টাইল-এ। যদিও বাংলা
সাহিত্যের এলিয়টের প্রভাব এলিয়ট চর্চা নতুন কিছু নয়। রবী ঠাকুর থেকে
জীবনানন্দ সবাই কোন কোন ভাবে এলিয়ট দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।
বইয়ে শিরোনাম কবিতাটি মামুন লিখেছেন মিথলজিকেল এসপেক্ট নিয়ে।
সিরিজ কবিতাটির সূচনা সনেটের আঙ্গিকে দেখে মিথের বৈশিষ্ট্যের সাথে
আঙ্গিকে কবি কবিতাটি সামঞ্জস্য আনতে চেয়েছেন বলে মনে হয়। কিš‘ এর
অধারাবাহিকতা (ডিসকনটিনিয়াস) পাঠককে এলোমেলো ভাবনার সামনে
দাঁড় করিয়ে দেয়। সিরিজ কবিতা কিংবা দীর্ঘ কবিতা স্বভাবতই কবির
কাছে একটুস বেশী মনোযোগ দাবি করে।
সূর্যই নাটের গুর“
“লখিন্দর বেহুলা জাগাও, কুলনাশা মরা দেশ।”
ও পাখি ও বৃক্ষ,
ও আমার লাটিম ঘুরানো মাঠ
দেখাবো সাহস?
লখিন্দরের গান শেষ হয় এভাবে
মাছে বাতে স্বপ্নমোড়া গুপ্ত পুলসেরাত;
আমার দখল নেবে কে আছে এমন?
বাঙালির জাতিয়তাবোধের দৃপ্ত উ”চারণের মধ্য দিয়ে এর অবিনাশী স্রোতের
প্রতিকূলে দাঁড়াতে চেয়েছেন কাজী নাসির মামুন। লক্ষ্য করছি উত্তরে
উপনিবেশিক চেতনা জাগ্রত হ”েছ আমাদের মধ্যে। আর এই জাগ্রহত চেতনার
সারনীতি ক্রমশঃ লম্বা হ”েছ ধৃষ্ট লাঠিয়ালদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পা”েছ,
যা আমাদের পরিচয় করিয়ে দি”েছ নিজের সাথে নিজেকে।
সুমন চট্টোপাধ্যায়ের “জাতিস্মর” গানে সুন্দর একটা কলি আছে।
“.......... বেহুলারা কখনো বিধবা হয় না
এটা বাংলার রীতি।”
লেবেলসমূহ:
আলোচনা-সমালোচনা
এর দ্বারা পোস্ট করা
suMon azaD (সুমন আজাদ)
বন্ধুসভায় প্রকাশিত বন্ধুদের লেখা কবিতা নিয়ে বের হয়েছে কবিতার বই পা ভাঙা চড়ুই। বইটি প্রকাশ করেছে সময় প্রকাশন। সাইদুজ্জামান রওশন ও মুহম্মদ আইয়ুব সরকার সম্পাদিত এ বইটির মূল্য ১০০ টাকা। বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় সময়ের স্টলে।
বইটিতে যাঁদের কবিতা স্থান পেয়েছে তাঁরা হলেন— সুমন আজাদ, অপূর্ব অনির্বাণ, নূরুল ইসলাম বাবুল, মালিহা জেরিন, জাহাঙ্গীর জয়েস, কবির য়াহমদ, গৌরী গোস্বামী, রিফাত আরা, তাসলিমা রহমান, শুভব্রতা ইয়াসমিন, সজল ছত্রী, সৌরভ সোহাগ, সন্ত কবীর, আসমা বীথি, মো. কামরুজ্জামান বাবু, সৌম্য সরকার, সুমন নূর, ফরিদা খানম, পাভেল রিয়াজ, লিপি আক্তার, সেলিনা শিউলী, শরীফ বাচ্চু, আতিয়া রহমান কণিকা, মুহাম্মদ আইয়ূব সরকার, রাজেশ্বরী প্রিয়রঞ্জিনী, কাজী দিলরুবা আক্তার লীনা, আবু বোরহান, মির্জা মু. ইমতিয়াজ শহীদ, রুহুল রুহিন, এস এম আরমান, ঊর্মি খান, সারওয়ার-উল-ইসলাম, আকমল হোসেন, সুকান্ত গুপ্ত, আফসানা কিশোয়ার, শান্তনু হাসান, হাদিকাতুন নুজুম, হাসিবা তানজিন, অঞ্জন আচার্য, হাসান মাহমুদ, আলাউদ্দিন খোকন, রেজোয়ার ফেরদৌস, মো. আব্দুল্লাহ আল নূহু, সাইফুদ্দিন রবিন, এহসান জুয়েল, শাহ্নাজ সুলতানা রিংকী, তাহমিনা তানিয়া, আবু সাঈদ, মো. এ অনুচ্চ, মৃণ্ময় মারুফ, আশরাফ চঞ্চল, সুবীর কাশ্মীর পেরেরা, শৌনক দত্ত তনু, চৌধুরী ফেরদৌস, গৌরব জি পাথাং, তায়েব মিল্লাত, জি এম হুমায়ূন আজম, সৈয়দ কামাল জামান, আমির হামজা, শাহেদ কায়েস, আফরোজা আক্তার হ্যাপি, খায়রুল বাশার, গাজী শাহিদুজ্জামান, ফ্লোরা আহমেদ, সোহাগ সাওয়াস্থ, আব্দুর রউফ রনি, আখতারী ইসলাম, সুমন আজাদ, ফরিদা ইয়াছমিন, সৈয়দ রুবাইয়া, ফারাহ্ দিবা আহমেদ, ফরিদা খানম, তাসনুভা অরিন, সুফিয়া জমির ডেইজি, পথিক চাঁদ, সুব্রত সানি, এন ডি মিথুন, সবুজ, মৌমিতা সিংহ, সবুজ বড়ুয়া, খোদেজা মাহবুব আরা, কাজী রাকিবুল ইসলাম, এ্যামি মারমা, মিজান মোহাম্মদ, দেলোয়ার হোসাইন, আতাউর রহমান, সোহেল আল মামুন, মুমা হাসান গুরু, সরকার মীনা, তৌহিদুল আলম, প্রতুল শীল, নাবিলা ইসলাম, তামান্না কবির, আল মাহফুজ, চৌধুরী সবুজ, সুকান্ত বিশ্বাস, নাসিমুল আহসান, তানিয়া বখ্শ, ফারহানা নরিন, আরমান আরজু, জেমস আনজুস, আশিক দাশ, মু. তরিকুল ইসলাম, সন্জয় দে, হাসান মোস্তফা, মারুফ শিহান, শাহিদা খাতুন, শহীদুল ইসলাম, তৌহিদুল আলম, মারুফ ওয়েসিস, হাসান মোস্তফা, সালেহীন শিপ্রা, পৃথ্বিশ চক্রবর্তী, কথাকলি দাস, কোহিনুর রুমা, ইফতেখার আজাদ, হূমায়ুন আজম, নুসরাত জাহান, পারভীন আক্তার, জুয়েল দেব, সাদিয়া আশরাফ, শহীদুর রহমান, মো. মুফিজুর রহমান, হাসনাইন হীরা, শাকিল মাহ্মুদ, রুবেল শঙ্কর, মুস্তাইন সুজাত, জান্নাতুল ফেরদৌস, ইজাজ আহেমদ, রেহানা রিমি, মোহাম্মদ নাহিদ রহমান, রিয়াজ ভূঁইয়া, জুলফিকার শাহাদাত্, বায়েজিদ ভূঁইয়া, তানজিম আফরোজ, এস খান, রাহাত রাস্তি, সজল খান, মঞ্জুর মঈন, আবেদা সুলতানা, মনিরুন নাহার, রিক্তিমা অনু, বিপ্রতীপ অপু, শাহ্ কুতুজ্জামান, সাহেরা খাতুন শেলী, কাব্য আহমেদ, অসিত, অর্থী, রাশেদ শাওন, মো. রেজাউর রহমান ও জীবন শাহ্।
আবু সাঈদ
যোগাযোগ: ০১৭২-৩২০৯৪৪৮
লিংক
বইটিতে যাঁদের কবিতা স্থান পেয়েছে তাঁরা হলেন— সুমন আজাদ, অপূর্ব অনির্বাণ, নূরুল ইসলাম বাবুল, মালিহা জেরিন, জাহাঙ্গীর জয়েস, কবির য়াহমদ, গৌরী গোস্বামী, রিফাত আরা, তাসলিমা রহমান, শুভব্রতা ইয়াসমিন, সজল ছত্রী, সৌরভ সোহাগ, সন্ত কবীর, আসমা বীথি, মো. কামরুজ্জামান বাবু, সৌম্য সরকার, সুমন নূর, ফরিদা খানম, পাভেল রিয়াজ, লিপি আক্তার, সেলিনা শিউলী, শরীফ বাচ্চু, আতিয়া রহমান কণিকা, মুহাম্মদ আইয়ূব সরকার, রাজেশ্বরী প্রিয়রঞ্জিনী, কাজী দিলরুবা আক্তার লীনা, আবু বোরহান, মির্জা মু. ইমতিয়াজ শহীদ, রুহুল রুহিন, এস এম আরমান, ঊর্মি খান, সারওয়ার-উল-ইসলাম, আকমল হোসেন, সুকান্ত গুপ্ত, আফসানা কিশোয়ার, শান্তনু হাসান, হাদিকাতুন নুজুম, হাসিবা তানজিন, অঞ্জন আচার্য, হাসান মাহমুদ, আলাউদ্দিন খোকন, রেজোয়ার ফেরদৌস, মো. আব্দুল্লাহ আল নূহু, সাইফুদ্দিন রবিন, এহসান জুয়েল, শাহ্নাজ সুলতানা রিংকী, তাহমিনা তানিয়া, আবু সাঈদ, মো. এ অনুচ্চ, মৃণ্ময় মারুফ, আশরাফ চঞ্চল, সুবীর কাশ্মীর পেরেরা, শৌনক দত্ত তনু, চৌধুরী ফেরদৌস, গৌরব জি পাথাং, তায়েব মিল্লাত, জি এম হুমায়ূন আজম, সৈয়দ কামাল জামান, আমির হামজা, শাহেদ কায়েস, আফরোজা আক্তার হ্যাপি, খায়রুল বাশার, গাজী শাহিদুজ্জামান, ফ্লোরা আহমেদ, সোহাগ সাওয়াস্থ, আব্দুর রউফ রনি, আখতারী ইসলাম, সুমন আজাদ, ফরিদা ইয়াছমিন, সৈয়দ রুবাইয়া, ফারাহ্ দিবা আহমেদ, ফরিদা খানম, তাসনুভা অরিন, সুফিয়া জমির ডেইজি, পথিক চাঁদ, সুব্রত সানি, এন ডি মিথুন, সবুজ, মৌমিতা সিংহ, সবুজ বড়ুয়া, খোদেজা মাহবুব আরা, কাজী রাকিবুল ইসলাম, এ্যামি মারমা, মিজান মোহাম্মদ, দেলোয়ার হোসাইন, আতাউর রহমান, সোহেল আল মামুন, মুমা হাসান গুরু, সরকার মীনা, তৌহিদুল আলম, প্রতুল শীল, নাবিলা ইসলাম, তামান্না কবির, আল মাহফুজ, চৌধুরী সবুজ, সুকান্ত বিশ্বাস, নাসিমুল আহসান, তানিয়া বখ্শ, ফারহানা নরিন, আরমান আরজু, জেমস আনজুস, আশিক দাশ, মু. তরিকুল ইসলাম, সন্জয় দে, হাসান মোস্তফা, মারুফ শিহান, শাহিদা খাতুন, শহীদুল ইসলাম, তৌহিদুল আলম, মারুফ ওয়েসিস, হাসান মোস্তফা, সালেহীন শিপ্রা, পৃথ্বিশ চক্রবর্তী, কথাকলি দাস, কোহিনুর রুমা, ইফতেখার আজাদ, হূমায়ুন আজম, নুসরাত জাহান, পারভীন আক্তার, জুয়েল দেব, সাদিয়া আশরাফ, শহীদুর রহমান, মো. মুফিজুর রহমান, হাসনাইন হীরা, শাকিল মাহ্মুদ, রুবেল শঙ্কর, মুস্তাইন সুজাত, জান্নাতুল ফেরদৌস, ইজাজ আহেমদ, রেহানা রিমি, মোহাম্মদ নাহিদ রহমান, রিয়াজ ভূঁইয়া, জুলফিকার শাহাদাত্, বায়েজিদ ভূঁইয়া, তানজিম আফরোজ, এস খান, রাহাত রাস্তি, সজল খান, মঞ্জুর মঈন, আবেদা সুলতানা, মনিরুন নাহার, রিক্তিমা অনু, বিপ্রতীপ অপু, শাহ্ কুতুজ্জামান, সাহেরা খাতুন শেলী, কাব্য আহমেদ, অসিত, অর্থী, রাশেদ শাওন, মো. রেজাউর রহমান ও জীবন শাহ্।
আবু সাঈদ
যোগাযোগ: ০১৭২-৩২০৯৪৪৮
লিংক
লেবেলসমূহ:
প্রকাশনা
এর দ্বারা পোস্ট করা
suMon azaD (সুমন আজাদ)
আজ ১৫ ই নভেম্বর,আন্তর্জাতিক লেখক বন্দি দিবস।১৯৮০ সালে এর গোড়া পত্তন হয় এবং একটি মেনুফেস্টো ঘোষণা করে যার মূল কথা ছিল পৃথিবীর সকল দেশের নির্যাতিত লেখক,কবি,সাহিত্যিক,মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের উপর সকল ধরনের রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় নির্যাতন যেন বন্ধ করা হয়। আর এই মেনুফেস্টোকে বাস্তবে রুপদান করার জন্য আন্তর্জাতিক পেন ক্লাব ( পোষ্ট সেকেন্ডারী এডুকেশনাল নেট ওয়ার্ক ) সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।পেন ক্লাবের ১৯২১ সালে লন্ডনে জন্ম হয় এবং পৃথিবীর সকল অত্যাচারিত লেখক,কবি,সাহিত্যিক,সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাংবাদিকদের পক্ষে এক বলিষ্ট আন্তর্জাতিক কলম সংঘ।কিন্তু এতো বলিষ্ট সংগঠন হয়ে কাজ করার পরেও দুনিয়ার দেশে দেশে কবি,সাহিত্যিক,সাংবাদিক মানবাধিকার কর্মীরা ধর্মীয় ও রাষ্টীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা খুন হওয়া, জেলে যাওয়া,গুপ্ত হত্যা ও নির্যাতিত হওয়া কোনো কিছুরই যেন কমতি নাই।
নীচে একটি ইন্টারন্যাশনাল পেন রাইটারস প্রিজন কমিটির এ বছরের জানুয়ারী থেকে জুন`০৯ এর চিত্র দেওয়া হলোঃ-
১) ২৮ জনের মৃত্যু ও গুপ্ত হত্যা—————-
২) ১৩৪ জনের জেল-বন্দি———–
৩) ২০৯ জনের কেস কোটে রায়ের জন্য অপেক্ষারত——–
৪) ১৩১ জন সারাক্ষন মৃত্যু হুমকী মাথায় বয়ে বেড়াচ্ছে——— এর মধ্যে যেমন,
রাশিয়ার একজন বিখ্যাত সাংবাদিক আনা পলিৎকোভস্কায়া ( ১৯৫৮-২০০৬) । তিনি রাশিয়া ও চেচনিয়ার যুদ্ধ বিরোধী ও মানবাধিকার কর্মী ছিলেন। তাকে গত ২০০৬ সালে গুপ্ত হত্যা করা হয়। লুইদিয়া কাচাও মেক্সিকোর,লি জিয়ানহং,চায়নার,চেঞ্জেরাই হোব,জিম্বাবুয়ের,বাংলাদেশের তসলিমা নাসরিন, সুমন আজাদ, সুহেল আহমেদ ও শাহারিয়ার সাকু নাম করা সাংবাদিক,লেখক,কবি যারা কি-না ২৪ ঘন্টা মৃত্যু হুমকী নিয়ে দিনানিপাত করছে।
(পত্রিকা প্রতিবেদন)
নীচে একটি ইন্টারন্যাশনাল পেন রাইটারস প্রিজন কমিটির এ বছরের জানুয়ারী থেকে জুন`০৯ এর চিত্র দেওয়া হলোঃ-
১) ২৮ জনের মৃত্যু ও গুপ্ত হত্যা—————-
২) ১৩৪ জনের জেল-বন্দি———–
৩) ২০৯ জনের কেস কোটে রায়ের জন্য অপেক্ষারত——–
৪) ১৩১ জন সারাক্ষন মৃত্যু হুমকী মাথায় বয়ে বেড়াচ্ছে——— এর মধ্যে যেমন,
রাশিয়ার একজন বিখ্যাত সাংবাদিক আনা পলিৎকোভস্কায়া ( ১৯৫৮-২০০৬) । তিনি রাশিয়া ও চেচনিয়ার যুদ্ধ বিরোধী ও মানবাধিকার কর্মী ছিলেন। তাকে গত ২০০৬ সালে গুপ্ত হত্যা করা হয়। লুইদিয়া কাচাও মেক্সিকোর,লি জিয়ানহং,চায়নার,চেঞ্জেরাই হোব,জিম্বাবুয়ের,বাংলাদেশের তসলিমা নাসরিন, সুমন আজাদ, সুহেল আহমেদ ও শাহারিয়ার সাকু নাম করা সাংবাদিক,লেখক,কবি যারা কি-না ২৪ ঘন্টা মৃত্যু হুমকী নিয়ে দিনানিপাত করছে।
(পত্রিকা প্রতিবেদন)
লেবেলসমূহ:
মানবাধিকার
,
সাম্প্রতিক বিষয়
এর দ্বারা পোস্ট করা
suMon azaD (সুমন আজাদ)
বাঙালি সমাজ ও ইউরোপীয়ান সমাজ-সংস্কৃতির মধ্যে তফাৎ অনেক। একটা পরিবেশে বেড়ে ওঠার পর আরেকটা নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াটা সহজ নয়। ফলে একজন বাঙালির নি:সঙ্গ প্রবাস জীবন খুবই কষ্টের। জার্মানির এক বছরের জীবনে বহু বাঙালির সঙ্গে দেখা হয়েছে। পরিচয় ঘটেছে অনেকের সঙ্গে। কিন্তু সম্পর্কের দৃঢ়তা বা গভীরতা খুব কম জনের সাথেই হয়েছে। আবার বাঙালি সমাজে বেড়ে ওঠা মানুষ আমরা। আমাদের মধ্যে হিংসা, জেলাসি, পরনিন্দা এসব দ্রুত ডালপালা ছড়ায়। রাজনৈতিক বিশ্বাস-অবিশ্বাস আর পছন্দ-অপছন্দের ওপর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আবার এসব কর্মকান্ডের ওপর পারস্পরিক সম্পর্কে চিড় ধরে। বাঙালিরা সচরাচর কর্মের ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণকর দিক নিয়ে কারও মূল্যায়ণ করেন না। কে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত? সেটার ওপরই নির্ভর করে অনেকে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন।
বাস্তব জীবনে এটার সত্যতা অনুবাধন করলাম এই প্রবাসে এসে। ব্যতিক্রম যে নেই তা বলতে পারি না। এক্ষেত্রে জীবন্ত উদাহরণ দিতে পারি আবদুল্লাহ আল-হারুণের। যিনি তিন দশক যাবত জার্মানে বসবাস করছেন। তার মত মানুষদেরকে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়। কী দুর্ভাগ্য আমাদের! অথচ যিনি বাংলাদেশকে অনেক কিছু দিতে পারতেন। যা থেকে বাঙালি সমাজ বঞ্চিত হলো। তিনি যদি বাংলাদেশে থাকতেন? হয়ত আজ জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন কিংবা হুমায়ূন আহমেদকে ছাড়িয়ে যেতেন! কিংবা খ্যাতিমান প্রয়াত নাট্যকার আবদুল্লাহ আল-মামুনের খ্যাতিকেও ছাপিয়ে যেতে পারতেন তার কর্মগুণে। আবদুল্লাহ আল-হারুণ অবশ্য তারই অনুজ সহোদর। আবার কেউ যদি রাষ্ট্রীয় বাহিনী কিংবা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী অংশের অপছন্দের হন। অথবা যিনি ডান পক্ষেও নেই আবার বামপক্ষেরও নন। বাঙালি হিসেবে তার মত অভাগা বোধহয় এজগতে আর কেউ নেই। বাংলাদেশের মত সমাজে রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থাকলে টিকে থাকা খুবই কঠিন। সম্প্রতি বার্লিনে আমাকে এই সত্যটা আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের এক সুহৃদ।
যাহোক, আজকের লেখার প্রসঙ্গ এটা নয়। লেখক আবদুল্লাহ আল-হারুণ প্রবাস জীবনে আমার একজন বড় বন্ধু, অভিভাবক। তার সাথে আমার বয়সের দিক ধরলে বলতে হবে পিতা-পুত্রের মত সম্পর্ক। তার মাধ্যমেই কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগরের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে আমার। তিনি অনলাইন সংবাদপত্র নতুন দেশ এর প্রকাশক এবং তার স্ত্রী সেরিন ফেরদৌস সম্পাদক। উভয়ই পেশাদার সাংবাদিক। বাংলাদেশে থাকতে কারও সঙ্গেই আমার সরাসরি যোগাযোগ হয়নি কোনদিন। কিন্তু উভয়ের রিপোর্টই আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করতো। তাদের রিপোর্টের সঙ্গে ছিল আমার এক ধরণের গভীর সম্পর্ক। নতুন দেশে প্রকাশিত আবদুল্লাহ আল হারুণের একটি লেখা সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করি। এটা করতে গিয়ে শওগাত ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটে ই-মেইল যোগাযোগের মাধ্যমে। খুব বেশিদিনের কথা নয় এটি। মার্চের ১০ কিংবা ১২ তারিখে (২০১০) প্রথম যোগাযোগ সাগর ভাইয়ের সঙ্গে। নতুন দেশ পত্রিকার প্রথম বর্ষ সংখ্যা ৩৮, ২১ এপ্রিল, ২০১০ সংখ্যায় একটি লেখা ছাপা হয় জনৈক আবুর রহিম মজুমদারের নামে। শিরোনাম ছিল বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন।
ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন সংক্রান্ত যেকোন ধরণের রিপোর্ট বা লেখার প্রতি আমার আগ্রহ একটু বেশি। তাই লেখাটি মনোযোগ আকর্ষণ করে আমার। কিন্তু প্রথম প্যারা পড়ার পরই লেখার সঙ্গে একটা আত্মিক সম্পর্ক মনে হতে লাগলো। এবং লেখাটি পুরো একবার পড়ার পরই বুঝতে পারি এটা আমার লেখা। হুবহু আমার এই লেখাটিই ভিন্ন শিরোনামে ছাপা হয় বাংলাদেশের প্রাচীন সংবাদপত্র দৈনিক সংবাদে। সেই আমার লেখাটি ছাপানো হয় নতুন দেশে। ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত আমার লেখাটির শিরোনাম ছিল ”সাহসী সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যা দিবস এবং বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন”। দ্রুত একটা ই-মেইল পাঠালাম সাগর ভাইকে। তিনি স্বস্তিমূলক একটা উত্তর দিলেন তড়িৎ বেগে। তারপরেই দেখা গেলো লেখাটি ডিলিট করে দেয়া হয়েছে। আমি যদি কারও লেখা হুবহু নকল করে নিজের নামে কোথাও পাঠাই। তবে কোন সম্পাদক-বার্তা সম্পাদক বা প্রকাশকের পক্ষেই তা আঁচ করা সম্ভব নয়। নকল বা চুরির বিষয়টি তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষপে নিশ্চিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। যেটা বাস্তবে করে দেখালেন প্রিয় শওগাত ভাই ও সেরিন আপা। পেশাদারি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এটা একটা নজির। ধন্যবাদ নতুন দেশ কর্তৃপক্ষকে। নতুন দেশ পরিবারের সাথে একটা গভীর আত্মিক সম্পর্ক অনুভব করি আমি। আশা করি এই সম্পর্কের ধারা বহমান রইবে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল ও প্রিয় পাঠকদের কাছে বাংলাদেশের প্রেসফ্রিডমের একটা চিত্র তুলে ধরতে চাই। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে মাত্র। তখন আমি কলেজে পড়ি। শিক্ষানবিশ রিপোর্টার হিসেবে দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে কাজ করি দৈনিক বাংলায়। তখনই দৈনিক বাংলা কার্যালয়ে পরিচয় দু:সাহসী দেশপেমিক সাংবাদিক শ্রদ্ধেয় শামছুর রহমান কেবলের সঙ্গে। ১৬ জুলাই তাঁর হত্যাবার্ষিকী। ২০০০ সালের এই দিনে দুর্বৃত্তরা তাঁকে হত্যা করে বুলেটের আঘাতে। তখন তিনি দৈনিক জনকণ্ঠে কাজ করেন যশোর থেকে। প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন করার লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এরপর দৈনিক বাংলা ছেড়ে যোগ দিই দৈনিক সংবাদে। তখন পরিচয় হয় সাংবাদিক মানিক সাহার সঙ্গে। খুলনা থেকে তিনি সাংবাদিকতা করতেন। তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভয়াবহ সন্ত্রাস, তান্ডব দেশবাসিকে ভাবিয়ে তুলতো। এই অপশক্তি আমাকে বারবার হত্যার হুমকি দেয়। মানিক সাহা বলতেন, ”আকাশ বেশি রিস্ক নিও না। সাবধানে থেকো। ওরা (শিবির) খুব ভয়ংকর।” এই অকুতোভয় জনদরদী সাংবাদিক আর নেই আমাদের মাঝে। বোমার আঘাতে এই দেশপ্রেদিকের মাথার খুলি উড়িয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তচক্র। আজও জ্বল জ্বল করে ভেসে ওঠে মানিক সাহার সেই রক্তাক্ত ছবিটা। তার মাথার মগজ সেদিন উড়ে গিয়েছিল বোমার আঘাতে। রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল তার দেহটা। রাস্তার ওপরে নিথর হয়ে পড়ে থাকা দেহ যেন গোটা বাংলাদেশ। পর্শিয়া ও নাতাশাতো আর কোনদিন বাবা ডাকতে পারবে না। মানিক সাহার দুই কন্যা। নন্দা বউদির চোখের জল মুছে গেছে। কিন্তু হৃদয়ের যে ক্ষরণ তা কী কোনদিন বন্ধ হবে?
মুক্ত গণমাধ্যমতো পরের কথা সাংবাদিকদের জীবনেরই কোন নিশ্চয়তা নেই। সন্ত্রাস, রাজনীতি ও সমাজনীতির সব তথ্যের জীবন্ত ভান্ডার ছিলেন কেবল ভাই। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের জীবনে দিন যায়, মাস যায়, বছর ঘুরে নতুন বছর আসে। কিন্তু সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের বিচার হয় না। দেশে ”সেক্যুলার ও গণতান্ত্রিক” নামধারী একটা নির্বাচিত সরকার আছে। এটা আবার মহাজোট সরকার নামে বেশি পরিচিত। কিন্তু সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন বন্ধ হয়নি। বন্ধ করা যায়নি বিনা বিচারে মানুষ হত্যা। মাত্র ক’দিন আগে চলে গেলো ফরিদপুরের সাংবাদিক গৌতম দাসের হত্যা দিবস। আদালতে আত্মসমর্পণকারি একজন অভিযুক্ত খুনি (গৌতম হত্যার) কী করে পালিয়ে যায়? এটা আমাদের জানা নেই। তবে দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার আছে বলে মনে হয় না। থাকলে অন্তত সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন বন্ধ হতো। বিচার পেতো নির্যাতিত ও নিহত সাংবাদিক পরিবারগুলো।
গণতন্ত্র ছাড়া গণমাধ্যম স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না। মানবাধিকারও থাকে না। অসাম্য আর অন্যায্যের পৃথিবীতে সাংবাদিকতা দিন দিন ঝঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ও অশান্ত দুনিয়ায় সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন নতুন কোন বিষয় নয়। তাইতো বিশ্বময় প্রেসের স্বাধীনতা তথা প্রেস ফ্রিডম বা মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য আওয়াজ তীব্র হচ্ছে ক্রমশ:। এই আওয়াজ গণমাধ্যমের গন্ডি পেরিয়ে নাগরিক সমাজের বৃহৎ অংশকেও টানতে সক্ষম হয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র অসহায়। গণমাধ্যম ও গণতন্ত্র একে অপরের পরিপুরক। বিশ্বে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় সাংবাদিকতার ঝুঁকিটা চরমে পৌঁছেছে। আর বাংলাদেশেতো প্রায় প্রতিনিয়ত সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম রাষ্ট্রযন্ত্রের খবরদারি, নিপীড়নের মধ্যেই আছে।
জনগণের তথ্য জানার অধিকারকে রক্ষা করা গণমাধ্যমের প্রধান কাজ। গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের পথকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। অধিকারহারা শোষিত বঞ্চিত অসহায় মানুষদের পক্ষে গণমাধ্যম সর্বদা সোচ্চার। সমাজপতি, রাষ্ট্রনায়কদের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে গণমাধ্যম। সামাজিক ও পেশাগত দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে সাংবাদিকরা শত প্রতিকুলতার মধ্যেও কাজ করছেন। বাংলাদেশে তিন’টি জনপ্রিয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে। দুর্নীতি, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব ক্ষমতার অপব্যবহার কিংবা লুটপাট নিয়ে খবর বেরুলেই হলো। সাংবাদিক আর যায় কোথায়? সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের খবর হয়ে যাবে। একই কারণে সাংবাদিককে মন্ত্রি-এমপিদের অথবা রাজনৈতিক প্রভাবশালি মহলের খপ্পড়ে পড়তে হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের, প্রভাবশালিদের রোষানলে পড়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। হত্যা-নির্যাতন, হয়রাণি, গ্রেফতার, মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে বন্ধুর করে তুলেছে।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় সাংবাদিকদের জন্য জীবন খুব বিপদজনক। কারণ সাংবাদিকরা মানুষের কথা বলেন। মানুষের বিপদ হত্যা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করে গণমাধ্যম। রাজনৈতিক দূুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি-দু:শাসনের কথা তুলে ধরেন সাংবাদিকরা। ফলে সাংবাদিকদের উপরেই সবচেয়ে বেশি নিগ্রহের কষাঘাত এসে পড়ে। যেসমস্ত সাংবাদিক বা মিডিয়া মানুষের নিগ্রহের বিরুদ্ধে কথা বলতে চেষ্টা করেন। কিংবা যারা মানুষের দুর্দশার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেন তাদের উপরেই সবচেয়ে বেশি অত্যাচার নেমে আসে। এখানে আমরা উদাহরণ দিতে পারি একুশে টেলিভিশন (বন্ধ হবার আগেকার একুশে টিভির কথা বলা হচ্ছে) এবং সিএসবি নিউজ এর। একুশে টিভি এবং সিএসবি নিউজ এই দু’টি টিভি চ্যানেল ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন ছল-ছুতোয় সরকার এই বৃহৎ দু’টি টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও আদালতের রায়ের মাধ্যমে পরে একুশে টেলিভিশন পুনরায় চালু হয়েছে। বাংলাদেশে প্রেসফ্রিডম এর আরও খবর হলো আরেকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার টেলিযোগাযোগ আইন লংঘন’র অভিযোগে চ্যানেল ওয়ান এর সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় ২৭ এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যায়। (সূত্র: দৈনিক সংবাদ, ২৮ এপ্রিল, ২০১০)। একই দিনের সংবাদ’ এর দেশ পাতায় আরেকটি খবরের শিরোনাম হলো ”মানিকগঞ্জ সংবাদ প্রতিনিধিকে পৌর মেয়রের প্রাণনাশের হুমকি: থানায় জিডি”।
রিপোর্টের ভাষ্য মতে, দুর্নীতি বিষয়ক একটি অভিযোগের বিষয়ে মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা রমজান আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন সাংবাদিক মুহম্মদ আবুল কালাম বিশ্বাস। এসময় মেয়র সাংবাদিককে বলেন, ”তুই যদি আর পত্রিকায় আমার ও আমার পরিবার নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ করিস তবে তোকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। আগেও তুই আমার ভাইকে নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেছিস। আমি তখন আমার লোকজন নিয়ে তোকে খুঁজেছি, কিন্তু তোকে পাইনি। তাই তুই প্রাণে বেঁচে গেছিস। পত্রিকায় আর যদি কোন সংবাদ আমাকে নিয়ে লিখিস, তাহলে আমি তোর ও তোর পরিবারের ক্ষতি করবো।”
বাংলাদেশে প্রেসফ্রিডমের সর্বষে খবর হলো-দৈনিক আমার দেশ এর প্রকাশনা বন্ধ। ১ জুন, ২০১০ সরকার এক ঠুনকো অজুহাতে বিরোধী শিবিরের সমর্থক এই পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়। একই রাতে সরকার আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে (যদিও তিনি পেশাদার কোন সাংবাদিক নন, তবে বাংলাদেশে বহু অপেশাদার মানুষ মিডিয়া অঙ্গনের নামকরা ব্যক্তিত্ব) গ্রেফতার করে। বাংলাদেশের প্রাচীন ইংরেজী দৈনিক অবজারভার বন্ধ হয়ে গেছে জুন (২০১০) মাসেই। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস ও সাপ্তাহিক বিচিত্রা বন্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীরে নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারই ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শুরু করে। কিন্তু কথিত অনিয়মের অভিযোগে ১৯ নভেম্বর, ২০০০৯ সরকার যমুনা টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের শেষ নেই। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন যেন এক মামুলি ব্যাপার সেখানে। ময়মনসিংহের গফরগাঁয়ে দৈনিক সমকালের বিপ্লবের হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হয় জোট সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই। অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য সরকার দলীয় একজন সংসদ সদস্যের প্রত্যক্ষ মদদে এ ঘটনা ঘটেছে বলে সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ। সেই ঘটনার সর্বশেষ কী অবস্থা তা আমরা আজও জানি না। ঢাকার উত্তরায় কমিউনিটি বেইসড একটি পত্রিকার তরুণ রিপোর্টার নূরুল ইসলাম রানা খুন হয়েছেন। এটা ২০০৯ সালের ৩ জুলাইয়ের ঘঁনা। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলই ৫ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। নিহত সাংবাদিকরা হলেন ফতেহ ওসমানী, শফিকুল ইসলাম মিঠু, আবদুল হান্নান, আহসান বারী ও নূরুল রানা। আর জরুরি অবস্থায় এই লেখক (জাহাঙ্গীর আলম আকাশ) ছাড়াও দ্য ডেইলি স্টারের তাসনীম খলিল নির্যাতিত হন সেনাবাহিনী ও র্যাবের হাতে। জরুরি অবস্থা চলাকালে সিলেট, বান্দরবান, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংবাদিদের বিরুদ্ধে হয়রাণিমূলক মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর সামরিক শাসন দেশের মানুষের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে। বহু লড়াই-সংগ্রাম আর আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সামরিক শাসনের অবসান ঘটে। মুক্তি পায় গণতন্ত্রের পায়রা। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মানুষ ফিরে পায় স্বাধীনতার পুন:স্বাদ। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নির্বাচন। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয় জেনারেল জিয়াউর রহমানের গড়া দল বিএনপি। ক্ষমতায় এসেই বিএনপি সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। সরকারি মালিকানাধীন সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থা, গণমাধ্যম থেকে বিএনপির কাছে ‘অপছন্দনীয়’ সাংবাদিকরা গণছাঁটায়ের শিকার হন। কোন রকমের টার্মিনেশন বেনিফিট ছাড়াই বিএনপি সরকার ছাঁটাই করে দৈনিক বাংলার তৎকালীন সম্পাদক তোয়াব খান, তৎকালীন সাপ্তাহিক বিচিত্রার নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার কবিরসহ ১৪ জন সিনিয়র সাংবাদিককে।
২০০২ সালের নভেম্বর মাসের কথা। বিবিসি চ্যানেল ফোরের জন্য একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন বিদেশী সাংবাদিক জাইবা মালিক ও ব্রুনো সরেনটিনো। এই ’অপরাধে’ বিএনপি সরকার সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন করে। ব্রিটিশ ও ইতালীয় এই দুই সাংবাদিকসহ বাংলাদেশের শাহরিয়ার কবির, সালিম সামাদ ও পিসিলা রাজকে গ্রেফতার করা হয়। ময়মনসিংহের সিনেমা হলে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এর সাথে জড়িত করে গ্রেফতার করা হয় বাসস’র সাংবাদিক এনামুল হক চৌধুরী ও বিশিষ্ট কলামিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুনকে। আটকাবস্থায় বিএনপি সরকার সাংবাদিকদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছিল বলে অভিযোগ।
২০০৯ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিকের ঘটনা। দৈনিক সংবাদের ধামরাই প্রতিনিধি শামীম পারভেজ খানকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা। এলাকার নিরীহ লোকদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচতে সহায়তা করার করেন এই সাংবাদিক। এতেই ক্ষুব্ধ হয় স্বার্থান্বেষী মহল। হুমকির বিষয়ে থানায় জিডি হলেও সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হয়নি। একই মাসের শুরুর দিকে ঘটে আরেক ঘটনা ময়মনসিংহে। গফরগাঁওয়ে দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি শামীম আল আমিন বিপ্লবের ওপর আক্রমণ করা হয়। সংসদ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমদ এর ক্যাডার বাহিনী বিপ্লবের হাত-পা ভেঙ্গে দেয়। ২২ অক্টোবর (২০০৯) বাড়ির ভেতরে বর্বর নির্যাতনের শিকার হন সাংবাদিক এফ এম মাসুম। র্যাব সদস্যরা তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে। তিনি নিউ এজ পত্রিকার রিপোর্টার। বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিষয়ে রিপোর্ট করেছিলেন। যার কারণে তাকে নির্যাতিত হতে হয়।
২০০৬ সালের ১৬ এপ্রিল মাস। চট্রগ্রামে বাংলাদেশ ও অষ্ট্রেলিয়ার মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল। খেলার মাঠের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ চালায় নির্মমতা। পুলিশ বাহিনী সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের তৎকালীন ডিসি আলী আকবরের নেতৃত্বে অন্ত:ত ৩০ জন সাংবাদিক আহত হন। প্রায় অর্ধশত বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় নিযুক্ত প্রবীণ আলহাজ্ব জহিরুল হক। তাকেও সেদিন পুলিশ যেভাবে আক্রমণ করেছিল তা কোন সভ্য সমাজে ভাবাই যায় না। পুলিশ রাইফেলের বাঁট দিয়ে সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। সাংবাদিক সমাজের আন্দোলন তুঙ্গে এই ঘটনার প্রতিবাদে। তখন তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করেছিল। সেই রিপোর্ট আজও আলোর মুখ দেখেনি। হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরা কেউই শাস্তি পাননি আজও।
২০০৬ সালের ২৯ মে। কুষ্টিয়ায় তৎকালীন সরকার দলীয় সেখানকার সংসদ সদস্য সাংবাদিকদের ওপর লেলিয়ে দেয় সন্ত্রাসী। সেই ক্যাডার বাহিনী হামলা করে সাংবাদিকদের সমাবেশে। নির্যাতনবিরোধী ওই সমাবেশে হামলায় গুরুতর আহত হন বিশিষ্ট সাংবাদিক বাংলাদেশ অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি। আমাদের স্মৃতিতে আজও সেই রক্তাক্ত ইকবাল সোবহান চৌধুরীর ছবি ভেসে ওঠে। সন্ত্রাসী ক্যাডারদের কোন শাস্তি হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।
সাংবাদিকতাই আমার পেশা এবং নেশা। সার্বক্ষণিক ধ্যাণ, চিন্তা-চেতনার মধ্যেই আছে আমার সাংবাদিকতা। মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা। জনকল্যাণ ভাবনা। মানুষের ওপর যে অন্যায়-অত্যাচার, অবিচার। এসব নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাই হলো আমার জীবনের জন্য কাল। নন পার্টিজানশিপ সাংবাদিকতা করার এবং সর্বদাই ইনভেষ্টিগেটিভ জার্নালিজম করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি কখনই ভাবতে পারি না নির্যাতিত হবো নিজেই। কল্পনাও করিনি কোনদিন এমনটা। অন্যায়-অবিচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে নিজেই রাষ্ট্রীয় বর্বরতার শিকার হলাম।
অন্যায়-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমি রিপোর্ট করেছি। সেইরকম নির্যাতনই আমার জীবনটাকে পাল্টে দেবে? এটা ভাবনায় ছিল না আমার। আজকে আমি একটা কঠিন বাস্তবতা কিংবা সত্যের মুখোমুখি। এক ধরনের একটা অনিশ্চয়তা একটা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে আমার জীবনটাকে। আমি জানি না এ অবস্থার অবসান হবে কিনা? কারণ আমরা একটা অসভ্য-বর্বর সমাজের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। একটা অপশক্তি এই সমাজকে সবসময় অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চায়। যে অপশক্তি দিন দিন সমাজকে আবৃত করে ফেলছে। আমরা জানি, শত হয়রাণি, নির্যাতন ও হুমকিতেও জনজোয়ারের ঢেউ আটকানো যায় না। তেমনি কোন কোন মানুষকে আদর্শচ্যুত করা যায় না। অত্যাচার, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও অপশক্তি কখনই সত্যকে নিভিয়ে দিতে পারে না। তেমনি বাংলাদেশের সত্যান্বেষী কলম সৈনিকদেরর দমানো যাবে না হত্যা-নির্যাতন করে।
বাংলাদেশের যে বাস্তবতা তাতে আমাদের বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যেই নির্যাতন জড়িয়ে আছে। অত্যাচার বা নিপীড়ন বিষয়টা শক্তভাবে গ্রোথিত। মানুষ খুব স্বাভাবিকভাবেই (ব্যতিক্রম ছাড়া) নিয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্রসফায়ারের মত মানব হত্যার জঘন্য ঘটনাকে। পুলিশ, র্যাব বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হেফাজতে হত্যা-নির্যাতন একটা সাধারণ ব্যাপার। নির্যাতনের প্রেক্ষিতে মৃত্যুর পরও সমাজ কোন উচ্চবাচ্চ করে না। সরকার সবসময় এসব অপকর্মকে বৈধতা দিয়ে আসছে। অন্যকথায় দায়মুক্তি দিচ্ছে। নির্যাতনকারি-খুনির দল হচ্ছে পুরস্কৃত। এখানে মিডিয়ার ভূমিকাও প্রশ্নবোধক। মিডিয়া তোতাপাখির ন্যায় ক্রসফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের পক্ষ নিচ্ছে। মিডিয়া বাধ্য হয়ে করুক আর স্বেচ্ছায় করুক এটা দেখছি আমরা। ক্রসফায়ারকারিদের প্রেসবিজ্ঞপ্তিটি ছেপে দিতে কার্পণ্য করে না আমাদের গণমাধ্যম। অবশ্য যারা সাহস নিয়ে দু’একটি রিপোর্ট করেন তারা পড়েন চরম বেকায়দায়। তাদের হয় নির্যাতিত না হয় চাকুরিচ্যুত হতে হয়।
জাতির বিবেক, জাতিকে যারা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তারাই হলেন সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মী। সেই সাংবাদিকদের উপরে র্যাবের নির্যাতন চরমে এসে পৌঁছায় জরুরি অবস্থার সময়ে। তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমি নিজেই। আর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের উদাহরণ অনেক আছে। আমাদেরই সাহসী সাংবাদিক বিশিষ্ট কলামিষ্ট মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব শাহরিয়ার কবির স্বয়ং এক বড় উদাহরণ। শাহরিয়ার কবিরের ওপর বর্বর রাষ্টীয় নির্যাতন হয়েছে। আজও তিনি তার শরীরে সেই ক্ষতচিহ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একই অবস্থা এই লেখক এবং নিউ এজ এর মাসুমের। কিন্তু তারপরও আমরা চাই, আর কেউ যেন নির্যাতনের মাধ্যমে কিংবা বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার না হয়। দেশে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের কিঞ্চিৎ খতিয়ান তুলে ধরা যাক এবার। মানিক সাহা ছিলেন খ্যাতিমান সাংবাদিক। তিনি দৈনিক সংবাদ, নিউ এজ, বিবিসি ও বন্ধ হয়ে যাওয়া একুশে টেলিভিশন এর প্রতিনিধি ছিলেন। সন্ত্রাসীরা তার পর বর্বর ও নৃশংস বোমা হামলা চালায় ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে। ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন খুলনা প্রেসক্লাবের অনতিদূরে। এমন নৃশংস কায়দায় সাংবাদিক হত্যার নজির নেই আমাদের দেশে। মানিক সাহা হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশ জুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যাকান্ডের প্রকৃত খুনিরা আজও ধরাছোয়ার বাইরে।
২০০৪ সালের ২ মার্চ দি নিউ এজ পত্রিকার খন্ডকালীন সাংবাদিক কেরানীগঞ্জের আবদুল লতিফ নাবিলকে জবাই করে হত্যা করা হয়। স্ত্রী ফারহানা সুলতানা কনকের পরকীয়া প্রেমে বাধা দেয়ার কারণে এই হত্যাকান্ড ঘটে বলে অভিযোগ। স্ত্রীর প্রেমিক নির্জন মোস্তাকিন, মোস্তাকিনের বন্ধু শহিদুল ইসলাম পাপ্পু ও নাবিলের স্ত্রী কনক মিলে নাবিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে মোস্তাকিন, পাপ্পু ও স্ত্রী কনককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে মামলার কী অবস্থা? এটা আমাদের জানা নেই। দৈনিক জন্মভূমি সম্পাদক ও খুলনা প্রেসক্লাব সভাপতি ছিলেন হুমায়ূন কবির বালু। ২০০৪ সালের ২৭ জুন খুলনায় সন্ত্রাসীরা বোমা মেরে হত্যা করে তাকে। একই সালের ২১ আগস্ট রাতে সন্ত্রাসীরা কামাল হোসেনকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে জবাই করে হত্যা করে। তিনি ছিলেন খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির আজকের কাগজ প্রতিনিধি ও উপজেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক।
বগুড়ার দূর্জয় বাংলার নির্বাহী সম্পাদক ও বিএফইউজে সহ-সভাপতি দীপংকর চক্রবর্তী (৫৯)। তাকে একই বছরের ২ অক্টোবর হত্যা করা হয়। শেরপুরের সান্যালপাড়ার নিজ বাড়ির পাশেই সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এই সৎ সাংবাদিককে। ঢাকার কাঁটাবনে ২০০৪ সালের ২৪ অক্টোবর নিহত হন আরেক সাংবাদিক। দৈনিক এশিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা অফিসে ঢুকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে শহীদ আনোয়ার অ্যাপোলো (৩৫) কে। অ্যাপোলো ওই পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক বলে তার পকেট থেকে একটি ভিজিটিং কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে বলে জানা গেছে। ২০০৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে দৈনিক সংগ্রাম’র খুলনা ব্যুরো প্রধান শেখ বেলালউদ্দিনকে নিহত ও আরও ৪ সাংবাদিক আহত হন। একই বছরের ২৯ মে দিবাগত মধ্য রাতে কুমিল্লায় দৈনিক কুমিল্লা মুক্তকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মুহাম্মদ গোলাম মাহফুজ (৩৮) নিহত হন। তাকে জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তরা।
সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হয়েছেন ফরিদপুরে সমকালের প্রতিনিধি গৌতম দাস, যশোরে দৈনিক রানারের গোলাম মাজেদ, খুলনায় হারুন-অর রশিদ খোকন, দৈনিক জন্মভূমির হুমায়ুন কবির বালু, দৈনিক সংবাদের মানিক সাহা, রাঙ্গামাটির জামালউদ্দিন, ঝিনাইদহের মীর ইলিয়াস হোসেন দিলীপ, দৈনিক সংগ্রামের শেখ বেলালউদ্দিন, নহর আলী, শুকুর আলী হোসেন, নারায়ণগঞ্জের আহসান আলী, মৌলভীবাজারের ফারুক আহমেদ, নীলফামারীর নীলসাগরের মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, সাতক্ষীরার শ.ম.আলাউদ্দিন, যশোরের দৈনিক জনকণ্ঠের শামছুর রহমান কেবল, সাইফুল আলম মুকুল। সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকারকর্মীদের ওপর নির্যাতনের একটি ঘটনায়ও নির্যাতনকারির শাস্তি হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। জোট আমলে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে বিশিষ্ট কলামিষ্ট অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, এনামুল হক চৌধুরী সালিম সামাদ রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জোট আমলে নির্যাতিত হয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আলহাজ্ব জহিরুল হক। নির্যাতিত হয়েছেন সাংবাদিক প্রবীর শিকদার, টিপু সুলতান।
বিগত ১৭ বছরে বাংলাদেশে প্রথাবিরোধী লেখক অধ্যাপক ডক্টর হুমায়ূন আজাদসহ ৩১ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। ২০০৯ সালের ৩ জুলাই সাংবাদিক নূরুল ইসলাম রানা সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন ঢাকার উত্তরায়। বর্তমান সরকারের আমলে নিহত হয়েছেন সাংবাদিক আবদুল হান্নান (ডেমরা, ঢাকা) ও এম এম আহসান বারী (গাজীপুর, ঢাকা)। বেসরকারি সংগঠন অধিকারের রিপোর্ট মতে, ২০০৯ সালে দেশে ৩ জন সাংবাদিক নিহত, ৮৪ জন আহত, ৪৫ জন লাঞ্ছিত, ১৬ জন আক্রান্ত, একজন গ্রেফতার, দুইজন অপহরণ, ৭৩ জন হুমকির শিকার, ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা, ১৯ জন অন্যান্য ঘটনায় আক্রান্ত হন। ৪১ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে ৩৮ জন সাংবাদিক আহত, ২৬ জন হুমকির শিকার, ১৭ জন লাঞ্ছিত, একটি সংবাদপত্র কার্যালয় ও ৮ জন সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বিগত আওয়ামী লীগ আমলে তৎকালিন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী সাংবাদিক পিটিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনায় ওঠে আসেন। বার্তা সংস্থা ইউএনবির তৎকালিন ফেনী প্রতিনিধি টিপু সুলতানের ওপর হাজারীর ক্লাস কমিটির সদস্যরা হামলা করে। তখন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রি (যিনি বর্তমানেও প্রধানমন্ত্রি) শেখ হাসিনা পরোক্ষভাবে সাংবাদিক নির্যাতনকারির পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, টিপু সুলতানের কী কোন এক্রিডিটেশন কার্ড আছে? ওটা ছাড়া কী সাংবাদিক হওয়া যায় নাকি? অথচ বাংলাদেশের শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ সাংবাদিকের কোন এক্রিডিটেশন কার্ড নেই। যদিও এই কার্ড দেয়া নিয়েও রয়েছে নানান কথা। সে প্রসঙ্গ থাক আজ।
দেশে আলোচিত সাংবাদিক হত্যাকান্ডগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও বহুল আলোচিত হলো মানিক সাহা, শামছুর রহমান কেবল, হুমায়ুন কবির বালু, দীপংকর চক্রবর্তী, গৌতম দাস, হারুন রশিদ খোকন, সাইফুল আলম মুকুল, শেখ বেলালউদ্দিন। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বহু সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন। এরমধ্যে দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক প্রকাশক মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ, জাহাঙ্গীর আলম আকাশ, তাসনীম খলিল, কার্টুনিষ্ট আরিফুর রহমান প্রমূখ উল্লেখযোগ্য। তত্ত্বাবধায়ক আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের তুচ্ছ ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে সেনাবাহিনী দেশজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-ছাত্রদের ওপর নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল প্রগতিশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থী মৌন মিছিল করেন। এই অজুহাতে তৎকালিন সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নামে রাজনৈতিক হয়রাণিমূলক মামলা চাপিয়ে দেয়।
প্রথাবিরোধী বিশিষ্ট নাট্যকার-অভিনেতা, কলামিষ্ট মলয় ভৌমিক। দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা করেছেন। এখন নিয়মিত কলাম লিখেন দেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো, যুগান্তরসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে। তার ”উত্তরের উলুখাগড়া” শীর্ষক কলাম দৈনিক সংবাদ এর জনপ্রিয় কলাম ছিল। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বয়সী নাট্য সংগঠন অনুশীলন নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও সঙ্গীত বিভাগের চেয়ারম্যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শায়ত্বশাসিত একটি ক্যাম্পাসে নির্যাতনবিরোধী মৌন র্যালি করার অপরাধে বর্বর নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন তিনি। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিচার হয়নি।
সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের ঘটনাগুলো নতুন নয়। জরুরি অবস্থার সময় সাংবাদিকদের আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। সাংবাদিকদের যেভাবে পর্যুদস্ত করা হয়েছে তার প্রতিকার সাংবাদিক সমাজ কার্যকরভাবে চাইতে পেরেছে কিনা? সেটাও আজকে একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকদের বিভাজন, সাংবাদিকতা পেশার রাজনীতিকরণ, সুশাসনের অভাব, কার্যকর গণতন্ত্রহীনতা, সুবিধাবাদিতা, বৈষম্য, ধনিক পুঁজি অভিমুখী গণমাধ্যমসহ নানা কারণে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের কোন প্রতিকার হয়নি আজও।
সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের প্রতিকার না পাবার পেছনে আরেকটি শক্তিশালী কারণ বিদ্যমান। সেটা হলো-দলীয় সাংবাদিকতা। আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের আমলে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন হলে আওয়ামী তথা মহাজোট সমর্থক সাংবাদিকরা নিরব হয়ে যান। বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে যারা সোচ্চার থাকেন রাজপথে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের প্রতিবাদে। অন্যদিকে আবার বিএনপি-জামায়াত আমলে শত সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন হলেও বিএনপি-জামায়াতপন্থি সাংবাদিক সমাজ মুখে কুলুপ আটে। যারা মহাজোটের আমলে মহাবিপ্লবী সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে।
সাংবাদিক কিংবা সাধারণ একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। যেকোন হেফাজতে কোন নাগরিককে নির্যাতন সভ্য সমাজে চলতে পারে না। সাধারণ নাগরিক হোক অথবা রাজনীতিবিদ হোক কিংবা পেশাজীবি হোন বা গণমাধ্যমকর্মী হোন কারও কোন নির্যাতনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে এটা আমাদের দাবি। যদি এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটে তার সুষ্ঠু তদন্ত করা প্রয়োজন। যারা এমন নির্যাতনের সাথে জড়িত থাকবে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় আনতে হবে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সংঘটিত সকল সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের ঘটনার কার্যকর তদন্ত চাই। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় দোষিদের বিচারের মুখোমুখি আনয়ন অত্যন্ত জরুরি। কেননা, সভ্য সমাজে মানব হত্যা-নির্যাতন কল্পনাও করা যায় না।
বাংলাদেশের সমাজ যদি আদর্শভিত্তিক পরিবর্তিত না হয় তাহলে প্রেসফ্রিডমটা মূলত: সোনার হরিণ ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশের মানুষ দেখেছেন, দুর্নীতিবাজরা সব সরকারের আমলেই নিয়ন্ত্রিত। আর এসব দুর্নীতিবাজ কিংবা কালো টাকার মালিকরাই বাংলাদেশে মিডিয়ার ওনারশিপের জায়গাটা ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মিডিয়াকে ঘোষণা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কালো টাকার মালিক মিডিয়ার ওনারশিপে থাকায় তাদের মধ্যে একেবারেই ব্যতিক্রম ছাড়া কোন ইডিওলজি নেই। ফলে সাংবাদিকরা প্রথমত: সেলফসেন্সরশিপের মুখে পড়ে। সরকারি বিজ্ঞাপনকে ঘিরে দেশে মুড়ি-মুড়কির মত সংবাদপত্র বেরিয়েছে। এর কতগুলো জনগণের কল্যাণে কাজ করছে তাও আজ একটি বড় প্রশ্ন। সরকারের তরফ থেকে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের একটি অন্যতম বড় হাতিয়ার হলো বিজ্ঞাপন। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। তাছাড়া পেশাদারিত্বের সংকট বাংলাদেশে প্রেসফ্রিডমের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম বাধা।
দেশে প্রেসফ্রিডমের আরও একটা সমস্যা হলো কনটেম্পট টু কোর্ট এবং মানহানি। এ বিষয়ক সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা না থাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক-প্রকাশকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। কোনটা লিখলে আদালত অবমাননা হবে? তার কোন সৃনির্দিষ্ট বর্ণনা নেই কোথাও। এনিয়ে সাংবাদিক, সম্পাদক সকলেই একটা চরম ঝুঁকির মধ্যে। সর্বোপরি বাংলাদেশে কোন জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা নেই। জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাব, সাংবাদিদের মধ্যে অনৈক্য, রাজনৈতিক বিভাজন, আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামোর কারণে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন থামছে না। সাংবাদিক খুন বা নির্যাতিত হলে তার প্রতিকার মেলে না, বিচার হয় না। ফলে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনকারিরা উৎসাহিত হচ্ছে। সাংবাদিক সমাজ আমরা দেশে এযাবৎ সংঘটিত সকল সাংবাদিকসহ সকল হত্যা-নির্যাতনের বিচার চাই। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনসহ সকল হত্যা-নির্যাতনের প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। যদি সমাজে সত্যিকারের আইনের শাসন, কার্যকর গণতন্ত্র থাকে। অত্যাচার-নির্যাতনের কোন প্রতিকার, বিচার, প্রতিবিধান নেই। এই যে একটা ধারণা মানুষের মনে বদ্ধমূল হয়েছে সেটাকে ভাঙা চাই। আর এটা করতে হলে চাই দেশপ্রেমিক জনঐক্য।
রাজনীতি, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের উর্দ্ধে ওঠে গণ জাগরণ গণবিপ্লব দরকার। গণবিপ্লবের মাধ্যমেই কেবল সমাজ ও রাষ্ট্রের ভেতরকার সমস্যাগুলোর সমাধান হতে পারে। সমাজ ও রাষ্ট্রে দায়মুক্তি এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির শেকড় বেশ গভীরে। এটার প্রমাণ মেলে যখন আমরা দেখি, মানুষ হত্যাকান্ডের বিচার চান না। সহকর্মীর নৃশংস হত্যাকান্ডের পর সাংবাদিক সমাজকে বলতে শুনেছি ’বিচার পাই না তাই বিচার চাই না’। এমন স্লোগান লিখে রাজপথে নামতে হয় সাংবাদিকদের। আমরা আশা করবো, এই অবস্থার পরিবর্তন হবে। আশার কথা হলো বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে কমিউনিটি রেডিও নীতিমালা প্রণয়ন করে গেছে। মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়েছে। বর্তমান সরকার রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট প্রণয়ন করেছে। এর মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একটি ধাপ এগিয়েছে বলে আমরা মনে করি। তবে এসব আইন প্রণয়ন করলেইতো আর হবে না। এগুলোকে স্বাধীনভাবে চলতে দিতে হবে এবং কার্যকর করতে হবে।
বর্তমান সরকারের তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাসমূহ তুলে নেয়া হবে। ভাল কথা। রাজনৈতিক হয়রাণিমূলক মামলা তুলে নেয়াই উচিত। ব্যক্তিগতভাবে আমার বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক হয়রাণিমূলক মামলা হয়েছে। আমি মনে করি, একটা বিষয় পরিস্কার হওয়া দরকার। সেটা হলো ধরুণ, একজন সাংবাদিক ’এক্স’। তিনি সত্যি সত্যি চাঁদাবাজি কিংবা অপরাধ করেছেন। তার মামলাও কী তবে তুলে নেয়া হবে? এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হলো-না সব মামলা তোলা উচিত হবে না। কেবলমাত্র যেসব মামলা রাজনৈতিব উদ্দেশ্য প্রণোদিত, মিথ্যা-হয়রাণিমূলক সেইসব মামলাই তুলে নেয়া হোক। অন্যথায় দেশে আইনের শাসন রক্ষা করা যাবে না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র আবার গণতন্ত্র ছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। কোনটাই ভাবা যায় না। সভ্য ও মানবিক কল্যাণমুখী সমাজে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের একটা পূর্বশর্ত। গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একে অপরের পরিপূরক। একটা ছাড়া অন্যটা অচল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে আজ (১০ জুলাই, ২০১০) কথা হলো আমার এক বন্ধু-সহকর্মীর সাথে। ফেইসবুক চেটিংকালে ওই বন্ধুটি জানালেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ওপর তিনি চার পর্বের একটি সিরিজ প্রতিবেদন তৈরী করেন। যার অর্ধেক প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু অর্ধেকটা (দু’টি পর্ব)বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ সেনাবাহিনীর (র্যাব) চাপ। ২০০০ সালের ঠিক এই দিনে (১০ জুলাই) নিহত হয়েছিলেন বিখ্যাত সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল। তিনি দৈনিক জনকণ্ঠের দক্ষিণালীয় প্রতিনিধি ছিলেন। নিজ অফিসে কর্মরত অবস্থায় তিনি সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান। এরপর দশটি বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু খুনিদের বিচার হয়নি।
দৈনিক জনকণ্ঠ (১০ জুলাই, ২০১০) লিখেছে, ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ চাঞ্চল্যকর শামছুর রহমান হত্যা মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে মামলার বর্ধিত তদন্ত করা হয়। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে নিহত সাংবাদিক কেবলের বন্ধু সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেনকে আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সরকার। আবার বাদ দেয়া হয় মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে। কিন্তু নতুন সাক্ষী করা হয় আসামিদের ঘনিষ্ঠজনদের। ২০০৫ সালের জুন মাসে এই মামলার সকল আসামির বিরুদ্ধে যশোরের ষ্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগ গঠিত হয়। একই বছরের জুলাই মাসে বাদিকে না জানিয়ে মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করে সরকার। মামলার অন্যতম আসামি খুলনার সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক জামিন নিয়ে পলা
খুলনার আদালতে যাবার পর মামলার বাদি এ বং কয়েকজন সাক্ষীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়। সে সময় আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে পুলিশ মামলার বাদি এবং সাক্ষীর বাড়িতে অভিযান চালায়। শহীদ শামছুর রহমানের স্ত্রী সেলিনা আকতার লাকি ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপীল করেন। আপিলের আবেদনে বলা হয়, মামলার অন্যতম আসামি হিরক পলাতক রয়েছে। এই মামলার অন্যান্য আসামির সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সম্পর্ক রয়েছে। ফলে তাঁর পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষ্য দেয়া সম্ভব নয়। এরই প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেয়া হবে তার জন্য সরকারের ওপর রুলনিশি জারি করে। বর্তমান মামলাটি সে অবস্থাতেই রয়েছে। মামলার এক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন। অপর আসামি কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু ২ বছর আগে স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেন। অন্য আসামিরা জামিনে রয়েছে। কেবল ভাইয়ের মেয়ে সেজুঁতি ও প্রণতি চিরদিনের জন্য বাবার স্নেহ ও ভালবাসা থেকে বঞ্চিত। স্বামী হারানোর বেদনায় আজও কেঁদে ওঠেন লাকী ভাবি (কেবল ভাইয়ের স্ত্রী)। তিনি জানালেন প্রণতি বেড়ে উঠছে তার ‘ছবি বাবা’কে (কেবল ভাইয়ের ছবি দেখে)দেখে।
বাংলাদেশে ন্যায় বিচার, মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার এই বেহাল অবস্থা। অথচ গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ। দুর্নীতি, রাজনৈতিক দুর্বত্তায়ন বাংলাদেশের গোটা সমাজ ব্যবস্থার উপরই চরম এক আঘাত। প্রকৃত এবং বাস্তবিক অর্থেই গণতন্ত্রের চর্চা ছাড়া এই অবস্থা থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই। দুর্নীতি, অশিক্ষা আর দারিদ্রতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারলেই কেবল গণতন্ত্রের পথ মসৃণ হতে পারে। সেই পথ দেখানোর দায়িত্বটা কিন্তু রাজনীতিবিদদেরই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সকল সাংবাদিক, রাজনৈতিক হত্যা-নির্যাতনের বিচার চাই আমরা। আইনমাফিক সকল ধরণের প্রভাবমুক্ত ন্যায্য বিচার।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপি-জামায়াত আমলে ১৪ সাংবাদিক হত্যাকান্ডের তথ্য তুলে ধরেন। এই তথ্য যেমন সত্য তেমনি মহাজোট সরকারের আমলে ৫ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, এটাও সত্য। কিন্তু তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অর্ধাংশ স্বীকার করে অর্ধেকটা অস্বীকার করেছেন পরোক্ষভাবে। বিএনপি-জামায়াতের আমলে জনপ্রিয় একুশে টেলিভিশন বন্ধ করা হয়েছিল। এটা যেমন সত্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে চ্যানেল ওয়ান, যমুনা টিভি ও আমার দেশ বন্ধ হলো। উভয়ই সত্য। আমরা অর্ধসত্য নয় পুরো সত্য জানতে চাই। বাংলাদেশের অর্ধসত্য রাজনৈতিক অবস্থান পুরো সত্যের জায়গায় আসতে পারবে কী?
লিংক
বাস্তব জীবনে এটার সত্যতা অনুবাধন করলাম এই প্রবাসে এসে। ব্যতিক্রম যে নেই তা বলতে পারি না। এক্ষেত্রে জীবন্ত উদাহরণ দিতে পারি আবদুল্লাহ আল-হারুণের। যিনি তিন দশক যাবত জার্মানে বসবাস করছেন। তার মত মানুষদেরকে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হতে হয়। কী দুর্ভাগ্য আমাদের! অথচ যিনি বাংলাদেশকে অনেক কিছু দিতে পারতেন। যা থেকে বাঙালি সমাজ বঞ্চিত হলো। তিনি যদি বাংলাদেশে থাকতেন? হয়ত আজ জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন কিংবা হুমায়ূন আহমেদকে ছাড়িয়ে যেতেন! কিংবা খ্যাতিমান প্রয়াত নাট্যকার আবদুল্লাহ আল-মামুনের খ্যাতিকেও ছাপিয়ে যেতে পারতেন তার কর্মগুণে। আবদুল্লাহ আল-হারুণ অবশ্য তারই অনুজ সহোদর। আবার কেউ যদি রাষ্ট্রীয় বাহিনী কিংবা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী অংশের অপছন্দের হন। অথবা যিনি ডান পক্ষেও নেই আবার বামপক্ষেরও নন। বাঙালি হিসেবে তার মত অভাগা বোধহয় এজগতে আর কেউ নেই। বাংলাদেশের মত সমাজে রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থাকলে টিকে থাকা খুবই কঠিন। সম্প্রতি বার্লিনে আমাকে এই সত্যটা আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের এক সুহৃদ।
যাহোক, আজকের লেখার প্রসঙ্গ এটা নয়। লেখক আবদুল্লাহ আল-হারুণ প্রবাস জীবনে আমার একজন বড় বন্ধু, অভিভাবক। তার সাথে আমার বয়সের দিক ধরলে বলতে হবে পিতা-পুত্রের মত সম্পর্ক। তার মাধ্যমেই কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলী সাগরের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে আমার। তিনি অনলাইন সংবাদপত্র নতুন দেশ এর প্রকাশক এবং তার স্ত্রী সেরিন ফেরদৌস সম্পাদক। উভয়ই পেশাদার সাংবাদিক। বাংলাদেশে থাকতে কারও সঙ্গেই আমার সরাসরি যোগাযোগ হয়নি কোনদিন। কিন্তু উভয়ের রিপোর্টই আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করতো। তাদের রিপোর্টের সঙ্গে ছিল আমার এক ধরণের গভীর সম্পর্ক। নতুন দেশে প্রকাশিত আবদুল্লাহ আল হারুণের একটি লেখা সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করি। এটা করতে গিয়ে শওগাত ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটে ই-মেইল যোগাযোগের মাধ্যমে। খুব বেশিদিনের কথা নয় এটি। মার্চের ১০ কিংবা ১২ তারিখে (২০১০) প্রথম যোগাযোগ সাগর ভাইয়ের সঙ্গে। নতুন দেশ পত্রিকার প্রথম বর্ষ সংখ্যা ৩৮, ২১ এপ্রিল, ২০১০ সংখ্যায় একটি লেখা ছাপা হয় জনৈক আবুর রহিম মজুমদারের নামে। শিরোনাম ছিল বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন।
ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন সংক্রান্ত যেকোন ধরণের রিপোর্ট বা লেখার প্রতি আমার আগ্রহ একটু বেশি। তাই লেখাটি মনোযোগ আকর্ষণ করে আমার। কিন্তু প্রথম প্যারা পড়ার পরই লেখার সঙ্গে একটা আত্মিক সম্পর্ক মনে হতে লাগলো। এবং লেখাটি পুরো একবার পড়ার পরই বুঝতে পারি এটা আমার লেখা। হুবহু আমার এই লেখাটিই ভিন্ন শিরোনামে ছাপা হয় বাংলাদেশের প্রাচীন সংবাদপত্র দৈনিক সংবাদে। সেই আমার লেখাটি ছাপানো হয় নতুন দেশে। ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত আমার লেখাটির শিরোনাম ছিল ”সাহসী সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যা দিবস এবং বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন”। দ্রুত একটা ই-মেইল পাঠালাম সাগর ভাইকে। তিনি স্বস্তিমূলক একটা উত্তর দিলেন তড়িৎ বেগে। তারপরেই দেখা গেলো লেখাটি ডিলিট করে দেয়া হয়েছে। আমি যদি কারও লেখা হুবহু নকল করে নিজের নামে কোথাও পাঠাই। তবে কোন সম্পাদক-বার্তা সম্পাদক বা প্রকাশকের পক্ষেই তা আঁচ করা সম্ভব নয়। নকল বা চুরির বিষয়টি তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষপে নিশ্চিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়। যেটা বাস্তবে করে দেখালেন প্রিয় শওগাত ভাই ও সেরিন আপা। পেশাদারি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এটা একটা নজির। ধন্যবাদ নতুন দেশ কর্তৃপক্ষকে। নতুন দেশ পরিবারের সাথে একটা গভীর আত্মিক সম্পর্ক অনুভব করি আমি। আশা করি এই সম্পর্কের ধারা বহমান রইবে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল ও প্রিয় পাঠকদের কাছে বাংলাদেশের প্রেসফ্রিডমের একটা চিত্র তুলে ধরতে চাই। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে মাত্র। তখন আমি কলেজে পড়ি। শিক্ষানবিশ রিপোর্টার হিসেবে দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে কাজ করি দৈনিক বাংলায়। তখনই দৈনিক বাংলা কার্যালয়ে পরিচয় দু:সাহসী দেশপেমিক সাংবাদিক শ্রদ্ধেয় শামছুর রহমান কেবলের সঙ্গে। ১৬ জুলাই তাঁর হত্যাবার্ষিকী। ২০০০ সালের এই দিনে দুর্বৃত্তরা তাঁকে হত্যা করে বুলেটের আঘাতে। তখন তিনি দৈনিক জনকণ্ঠে কাজ করেন যশোর থেকে। প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন করার লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। এরপর দৈনিক বাংলা ছেড়ে যোগ দিই দৈনিক সংবাদে। তখন পরিচয় হয় সাংবাদিক মানিক সাহার সঙ্গে। খুলনা থেকে তিনি সাংবাদিকতা করতেন। তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভয়াবহ সন্ত্রাস, তান্ডব দেশবাসিকে ভাবিয়ে তুলতো। এই অপশক্তি আমাকে বারবার হত্যার হুমকি দেয়। মানিক সাহা বলতেন, ”আকাশ বেশি রিস্ক নিও না। সাবধানে থেকো। ওরা (শিবির) খুব ভয়ংকর।” এই অকুতোভয় জনদরদী সাংবাদিক আর নেই আমাদের মাঝে। বোমার আঘাতে এই দেশপ্রেদিকের মাথার খুলি উড়িয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তচক্র। আজও জ্বল জ্বল করে ভেসে ওঠে মানিক সাহার সেই রক্তাক্ত ছবিটা। তার মাথার মগজ সেদিন উড়ে গিয়েছিল বোমার আঘাতে। রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল তার দেহটা। রাস্তার ওপরে নিথর হয়ে পড়ে থাকা দেহ যেন গোটা বাংলাদেশ। পর্শিয়া ও নাতাশাতো আর কোনদিন বাবা ডাকতে পারবে না। মানিক সাহার দুই কন্যা। নন্দা বউদির চোখের জল মুছে গেছে। কিন্তু হৃদয়ের যে ক্ষরণ তা কী কোনদিন বন্ধ হবে?
মুক্ত গণমাধ্যমতো পরের কথা সাংবাদিকদের জীবনেরই কোন নিশ্চয়তা নেই। সন্ত্রাস, রাজনীতি ও সমাজনীতির সব তথ্যের জীবন্ত ভান্ডার ছিলেন কেবল ভাই। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের জীবনে দিন যায়, মাস যায়, বছর ঘুরে নতুন বছর আসে। কিন্তু সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের বিচার হয় না। দেশে ”সেক্যুলার ও গণতান্ত্রিক” নামধারী একটা নির্বাচিত সরকার আছে। এটা আবার মহাজোট সরকার নামে বেশি পরিচিত। কিন্তু সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন বন্ধ হয়নি। বন্ধ করা যায়নি বিনা বিচারে মানুষ হত্যা। মাত্র ক’দিন আগে চলে গেলো ফরিদপুরের সাংবাদিক গৌতম দাসের হত্যা দিবস। আদালতে আত্মসমর্পণকারি একজন অভিযুক্ত খুনি (গৌতম হত্যার) কী করে পালিয়ে যায়? এটা আমাদের জানা নেই। তবে দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার আছে বলে মনে হয় না। থাকলে অন্তত সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন বন্ধ হতো। বিচার পেতো নির্যাতিত ও নিহত সাংবাদিক পরিবারগুলো।
গণতন্ত্র ছাড়া গণমাধ্যম স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না। মানবাধিকারও থাকে না। অসাম্য আর অন্যায্যের পৃথিবীতে সাংবাদিকতা দিন দিন ঝঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ও অশান্ত দুনিয়ায় সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন নতুন কোন বিষয় নয়। তাইতো বিশ্বময় প্রেসের স্বাধীনতা তথা প্রেস ফ্রিডম বা মুক্ত গণমাধ্যমের জন্য আওয়াজ তীব্র হচ্ছে ক্রমশ:। এই আওয়াজ গণমাধ্যমের গন্ডি পেরিয়ে নাগরিক সমাজের বৃহৎ অংশকেও টানতে সক্ষম হয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র অসহায়। গণমাধ্যম ও গণতন্ত্র একে অপরের পরিপুরক। বিশ্বে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় সাংবাদিকতার ঝুঁকিটা চরমে পৌঁছেছে। আর বাংলাদেশেতো প্রায় প্রতিনিয়ত সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম রাষ্ট্রযন্ত্রের খবরদারি, নিপীড়নের মধ্যেই আছে।
জনগণের তথ্য জানার অধিকারকে রক্ষা করা গণমাধ্যমের প্রধান কাজ। গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের পথকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। অধিকারহারা শোষিত বঞ্চিত অসহায় মানুষদের পক্ষে গণমাধ্যম সর্বদা সোচ্চার। সমাজপতি, রাষ্ট্রনায়কদের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে গণমাধ্যম। সামাজিক ও পেশাগত দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে সাংবাদিকরা শত প্রতিকুলতার মধ্যেও কাজ করছেন। বাংলাদেশে তিন’টি জনপ্রিয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে। দুর্নীতি, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, দখলদারিত্ব ক্ষমতার অপব্যবহার কিংবা লুটপাট নিয়ে খবর বেরুলেই হলো। সাংবাদিক আর যায় কোথায়? সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের খবর হয়ে যাবে। একই কারণে সাংবাদিককে মন্ত্রি-এমপিদের অথবা রাজনৈতিক প্রভাবশালি মহলের খপ্পড়ে পড়তে হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের, প্রভাবশালিদের রোষানলে পড়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। হত্যা-নির্যাতন, হয়রাণি, গ্রেফতার, মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে বন্ধুর করে তুলেছে।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় সাংবাদিকদের জন্য জীবন খুব বিপদজনক। কারণ সাংবাদিকরা মানুষের কথা বলেন। মানুষের বিপদ হত্যা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কাজ করে গণমাধ্যম। রাজনৈতিক দূুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি-দু:শাসনের কথা তুলে ধরেন সাংবাদিকরা। ফলে সাংবাদিকদের উপরেই সবচেয়ে বেশি নিগ্রহের কষাঘাত এসে পড়ে। যেসমস্ত সাংবাদিক বা মিডিয়া মানুষের নিগ্রহের বিরুদ্ধে কথা বলতে চেষ্টা করেন। কিংবা যারা মানুষের দুর্দশার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেন তাদের উপরেই সবচেয়ে বেশি অত্যাচার নেমে আসে। এখানে আমরা উদাহরণ দিতে পারি একুশে টেলিভিশন (বন্ধ হবার আগেকার একুশে টিভির কথা বলা হচ্ছে) এবং সিএসবি নিউজ এর। একুশে টিভি এবং সিএসবি নিউজ এই দু’টি টিভি চ্যানেল ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন ছল-ছুতোয় সরকার এই বৃহৎ দু’টি টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও আদালতের রায়ের মাধ্যমে পরে একুশে টেলিভিশন পুনরায় চালু হয়েছে। বাংলাদেশে প্রেসফ্রিডম এর আরও খবর হলো আরেকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার টেলিযোগাযোগ আইন লংঘন’র অভিযোগে চ্যানেল ওয়ান এর সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় ২৭ এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যায়। (সূত্র: দৈনিক সংবাদ, ২৮ এপ্রিল, ২০১০)। একই দিনের সংবাদ’ এর দেশ পাতায় আরেকটি খবরের শিরোনাম হলো ”মানিকগঞ্জ সংবাদ প্রতিনিধিকে পৌর মেয়রের প্রাণনাশের হুমকি: থানায় জিডি”।
রিপোর্টের ভাষ্য মতে, দুর্নীতি বিষয়ক একটি অভিযোগের বিষয়ে মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা রমজান আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন সাংবাদিক মুহম্মদ আবুল কালাম বিশ্বাস। এসময় মেয়র সাংবাদিককে বলেন, ”তুই যদি আর পত্রিকায় আমার ও আমার পরিবার নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ করিস তবে তোকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। আগেও তুই আমার ভাইকে নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেছিস। আমি তখন আমার লোকজন নিয়ে তোকে খুঁজেছি, কিন্তু তোকে পাইনি। তাই তুই প্রাণে বেঁচে গেছিস। পত্রিকায় আর যদি কোন সংবাদ আমাকে নিয়ে লিখিস, তাহলে আমি তোর ও তোর পরিবারের ক্ষতি করবো।”
বাংলাদেশে প্রেসফ্রিডমের সর্বষে খবর হলো-দৈনিক আমার দেশ এর প্রকাশনা বন্ধ। ১ জুন, ২০১০ সরকার এক ঠুনকো অজুহাতে বিরোধী শিবিরের সমর্থক এই পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়। একই রাতে সরকার আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে (যদিও তিনি পেশাদার কোন সাংবাদিক নন, তবে বাংলাদেশে বহু অপেশাদার মানুষ মিডিয়া অঙ্গনের নামকরা ব্যক্তিত্ব) গ্রেফতার করে। বাংলাদেশের প্রাচীন ইংরেজী দৈনিক অবজারভার বন্ধ হয়ে গেছে জুন (২০১০) মাসেই। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস ও সাপ্তাহিক বিচিত্রা বন্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীরে নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারই ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর পরীক্ষামূলক সম্প্রচার শুরু করে। কিন্তু কথিত অনিয়মের অভিযোগে ১৯ নভেম্বর, ২০০০৯ সরকার যমুনা টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের শেষ নেই। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন যেন এক মামুলি ব্যাপার সেখানে। ময়মনসিংহের গফরগাঁয়ে দৈনিক সমকালের বিপ্লবের হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হয় জোট সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই। অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য সরকার দলীয় একজন সংসদ সদস্যের প্রত্যক্ষ মদদে এ ঘটনা ঘটেছে বলে সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ। সেই ঘটনার সর্বশেষ কী অবস্থা তা আমরা আজও জানি না। ঢাকার উত্তরায় কমিউনিটি বেইসড একটি পত্রিকার তরুণ রিপোর্টার নূরুল ইসলাম রানা খুন হয়েছেন। এটা ২০০৯ সালের ৩ জুলাইয়ের ঘঁনা। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলই ৫ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। নিহত সাংবাদিকরা হলেন ফতেহ ওসমানী, শফিকুল ইসলাম মিঠু, আবদুল হান্নান, আহসান বারী ও নূরুল রানা। আর জরুরি অবস্থায় এই লেখক (জাহাঙ্গীর আলম আকাশ) ছাড়াও দ্য ডেইলি স্টারের তাসনীম খলিল নির্যাতিত হন সেনাবাহিনী ও র্যাবের হাতে। জরুরি অবস্থা চলাকালে সিলেট, বান্দরবান, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংবাদিদের বিরুদ্ধে হয়রাণিমূলক মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর সামরিক শাসন দেশের মানুষের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে। বহু লড়াই-সংগ্রাম আর আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সামরিক শাসনের অবসান ঘটে। মুক্তি পায় গণতন্ত্রের পায়রা। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মানুষ ফিরে পায় স্বাধীনতার পুন:স্বাদ। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নির্বাচন। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয় জেনারেল জিয়াউর রহমানের গড়া দল বিএনপি। ক্ষমতায় এসেই বিএনপি সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। সরকারি মালিকানাধীন সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থা, গণমাধ্যম থেকে বিএনপির কাছে ‘অপছন্দনীয়’ সাংবাদিকরা গণছাঁটায়ের শিকার হন। কোন রকমের টার্মিনেশন বেনিফিট ছাড়াই বিএনপি সরকার ছাঁটাই করে দৈনিক বাংলার তৎকালীন সম্পাদক তোয়াব খান, তৎকালীন সাপ্তাহিক বিচিত্রার নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার কবিরসহ ১৪ জন সিনিয়র সাংবাদিককে।
২০০২ সালের নভেম্বর মাসের কথা। বিবিসি চ্যানেল ফোরের জন্য একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন বিদেশী সাংবাদিক জাইবা মালিক ও ব্রুনো সরেনটিনো। এই ’অপরাধে’ বিএনপি সরকার সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন করে। ব্রিটিশ ও ইতালীয় এই দুই সাংবাদিকসহ বাংলাদেশের শাহরিয়ার কবির, সালিম সামাদ ও পিসিলা রাজকে গ্রেফতার করা হয়। ময়মনসিংহের সিনেমা হলে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এর সাথে জড়িত করে গ্রেফতার করা হয় বাসস’র সাংবাদিক এনামুল হক চৌধুরী ও বিশিষ্ট কলামিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুনকে। আটকাবস্থায় বিএনপি সরকার সাংবাদিকদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছিল বলে অভিযোগ।
২০০৯ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিকের ঘটনা। দৈনিক সংবাদের ধামরাই প্রতিনিধি শামীম পারভেজ খানকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় দুর্বৃত্তরা। এলাকার নিরীহ লোকদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচতে সহায়তা করার করেন এই সাংবাদিক। এতেই ক্ষুব্ধ হয় স্বার্থান্বেষী মহল। হুমকির বিষয়ে থানায় জিডি হলেও সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হয়নি। একই মাসের শুরুর দিকে ঘটে আরেক ঘটনা ময়মনসিংহে। গফরগাঁওয়ে দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি শামীম আল আমিন বিপ্লবের ওপর আক্রমণ করা হয়। সংসদ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমদ এর ক্যাডার বাহিনী বিপ্লবের হাত-পা ভেঙ্গে দেয়। ২২ অক্টোবর (২০০৯) বাড়ির ভেতরে বর্বর নির্যাতনের শিকার হন সাংবাদিক এফ এম মাসুম। র্যাব সদস্যরা তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে। তিনি নিউ এজ পত্রিকার রিপোর্টার। বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিষয়ে রিপোর্ট করেছিলেন। যার কারণে তাকে নির্যাতিত হতে হয়।
২০০৬ সালের ১৬ এপ্রিল মাস। চট্রগ্রামে বাংলাদেশ ও অষ্ট্রেলিয়ার মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল। খেলার মাঠের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ চালায় নির্মমতা। পুলিশ বাহিনী সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের তৎকালীন ডিসি আলী আকবরের নেতৃত্বে অন্ত:ত ৩০ জন সাংবাদিক আহত হন। প্রায় অর্ধশত বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় নিযুক্ত প্রবীণ আলহাজ্ব জহিরুল হক। তাকেও সেদিন পুলিশ যেভাবে আক্রমণ করেছিল তা কোন সভ্য সমাজে ভাবাই যায় না। পুলিশ রাইফেলের বাঁট দিয়ে সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। সাংবাদিক সমাজের আন্দোলন তুঙ্গে এই ঘটনার প্রতিবাদে। তখন তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করেছিল। সেই রিপোর্ট আজও আলোর মুখ দেখেনি। হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরা কেউই শাস্তি পাননি আজও।
২০০৬ সালের ২৯ মে। কুষ্টিয়ায় তৎকালীন সরকার দলীয় সেখানকার সংসদ সদস্য সাংবাদিকদের ওপর লেলিয়ে দেয় সন্ত্রাসী। সেই ক্যাডার বাহিনী হামলা করে সাংবাদিকদের সমাবেশে। নির্যাতনবিরোধী ওই সমাবেশে হামলায় গুরুতর আহত হন বিশিষ্ট সাংবাদিক বাংলাদেশ অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি। আমাদের স্মৃতিতে আজও সেই রক্তাক্ত ইকবাল সোবহান চৌধুরীর ছবি ভেসে ওঠে। সন্ত্রাসী ক্যাডারদের কোন শাস্তি হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।
সাংবাদিকতাই আমার পেশা এবং নেশা। সার্বক্ষণিক ধ্যাণ, চিন্তা-চেতনার মধ্যেই আছে আমার সাংবাদিকতা। মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা। জনকল্যাণ ভাবনা। মানুষের ওপর যে অন্যায়-অত্যাচার, অবিচার। এসব নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাই হলো আমার জীবনের জন্য কাল। নন পার্টিজানশিপ সাংবাদিকতা করার এবং সর্বদাই ইনভেষ্টিগেটিভ জার্নালিজম করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি কখনই ভাবতে পারি না নির্যাতিত হবো নিজেই। কল্পনাও করিনি কোনদিন এমনটা। অন্যায়-অবিচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে নিজেই রাষ্ট্রীয় বর্বরতার শিকার হলাম।
অন্যায়-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমি রিপোর্ট করেছি। সেইরকম নির্যাতনই আমার জীবনটাকে পাল্টে দেবে? এটা ভাবনায় ছিল না আমার। আজকে আমি একটা কঠিন বাস্তবতা কিংবা সত্যের মুখোমুখি। এক ধরনের একটা অনিশ্চয়তা একটা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে আমার জীবনটাকে। আমি জানি না এ অবস্থার অবসান হবে কিনা? কারণ আমরা একটা অসভ্য-বর্বর সমাজের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। একটা অপশক্তি এই সমাজকে সবসময় অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চায়। যে অপশক্তি দিন দিন সমাজকে আবৃত করে ফেলছে। আমরা জানি, শত হয়রাণি, নির্যাতন ও হুমকিতেও জনজোয়ারের ঢেউ আটকানো যায় না। তেমনি কোন কোন মানুষকে আদর্শচ্যুত করা যায় না। অত্যাচার, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করেও অপশক্তি কখনই সত্যকে নিভিয়ে দিতে পারে না। তেমনি বাংলাদেশের সত্যান্বেষী কলম সৈনিকদেরর দমানো যাবে না হত্যা-নির্যাতন করে।
বাংলাদেশের যে বাস্তবতা তাতে আমাদের বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যেই নির্যাতন জড়িয়ে আছে। অত্যাচার বা নিপীড়ন বিষয়টা শক্তভাবে গ্রোথিত। মানুষ খুব স্বাভাবিকভাবেই (ব্যতিক্রম ছাড়া) নিয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্রসফায়ারের মত মানব হত্যার জঘন্য ঘটনাকে। পুলিশ, র্যাব বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হেফাজতে হত্যা-নির্যাতন একটা সাধারণ ব্যাপার। নির্যাতনের প্রেক্ষিতে মৃত্যুর পরও সমাজ কোন উচ্চবাচ্চ করে না। সরকার সবসময় এসব অপকর্মকে বৈধতা দিয়ে আসছে। অন্যকথায় দায়মুক্তি দিচ্ছে। নির্যাতনকারি-খুনির দল হচ্ছে পুরস্কৃত। এখানে মিডিয়ার ভূমিকাও প্রশ্নবোধক। মিডিয়া তোতাপাখির ন্যায় ক্রসফায়ার বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের পক্ষ নিচ্ছে। মিডিয়া বাধ্য হয়ে করুক আর স্বেচ্ছায় করুক এটা দেখছি আমরা। ক্রসফায়ারকারিদের প্রেসবিজ্ঞপ্তিটি ছেপে দিতে কার্পণ্য করে না আমাদের গণমাধ্যম। অবশ্য যারা সাহস নিয়ে দু’একটি রিপোর্ট করেন তারা পড়েন চরম বেকায়দায়। তাদের হয় নির্যাতিত না হয় চাকুরিচ্যুত হতে হয়।
জাতির বিবেক, জাতিকে যারা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তারাই হলেন সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মী। সেই সাংবাদিকদের উপরে র্যাবের নির্যাতন চরমে এসে পৌঁছায় জরুরি অবস্থার সময়ে। তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ আমি নিজেই। আর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের উদাহরণ অনেক আছে। আমাদেরই সাহসী সাংবাদিক বিশিষ্ট কলামিষ্ট মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব শাহরিয়ার কবির স্বয়ং এক বড় উদাহরণ। শাহরিয়ার কবিরের ওপর বর্বর রাষ্টীয় নির্যাতন হয়েছে। আজও তিনি তার শরীরে সেই ক্ষতচিহ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একই অবস্থা এই লেখক এবং নিউ এজ এর মাসুমের। কিন্তু তারপরও আমরা চাই, আর কেউ যেন নির্যাতনের মাধ্যমে কিংবা বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার না হয়। দেশে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের কিঞ্চিৎ খতিয়ান তুলে ধরা যাক এবার। মানিক সাহা ছিলেন খ্যাতিমান সাংবাদিক। তিনি দৈনিক সংবাদ, নিউ এজ, বিবিসি ও বন্ধ হয়ে যাওয়া একুশে টেলিভিশন এর প্রতিনিধি ছিলেন। সন্ত্রাসীরা তার পর বর্বর ও নৃশংস বোমা হামলা চালায় ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে। ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন খুলনা প্রেসক্লাবের অনতিদূরে। এমন নৃশংস কায়দায় সাংবাদিক হত্যার নজির নেই আমাদের দেশে। মানিক সাহা হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশ জুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যাকান্ডের প্রকৃত খুনিরা আজও ধরাছোয়ার বাইরে।
২০০৪ সালের ২ মার্চ দি নিউ এজ পত্রিকার খন্ডকালীন সাংবাদিক কেরানীগঞ্জের আবদুল লতিফ নাবিলকে জবাই করে হত্যা করা হয়। স্ত্রী ফারহানা সুলতানা কনকের পরকীয়া প্রেমে বাধা দেয়ার কারণে এই হত্যাকান্ড ঘটে বলে অভিযোগ। স্ত্রীর প্রেমিক নির্জন মোস্তাকিন, মোস্তাকিনের বন্ধু শহিদুল ইসলাম পাপ্পু ও নাবিলের স্ত্রী কনক মিলে নাবিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে মোস্তাকিন, পাপ্পু ও স্ত্রী কনককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে মামলার কী অবস্থা? এটা আমাদের জানা নেই। দৈনিক জন্মভূমি সম্পাদক ও খুলনা প্রেসক্লাব সভাপতি ছিলেন হুমায়ূন কবির বালু। ২০০৪ সালের ২৭ জুন খুলনায় সন্ত্রাসীরা বোমা মেরে হত্যা করে তাকে। একই সালের ২১ আগস্ট রাতে সন্ত্রাসীরা কামাল হোসেনকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে জবাই করে হত্যা করে। তিনি ছিলেন খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির আজকের কাগজ প্রতিনিধি ও উপজেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক।
বগুড়ার দূর্জয় বাংলার নির্বাহী সম্পাদক ও বিএফইউজে সহ-সভাপতি দীপংকর চক্রবর্তী (৫৯)। তাকে একই বছরের ২ অক্টোবর হত্যা করা হয়। শেরপুরের সান্যালপাড়ার নিজ বাড়ির পাশেই সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় এই সৎ সাংবাদিককে। ঢাকার কাঁটাবনে ২০০৪ সালের ২৪ অক্টোবর নিহত হন আরেক সাংবাদিক। দৈনিক এশিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা অফিসে ঢুকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে শহীদ আনোয়ার অ্যাপোলো (৩৫) কে। অ্যাপোলো ওই পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক বলে তার পকেট থেকে একটি ভিজিটিং কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে বলে জানা গেছে। ২০০৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে দৈনিক সংগ্রাম’র খুলনা ব্যুরো প্রধান শেখ বেলালউদ্দিনকে নিহত ও আরও ৪ সাংবাদিক আহত হন। একই বছরের ২৯ মে দিবাগত মধ্য রাতে কুমিল্লায় দৈনিক কুমিল্লা মুক্তকন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মুহাম্মদ গোলাম মাহফুজ (৩৮) নিহত হন। তাকে জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তরা।
সন্ত্রাসী-দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হয়েছেন ফরিদপুরে সমকালের প্রতিনিধি গৌতম দাস, যশোরে দৈনিক রানারের গোলাম মাজেদ, খুলনায় হারুন-অর রশিদ খোকন, দৈনিক জন্মভূমির হুমায়ুন কবির বালু, দৈনিক সংবাদের মানিক সাহা, রাঙ্গামাটির জামালউদ্দিন, ঝিনাইদহের মীর ইলিয়াস হোসেন দিলীপ, দৈনিক সংগ্রামের শেখ বেলালউদ্দিন, নহর আলী, শুকুর আলী হোসেন, নারায়ণগঞ্জের আহসান আলী, মৌলভীবাজারের ফারুক আহমেদ, নীলফামারীর নীলসাগরের মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, সাতক্ষীরার শ.ম.আলাউদ্দিন, যশোরের দৈনিক জনকণ্ঠের শামছুর রহমান কেবল, সাইফুল আলম মুকুল। সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকারকর্মীদের ওপর নির্যাতনের একটি ঘটনায়ও নির্যাতনকারির শাস্তি হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। জোট আমলে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে বিশিষ্ট কলামিষ্ট অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, এনামুল হক চৌধুরী সালিম সামাদ রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জোট আমলে নির্যাতিত হয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আলহাজ্ব জহিরুল হক। নির্যাতিত হয়েছেন সাংবাদিক প্রবীর শিকদার, টিপু সুলতান।
বিগত ১৭ বছরে বাংলাদেশে প্রথাবিরোধী লেখক অধ্যাপক ডক্টর হুমায়ূন আজাদসহ ৩১ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। ২০০৯ সালের ৩ জুলাই সাংবাদিক নূরুল ইসলাম রানা সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছেন ঢাকার উত্তরায়। বর্তমান সরকারের আমলে নিহত হয়েছেন সাংবাদিক আবদুল হান্নান (ডেমরা, ঢাকা) ও এম এম আহসান বারী (গাজীপুর, ঢাকা)। বেসরকারি সংগঠন অধিকারের রিপোর্ট মতে, ২০০৯ সালে দেশে ৩ জন সাংবাদিক নিহত, ৮৪ জন আহত, ৪৫ জন লাঞ্ছিত, ১৬ জন আক্রান্ত, একজন গ্রেফতার, দুইজন অপহরণ, ৭৩ জন হুমকির শিকার, ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা, ১৯ জন অন্যান্য ঘটনায় আক্রান্ত হন। ৪১ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে ৩৮ জন সাংবাদিক আহত, ২৬ জন হুমকির শিকার, ১৭ জন লাঞ্ছিত, একটি সংবাদপত্র কার্যালয় ও ৮ জন সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বিগত আওয়ামী লীগ আমলে তৎকালিন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী সাংবাদিক পিটিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনায় ওঠে আসেন। বার্তা সংস্থা ইউএনবির তৎকালিন ফেনী প্রতিনিধি টিপু সুলতানের ওপর হাজারীর ক্লাস কমিটির সদস্যরা হামলা করে। তখন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রি (যিনি বর্তমানেও প্রধানমন্ত্রি) শেখ হাসিনা পরোক্ষভাবে সাংবাদিক নির্যাতনকারির পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, টিপু সুলতানের কী কোন এক্রিডিটেশন কার্ড আছে? ওটা ছাড়া কী সাংবাদিক হওয়া যায় নাকি? অথচ বাংলাদেশের শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ সাংবাদিকের কোন এক্রিডিটেশন কার্ড নেই। যদিও এই কার্ড দেয়া নিয়েও রয়েছে নানান কথা। সে প্রসঙ্গ থাক আজ।
দেশে আলোচিত সাংবাদিক হত্যাকান্ডগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও বহুল আলোচিত হলো মানিক সাহা, শামছুর রহমান কেবল, হুমায়ুন কবির বালু, দীপংকর চক্রবর্তী, গৌতম দাস, হারুন রশিদ খোকন, সাইফুল আলম মুকুল, শেখ বেলালউদ্দিন। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বহু সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন। এরমধ্যে দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক প্রকাশক মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ, জাহাঙ্গীর আলম আকাশ, তাসনীম খলিল, কার্টুনিষ্ট আরিফুর রহমান প্রমূখ উল্লেখযোগ্য। তত্ত্বাবধায়ক আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের তুচ্ছ ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে সেনাবাহিনী দেশজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-ছাত্রদের ওপর নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল প্রগতিশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থী মৌন মিছিল করেন। এই অজুহাতে তৎকালিন সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নামে রাজনৈতিক হয়রাণিমূলক মামলা চাপিয়ে দেয়।
প্রথাবিরোধী বিশিষ্ট নাট্যকার-অভিনেতা, কলামিষ্ট মলয় ভৌমিক। দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা করেছেন। এখন নিয়মিত কলাম লিখেন দেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো, যুগান্তরসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে। তার ”উত্তরের উলুখাগড়া” শীর্ষক কলাম দৈনিক সংবাদ এর জনপ্রিয় কলাম ছিল। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বয়সী নাট্য সংগঠন অনুশীলন নাট্যদলের প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও সঙ্গীত বিভাগের চেয়ারম্যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শায়ত্বশাসিত একটি ক্যাম্পাসে নির্যাতনবিরোধী মৌন র্যালি করার অপরাধে বর্বর নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন তিনি। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিচার হয়নি।
সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের ঘটনাগুলো নতুন নয়। জরুরি অবস্থার সময় সাংবাদিকদের আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। সাংবাদিকদের যেভাবে পর্যুদস্ত করা হয়েছে তার প্রতিকার সাংবাদিক সমাজ কার্যকরভাবে চাইতে পেরেছে কিনা? সেটাও আজকে একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকদের বিভাজন, সাংবাদিকতা পেশার রাজনীতিকরণ, সুশাসনের অভাব, কার্যকর গণতন্ত্রহীনতা, সুবিধাবাদিতা, বৈষম্য, ধনিক পুঁজি অভিমুখী গণমাধ্যমসহ নানা কারণে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের কোন প্রতিকার হয়নি আজও।
সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের প্রতিকার না পাবার পেছনে আরেকটি শক্তিশালী কারণ বিদ্যমান। সেটা হলো-দলীয় সাংবাদিকতা। আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের আমলে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন হলে আওয়ামী তথা মহাজোট সমর্থক সাংবাদিকরা নিরব হয়ে যান। বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে যারা সোচ্চার থাকেন রাজপথে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের প্রতিবাদে। অন্যদিকে আবার বিএনপি-জামায়াত আমলে শত সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন হলেও বিএনপি-জামায়াতপন্থি সাংবাদিক সমাজ মুখে কুলুপ আটে। যারা মহাজোটের আমলে মহাবিপ্লবী সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে।
সাংবাদিক কিংবা সাধারণ একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। যেকোন হেফাজতে কোন নাগরিককে নির্যাতন সভ্য সমাজে চলতে পারে না। সাধারণ নাগরিক হোক অথবা রাজনীতিবিদ হোক কিংবা পেশাজীবি হোন বা গণমাধ্যমকর্মী হোন কারও কোন নির্যাতনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে এটা আমাদের দাবি। যদি এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটে তার সুষ্ঠু তদন্ত করা প্রয়োজন। যারা এমন নির্যাতনের সাথে জড়িত থাকবে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় আনতে হবে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সংঘটিত সকল সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের ঘটনার কার্যকর তদন্ত চাই। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় দোষিদের বিচারের মুখোমুখি আনয়ন অত্যন্ত জরুরি। কেননা, সভ্য সমাজে মানব হত্যা-নির্যাতন কল্পনাও করা যায় না।
বাংলাদেশের সমাজ যদি আদর্শভিত্তিক পরিবর্তিত না হয় তাহলে প্রেসফ্রিডমটা মূলত: সোনার হরিণ ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশের মানুষ দেখেছেন, দুর্নীতিবাজরা সব সরকারের আমলেই নিয়ন্ত্রিত। আর এসব দুর্নীতিবাজ কিংবা কালো টাকার মালিকরাই বাংলাদেশে মিডিয়ার ওনারশিপের জায়গাটা ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মিডিয়াকে ঘোষণা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কালো টাকার মালিক মিডিয়ার ওনারশিপে থাকায় তাদের মধ্যে একেবারেই ব্যতিক্রম ছাড়া কোন ইডিওলজি নেই। ফলে সাংবাদিকরা প্রথমত: সেলফসেন্সরশিপের মুখে পড়ে। সরকারি বিজ্ঞাপনকে ঘিরে দেশে মুড়ি-মুড়কির মত সংবাদপত্র বেরিয়েছে। এর কতগুলো জনগণের কল্যাণে কাজ করছে তাও আজ একটি বড় প্রশ্ন। সরকারের তরফ থেকে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের একটি অন্যতম বড় হাতিয়ার হলো বিজ্ঞাপন। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। তাছাড়া পেশাদারিত্বের সংকট বাংলাদেশে প্রেসফ্রিডমের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম বাধা।
দেশে প্রেসফ্রিডমের আরও একটা সমস্যা হলো কনটেম্পট টু কোর্ট এবং মানহানি। এ বিষয়ক সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা না থাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক-প্রকাশকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। কোনটা লিখলে আদালত অবমাননা হবে? তার কোন সৃনির্দিষ্ট বর্ণনা নেই কোথাও। এনিয়ে সাংবাদিক, সম্পাদক সকলেই একটা চরম ঝুঁকির মধ্যে। সর্বোপরি বাংলাদেশে কোন জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা নেই। জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাব, সাংবাদিদের মধ্যে অনৈক্য, রাজনৈতিক বিভাজন, আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামোর কারণে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন থামছে না। সাংবাদিক খুন বা নির্যাতিত হলে তার প্রতিকার মেলে না, বিচার হয় না। ফলে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনকারিরা উৎসাহিত হচ্ছে। সাংবাদিক সমাজ আমরা দেশে এযাবৎ সংঘটিত সকল সাংবাদিকসহ সকল হত্যা-নির্যাতনের বিচার চাই। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনসহ সকল হত্যা-নির্যাতনের প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। যদি সমাজে সত্যিকারের আইনের শাসন, কার্যকর গণতন্ত্র থাকে। অত্যাচার-নির্যাতনের কোন প্রতিকার, বিচার, প্রতিবিধান নেই। এই যে একটা ধারণা মানুষের মনে বদ্ধমূল হয়েছে সেটাকে ভাঙা চাই। আর এটা করতে হলে চাই দেশপ্রেমিক জনঐক্য।
রাজনীতি, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের উর্দ্ধে ওঠে গণ জাগরণ গণবিপ্লব দরকার। গণবিপ্লবের মাধ্যমেই কেবল সমাজ ও রাষ্ট্রের ভেতরকার সমস্যাগুলোর সমাধান হতে পারে। সমাজ ও রাষ্ট্রে দায়মুক্তি এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির শেকড় বেশ গভীরে। এটার প্রমাণ মেলে যখন আমরা দেখি, মানুষ হত্যাকান্ডের বিচার চান না। সহকর্মীর নৃশংস হত্যাকান্ডের পর সাংবাদিক সমাজকে বলতে শুনেছি ’বিচার পাই না তাই বিচার চাই না’। এমন স্লোগান লিখে রাজপথে নামতে হয় সাংবাদিকদের। আমরা আশা করবো, এই অবস্থার পরিবর্তন হবে। আশার কথা হলো বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে কমিউনিটি রেডিও নীতিমালা প্রণয়ন করে গেছে। মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়েছে। বর্তমান সরকার রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট প্রণয়ন করেছে। এর মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একটি ধাপ এগিয়েছে বলে আমরা মনে করি। তবে এসব আইন প্রণয়ন করলেইতো আর হবে না। এগুলোকে স্বাধীনভাবে চলতে দিতে হবে এবং কার্যকর করতে হবে।
বর্তমান সরকারের তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাসমূহ তুলে নেয়া হবে। ভাল কথা। রাজনৈতিক হয়রাণিমূলক মামলা তুলে নেয়াই উচিত। ব্যক্তিগতভাবে আমার বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক হয়রাণিমূলক মামলা হয়েছে। আমি মনে করি, একটা বিষয় পরিস্কার হওয়া দরকার। সেটা হলো ধরুণ, একজন সাংবাদিক ’এক্স’। তিনি সত্যি সত্যি চাঁদাবাজি কিংবা অপরাধ করেছেন। তার মামলাও কী তবে তুলে নেয়া হবে? এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হলো-না সব মামলা তোলা উচিত হবে না। কেবলমাত্র যেসব মামলা রাজনৈতিব উদ্দেশ্য প্রণোদিত, মিথ্যা-হয়রাণিমূলক সেইসব মামলাই তুলে নেয়া হোক। অন্যথায় দেশে আইনের শাসন রক্ষা করা যাবে না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র আবার গণতন্ত্র ছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। কোনটাই ভাবা যায় না। সভ্য ও মানবিক কল্যাণমুখী সমাজে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের একটা পূর্বশর্ত। গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একে অপরের পরিপূরক। একটা ছাড়া অন্যটা অচল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে আজ (১০ জুলাই, ২০১০) কথা হলো আমার এক বন্ধু-সহকর্মীর সাথে। ফেইসবুক চেটিংকালে ওই বন্ধুটি জানালেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ওপর তিনি চার পর্বের একটি সিরিজ প্রতিবেদন তৈরী করেন। যার অর্ধেক প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু অর্ধেকটা (দু’টি পর্ব)বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ সেনাবাহিনীর (র্যাব) চাপ। ২০০০ সালের ঠিক এই দিনে (১০ জুলাই) নিহত হয়েছিলেন বিখ্যাত সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল। তিনি দৈনিক জনকণ্ঠের দক্ষিণালীয় প্রতিনিধি ছিলেন। নিজ অফিসে কর্মরত অবস্থায় তিনি সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারান। এরপর দশটি বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু খুনিদের বিচার হয়নি।
দৈনিক জনকণ্ঠ (১০ জুলাই, ২০১০) লিখেছে, ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ চাঞ্চল্যকর শামছুর রহমান হত্যা মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে মামলার বর্ধিত তদন্ত করা হয়। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে নিহত সাংবাদিক কেবলের বন্ধু সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেনকে আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সরকার। আবার বাদ দেয়া হয় মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে। কিন্তু নতুন সাক্ষী করা হয় আসামিদের ঘনিষ্ঠজনদের। ২০০৫ সালের জুন মাসে এই মামলার সকল আসামির বিরুদ্ধে যশোরের ষ্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগ গঠিত হয়। একই বছরের জুলাই মাসে বাদিকে না জানিয়ে মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করে সরকার। মামলার অন্যতম আসামি খুলনার সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক জামিন নিয়ে পলা
খুলনার আদালতে যাবার পর মামলার বাদি এ বং কয়েকজন সাক্ষীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়। সে সময় আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে পুলিশ মামলার বাদি এবং সাক্ষীর বাড়িতে অভিযান চালায়। শহীদ শামছুর রহমানের স্ত্রী সেলিনা আকতার লাকি ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপীল করেন। আপিলের আবেদনে বলা হয়, মামলার অন্যতম আসামি হিরক পলাতক রয়েছে। এই মামলার অন্যান্য আসামির সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সম্পর্ক রয়েছে। ফলে তাঁর পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষ্য দেয়া সম্ভব নয়। এরই প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেয়া হবে তার জন্য সরকারের ওপর রুলনিশি জারি করে। বর্তমান মামলাটি সে অবস্থাতেই রয়েছে। মামলার এক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন। অপর আসামি কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু ২ বছর আগে স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেন। অন্য আসামিরা জামিনে রয়েছে। কেবল ভাইয়ের মেয়ে সেজুঁতি ও প্রণতি চিরদিনের জন্য বাবার স্নেহ ও ভালবাসা থেকে বঞ্চিত। স্বামী হারানোর বেদনায় আজও কেঁদে ওঠেন লাকী ভাবি (কেবল ভাইয়ের স্ত্রী)। তিনি জানালেন প্রণতি বেড়ে উঠছে তার ‘ছবি বাবা’কে (কেবল ভাইয়ের ছবি দেখে)দেখে।
বাংলাদেশে ন্যায় বিচার, মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার এই বেহাল অবস্থা। অথচ গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ। দুর্নীতি, রাজনৈতিক দুর্বত্তায়ন বাংলাদেশের গোটা সমাজ ব্যবস্থার উপরই চরম এক আঘাত। প্রকৃত এবং বাস্তবিক অর্থেই গণতন্ত্রের চর্চা ছাড়া এই অবস্থা থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই। দুর্নীতি, অশিক্ষা আর দারিদ্রতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারলেই কেবল গণতন্ত্রের পথ মসৃণ হতে পারে। সেই পথ দেখানোর দায়িত্বটা কিন্তু রাজনীতিবিদদেরই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সকল সাংবাদিক, রাজনৈতিক হত্যা-নির্যাতনের বিচার চাই আমরা। আইনমাফিক সকল ধরণের প্রভাবমুক্ত ন্যায্য বিচার।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপি-জামায়াত আমলে ১৪ সাংবাদিক হত্যাকান্ডের তথ্য তুলে ধরেন। এই তথ্য যেমন সত্য তেমনি মহাজোট সরকারের আমলে ৫ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, এটাও সত্য। কিন্তু তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অর্ধাংশ স্বীকার করে অর্ধেকটা অস্বীকার করেছেন পরোক্ষভাবে। বিএনপি-জামায়াতের আমলে জনপ্রিয় একুশে টেলিভিশন বন্ধ করা হয়েছিল। এটা যেমন সত্য আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে চ্যানেল ওয়ান, যমুনা টিভি ও আমার দেশ বন্ধ হলো। উভয়ই সত্য। আমরা অর্ধসত্য নয় পুরো সত্য জানতে চাই। বাংলাদেশের অর্ধসত্য রাজনৈতিক অবস্থান পুরো সত্যের জায়গায় আসতে পারবে কী?
লিংক
লেবেলসমূহ:
মানবাধিকার
,
সাম্প্রতিক বিষয়
এর দ্বারা পোস্ট করা
suMon azaD (সুমন আজাদ)
বাংলাদেশে অপরাধের ব্যাপকতা, বৈচিত্র্য ও মাত্রা এখন এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যার সঙ্গে ভয়াবহ নৈরাজ্যিক পরস্থিতির পার্থক্য নেই। এই অপরাধের জগতেই এখন বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের বসবাস। এদিক দিয়ে গ্রাম ও শহরের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এর সব থেকে বিপজ্জনক দিক হলো, এসব অপরাধের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেই। উপরন্তু এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে যেখানে স্থানীয় জনগণ ঘটতে থাকা নির্যাতনের দৃশ্য নির্বিকারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে। সালিশের নামে রংপুরের বদরগঞ্জে গৃহবধূ নির্যাতনের এ ধরনের এক দৃশ্য 'সকালের খবর'-এর শেষ পৃষ্ঠায় আজ ছাপা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, গৃহবধূটিকে চিৎ করে ফেলে জন দুই লোক লাঠিপেটা করছে এবং স্থানীয় লোকজন চেয়ারে বসে ও চারদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে থেকে এই দৃশ্য উপভোগ করছে! বিগত ৭ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে 'সালিশে প্রকাশ্যে দুই গৃহবধূকে লাঠিপেটা' শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে এর বিরুদ্ধে রুল জারি করে এই ঘটনার বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। এ ধরনের ঘটনা গ্রামে নতুন বা ব্যতিক্রম নয়। নিয়মিতভাবেই এটা গ্রামাঞ্চলে বেশ কিছুদিন থেকে ঘটে চলেছে। এর বিরুদ্ধে অনেক প্রতিবাদ, হাইকোর্টের রুলিং ইত্যাদি হলেও এ ধরনের নারী নির্যাতন বন্ধের কোনো লক্ষণ এখনও পর্যন্ত নেই। বদরগঞ্জে সদ্য সংঘটিত ঘটনাটিই এর প্রমাণ।
গ্রামে যেমন আছে এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা, তেমনি আছে অন্য ধরনের ঘটনা যা দেখা গেছে মাত্র কয়েকদিন আগে। ঢাকার গাবতলী-আমীনবাজার এলাকায় রাতে ডাকাত সন্দেহে ছয়জন ছাত্রকে গ্রামবাসী পিটিয়ে হত্যা করেছে। তাদের আটক করে, জিজ্ঞাসাবাদ করে, তাদের পরিচয় জানার কোনো প্রয়োজন তারা বোধ করেনি। ডাকাত ধরার নাম করে তারা নিজেদের খুনের স্পৃহা চরিতার্থ করতে গিয়েই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। একদিকে গৃহবধূ নির্যাতন ও সেই নির্যাতনের দৃশ্য দাঁড়িয়ে, বসে দেখা ও উপভোগ করা এবং অন্যদিকে এভাবে ছয়জন ছাত্রের পরিচয় জানার কোনো চেষ্টা না করে দল বেঁধে গ্রামবাসী কর্তৃক তাদের পিটিয়ে হত্যা করার মধ্যে অপরাধ প্রবণতার চারিত্রিক মিল অবশ্যই আছে।
আজকের দৈনিক সমকালেই মেঘনার জেলেদের ওপর একটি রিপোর্ট প্রথম পৃষ্ঠাতেই বের হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, নদীতে এখন প্রচুর মাছ ধরা পড়লেও জলদস্যু নিজাম ও তার গ্রুপের সদস্যদের চাঁদা পরিশোধ করতে না পারায় নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না শত শত জেলে। নিজাম ডাকাত বড় নৌকাপ্রতি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ও ছোট নৌকাপ্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এই চাঁদা পরিশোধ করে জেলেদের 'নিজাম ডাকাত টোকেন' সংগ্রহ না করলে নদীতে গিয়ে তাদের মাছ ধরার উপায় নেই। নদীতে টহল পুলিশের কোনো কথা এ রিপোর্টে না থাকলেও জলদস্যুরা যে পুলিশের কাছ থেকে টাকা খেয়েই অবাধে তাদের দস্যুবৃত্তি করে থাকে এতে সন্দেহ নেই!
প্রতিদিনই নানা ধরনের অপরাধ দেশজুড়ে এমনভাবে ঘটছে যাতে এটা মনে করা স্বাভাবিক যে, দেশে আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। এ অবস্থা রীতিমতো আতঙ্কজনক। কিন্তু এর থেকেও আতঙ্কজনক ব্যাপার এই যে, এই পরিস্থিতি দ্রুতগতিতে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে, পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হচ্ছে। বাংলাদেশে এটা কেন ঘটছে এর কারণ অনুসন্ধান করলে সহজেই বোঝা যাবে, সরকার ও বিভিন্ন রাষ্ট্রযন্ত্রের অপরাধমূলক তৎপরতাই মূলত এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং এর অবনতি ঘটিয়ে চলেছে। বেপরোয়া ঘুষ, চুরি, দুর্নীতি থেকে নিয়ে খুন-জখম পর্যন্ত সবকিছুই এই প্রক্রিয়ার অন্তর্গত। মন্ত্রী, এমপি প্রমুখের দুর্নীতির ওপর রিপোর্ট নিয়মিতই প্রকাশিত হয়। আমলারাও এই দুর্নীতির বড় অংশীদার। দু'একদিন আগে জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, হুইপ, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য প্রমুখের আপ্যায়ন বাবদ বছরে কোটি কোটি টাকা খরচের একটা হিসাব বের হয়েছে। এতে দেখা যায়, তারা কে কত খরচ করবেন তার ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। ফুর্তির বশবর্তী হয়ে তারা যতই লাখ লাখ টাকা খরচ করুন তার কোনো বিরোধিতা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নেই। অন্য ধরনের দুর্নীতির কথা বাদ দিয়েও উচ্চতম পর্যায়ের এই আপ্যায়ন খরচও যে এক অবাধ দুর্নীতির ব্যাপার এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। এসবের সঙ্গে দেশে ক্রমবর্ধমান অপরাধের যোগ সম্পর্ক আছে। কিন্তু শারীরিক নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদির সঙ্গে যার যোগ সব থেকে বেশি তা হলো, পুলিশি নির্যাতন এবং পুলিশের নিজেরই অপরাধমূলক তৎপরতা। এই পুলিশের সঙ্গে সম্পর্কিত আছে র্যাবসহ বিভিন্ন ধরনের বাহিনী। পুলিশ যেখানে নাগরিকদের রক্ষকের ভূমিকা বাদ দিয়ে নিজেই তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ করে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে, সেখানে সমাজে অপরাধের বিস্তার যে অবাধে ঘটতে থাকবে এটা স্বাভাবিক।
পুলিশের অপরাধমূলক তৎপরতার সব থেকে বিপজ্জনক দিক হলো, প্রায়ই প্রকৃত অপরাধীকে ধরতে ব্যর্থ হয়ে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিয়ে নিরপরাধ লোককে অপরাধী সাজানোর জন্য নানা ক্রিমিনাল পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ। এটা কিছুদিন আগে লিমনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। আসল অপরাধীকে ছেড়ে দিয়ে তার মতো একজন নিরীহ ও নিরপরাধ ছাত্রকে গুলি করে তার পা নষ্ট করে দেওয়ার মতো অপরাধ যেখানে র্যাব নিজেই করে, সেখানে তার দ্বারা যে সাধারণ চোর, ডাকাত ও গুণ্ডারা উৎসাহিত হয়ে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে র্যাব-পুলিশের সহায়তায় আইনকে ফাঁকি দিয়ে নিজেরাও খুন-জখম করবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। লিমনের ব্যাপার নিয়ে দেশব্যাপী এত বিক্ষোভ ও লেখালেখি সত্ত্বেও র্যাব যে এখনও পর্যন্ত তাদের অপরাধমূলক অবস্থান থেকে একটুকুও নড়েনি, এটা অপরাধের জগৎ ভালোভাবেই লক্ষ্য করে। এর মধ্যেই তারা নিজেদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পায়। এ জন্য বাংলাদেশে এখন অপরাধের যত ঘটনা ঘটছে সেগুলো যে শুধু র্যাব-পুলিশের নিজেদের অপরাধমূলক তৎপরতা থেকে উৎসাহ লাভ করেই ঘটছে তাই নয়। এসব ঘটনার অধিকাংশই ঘটছে তাদের সঙ্গে সাধারণ অপরাধীদের যোগসাজশের মাধ্যমে অথবা অপরাধী পাকড়াও করার ক্ষেত্রে তাদের নিষ্ক্রিয়তার জন্য। এ সম্পর্কিত রিপোর্ট এখন সংবাদপত্রের পাতায় নিয়মিত ব্যাপার।
পুলিশ যে তাদের অপরাধমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভকে মোটেই পরোয়া করে না, এর প্রধান কারণ পুলিশের অপরাধের জন্য তাদের দ্রুত শাস্তি তো দূরের কথা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো শাস্তির ব্যবস্থা সরকারিভাবে করা হয় না। পুলিশ যেভাবে অপরাধীদের নিজেদের নাকের ডগায় অপরাধ চালিয়ে যেতে অনেক ক্ষেত্রেই সহায়তা করে, তেমনি সরকার আবার পুলিশের অপরাধের শাস্তির ব্যবস্থা তো দূরের কথা, তাদের শাস্তি থেকে বাঁচানোর চেষ্টাই করে থাকে। সরকার ও সরকারি লোকজন নিজেরা যেসব অপরাধ করে তার জন্য পুলিশের সাহায্য তাদের প্রয়োজন হয়। কাজেই পুলিশকে অপরাধের শাস্তি থেকে রক্ষা করা হয়ে দাঁড়ায় সরকারের দায়িত্ব!
পুলিশের অপরাধমূলক বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের এই মুহূর্তের এক দৃষ্টান্ত হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরকে ডাকাত বলে গ্রেফতার করে, তাকে নিজেদের হেফাজতে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা। আবদুল কাদেরকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ও নিরপরাধ জেনেও পুলিশ যে এখনও তার বিরুদ্ধে মামলা তুলে না নিয়ে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করছে এটা স্বাভাবিক অবস্থায় সম্ভব নয়। এটা সম্ভব হচ্ছে বর্তমানে সরকারি ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় দেশজুড়ে এক অস্বাভাবিক অপরাধের পরিবেশ গড়ে ওঠার কারণে। একের পর এক সরকার যদি নানা ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতায় নিজেরা জড়িত না থাকত এবং অপরাধ দমনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করত, তাহলে এই পরিস্থিতি দেশে এভাবে সৃষ্টি হতো না। অপরাধের জগৎ দ্রুত বিস্তৃত হতে থাকা এবং চারদিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা দাঁড়াত না। একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি, গৃহবধূ নির্যাতন, ক্রমবর্ধমান হারে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন ১০-২০ জনের মৃত্যু, নদীতে জলদস্যুদের অবাধ অপরাধ, লিমন ও কাদেরের মতো ছাত্রের ওপর র্যাব-পুলিশের নির্যাতন একই অপরাধের সূত্রে গ্রথিত আছে। এবং এসব অপরাধের সঙ্গে গভীর যোগসূত্র আছে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকার ও রাষ্ট্রের অপরাধ দমন ক্ষেত্রে ব্যর্থতা তো বটেই, উপরন্তু তাদের নিজেদেরই নানা ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতার।
Tue, 02/08/2011 - 2:48pm | by Badruddin.Umar
গ্রামে যেমন আছে এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা, তেমনি আছে অন্য ধরনের ঘটনা যা দেখা গেছে মাত্র কয়েকদিন আগে। ঢাকার গাবতলী-আমীনবাজার এলাকায় রাতে ডাকাত সন্দেহে ছয়জন ছাত্রকে গ্রামবাসী পিটিয়ে হত্যা করেছে। তাদের আটক করে, জিজ্ঞাসাবাদ করে, তাদের পরিচয় জানার কোনো প্রয়োজন তারা বোধ করেনি। ডাকাত ধরার নাম করে তারা নিজেদের খুনের স্পৃহা চরিতার্থ করতে গিয়েই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। একদিকে গৃহবধূ নির্যাতন ও সেই নির্যাতনের দৃশ্য দাঁড়িয়ে, বসে দেখা ও উপভোগ করা এবং অন্যদিকে এভাবে ছয়জন ছাত্রের পরিচয় জানার কোনো চেষ্টা না করে দল বেঁধে গ্রামবাসী কর্তৃক তাদের পিটিয়ে হত্যা করার মধ্যে অপরাধ প্রবণতার চারিত্রিক মিল অবশ্যই আছে।
আজকের দৈনিক সমকালেই মেঘনার জেলেদের ওপর একটি রিপোর্ট প্রথম পৃষ্ঠাতেই বের হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, নদীতে এখন প্রচুর মাছ ধরা পড়লেও জলদস্যু নিজাম ও তার গ্রুপের সদস্যদের চাঁদা পরিশোধ করতে না পারায় নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না শত শত জেলে। নিজাম ডাকাত বড় নৌকাপ্রতি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ ও ছোট নৌকাপ্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এই চাঁদা পরিশোধ করে জেলেদের 'নিজাম ডাকাত টোকেন' সংগ্রহ না করলে নদীতে গিয়ে তাদের মাছ ধরার উপায় নেই। নদীতে টহল পুলিশের কোনো কথা এ রিপোর্টে না থাকলেও জলদস্যুরা যে পুলিশের কাছ থেকে টাকা খেয়েই অবাধে তাদের দস্যুবৃত্তি করে থাকে এতে সন্দেহ নেই!
প্রতিদিনই নানা ধরনের অপরাধ দেশজুড়ে এমনভাবে ঘটছে যাতে এটা মনে করা স্বাভাবিক যে, দেশে আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। এ অবস্থা রীতিমতো আতঙ্কজনক। কিন্তু এর থেকেও আতঙ্কজনক ব্যাপার এই যে, এই পরিস্থিতি দ্রুতগতিতে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে, পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হচ্ছে। বাংলাদেশে এটা কেন ঘটছে এর কারণ অনুসন্ধান করলে সহজেই বোঝা যাবে, সরকার ও বিভিন্ন রাষ্ট্রযন্ত্রের অপরাধমূলক তৎপরতাই মূলত এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং এর অবনতি ঘটিয়ে চলেছে। বেপরোয়া ঘুষ, চুরি, দুর্নীতি থেকে নিয়ে খুন-জখম পর্যন্ত সবকিছুই এই প্রক্রিয়ার অন্তর্গত। মন্ত্রী, এমপি প্রমুখের দুর্নীতির ওপর রিপোর্ট নিয়মিতই প্রকাশিত হয়। আমলারাও এই দুর্নীতির বড় অংশীদার। দু'একদিন আগে জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, হুইপ, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য প্রমুখের আপ্যায়ন বাবদ বছরে কোটি কোটি টাকা খরচের একটা হিসাব বের হয়েছে। এতে দেখা যায়, তারা কে কত খরচ করবেন তার ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। ফুর্তির বশবর্তী হয়ে তারা যতই লাখ লাখ টাকা খরচ করুন তার কোনো বিরোধিতা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নেই। অন্য ধরনের দুর্নীতির কথা বাদ দিয়েও উচ্চতম পর্যায়ের এই আপ্যায়ন খরচও যে এক অবাধ দুর্নীতির ব্যাপার এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। এসবের সঙ্গে দেশে ক্রমবর্ধমান অপরাধের যোগ সম্পর্ক আছে। কিন্তু শারীরিক নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদির সঙ্গে যার যোগ সব থেকে বেশি তা হলো, পুলিশি নির্যাতন এবং পুলিশের নিজেরই অপরাধমূলক তৎপরতা। এই পুলিশের সঙ্গে সম্পর্কিত আছে র্যাবসহ বিভিন্ন ধরনের বাহিনী। পুলিশ যেখানে নাগরিকদের রক্ষকের ভূমিকা বাদ দিয়ে নিজেই তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ করে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে, সেখানে সমাজে অপরাধের বিস্তার যে অবাধে ঘটতে থাকবে এটা স্বাভাবিক।
পুলিশের অপরাধমূলক তৎপরতার সব থেকে বিপজ্জনক দিক হলো, প্রায়ই প্রকৃত অপরাধীকে ধরতে ব্যর্থ হয়ে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিয়ে নিরপরাধ লোককে অপরাধী সাজানোর জন্য নানা ক্রিমিনাল পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ। এটা কিছুদিন আগে লিমনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। আসল অপরাধীকে ছেড়ে দিয়ে তার মতো একজন নিরীহ ও নিরপরাধ ছাত্রকে গুলি করে তার পা নষ্ট করে দেওয়ার মতো অপরাধ যেখানে র্যাব নিজেই করে, সেখানে তার দ্বারা যে সাধারণ চোর, ডাকাত ও গুণ্ডারা উৎসাহিত হয়ে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে র্যাব-পুলিশের সহায়তায় আইনকে ফাঁকি দিয়ে নিজেরাও খুন-জখম করবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। লিমনের ব্যাপার নিয়ে দেশব্যাপী এত বিক্ষোভ ও লেখালেখি সত্ত্বেও র্যাব যে এখনও পর্যন্ত তাদের অপরাধমূলক অবস্থান থেকে একটুকুও নড়েনি, এটা অপরাধের জগৎ ভালোভাবেই লক্ষ্য করে। এর মধ্যেই তারা নিজেদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পায়। এ জন্য বাংলাদেশে এখন অপরাধের যত ঘটনা ঘটছে সেগুলো যে শুধু র্যাব-পুলিশের নিজেদের অপরাধমূলক তৎপরতা থেকে উৎসাহ লাভ করেই ঘটছে তাই নয়। এসব ঘটনার অধিকাংশই ঘটছে তাদের সঙ্গে সাধারণ অপরাধীদের যোগসাজশের মাধ্যমে অথবা অপরাধী পাকড়াও করার ক্ষেত্রে তাদের নিষ্ক্রিয়তার জন্য। এ সম্পর্কিত রিপোর্ট এখন সংবাদপত্রের পাতায় নিয়মিত ব্যাপার।
পুলিশ যে তাদের অপরাধমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভকে মোটেই পরোয়া করে না, এর প্রধান কারণ পুলিশের অপরাধের জন্য তাদের দ্রুত শাস্তি তো দূরের কথা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো শাস্তির ব্যবস্থা সরকারিভাবে করা হয় না। পুলিশ যেভাবে অপরাধীদের নিজেদের নাকের ডগায় অপরাধ চালিয়ে যেতে অনেক ক্ষেত্রেই সহায়তা করে, তেমনি সরকার আবার পুলিশের অপরাধের শাস্তির ব্যবস্থা তো দূরের কথা, তাদের শাস্তি থেকে বাঁচানোর চেষ্টাই করে থাকে। সরকার ও সরকারি লোকজন নিজেরা যেসব অপরাধ করে তার জন্য পুলিশের সাহায্য তাদের প্রয়োজন হয়। কাজেই পুলিশকে অপরাধের শাস্তি থেকে রক্ষা করা হয়ে দাঁড়ায় সরকারের দায়িত্ব!
পুলিশের অপরাধমূলক বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের এই মুহূর্তের এক দৃষ্টান্ত হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরকে ডাকাত বলে গ্রেফতার করে, তাকে নিজেদের হেফাজতে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করা। আবদুল কাদেরকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ও নিরপরাধ জেনেও পুলিশ যে এখনও তার বিরুদ্ধে মামলা তুলে না নিয়ে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করছে এটা স্বাভাবিক অবস্থায় সম্ভব নয়। এটা সম্ভব হচ্ছে বর্তমানে সরকারি ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় দেশজুড়ে এক অস্বাভাবিক অপরাধের পরিবেশ গড়ে ওঠার কারণে। একের পর এক সরকার যদি নানা ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতায় নিজেরা জড়িত না থাকত এবং অপরাধ দমনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করত, তাহলে এই পরিস্থিতি দেশে এভাবে সৃষ্টি হতো না। অপরাধের জগৎ দ্রুত বিস্তৃত হতে থাকা এবং চারদিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা দাঁড়াত না। একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি, গৃহবধূ নির্যাতন, ক্রমবর্ধমান হারে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন ১০-২০ জনের মৃত্যু, নদীতে জলদস্যুদের অবাধ অপরাধ, লিমন ও কাদেরের মতো ছাত্রের ওপর র্যাব-পুলিশের নির্যাতন একই অপরাধের সূত্রে গ্রথিত আছে। এবং এসব অপরাধের সঙ্গে গভীর যোগসূত্র আছে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকার ও রাষ্ট্রের অপরাধ দমন ক্ষেত্রে ব্যর্থতা তো বটেই, উপরন্তু তাদের নিজেদেরই নানা ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতার।
Tue, 02/08/2011 - 2:48pm | by Badruddin.Umar
লেবেলসমূহ:
সাম্প্রতিক বিষয়
এর দ্বারা পোস্ট করা
suMon azaD (সুমন আজাদ)
২৬জুন বদরগঞ্জে এক সালিস বৈঠকের নামে এক ফতোয়াবাজীর ঘটনায় হ্যাপী ও সাঈদাকে চরিত্রহীন অপবাদ দিয়ে প্রকাশ্যে তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। এরপর তাদের মাওলানা ডেকে এনে তওবা পড়ানো হয়। এই খবরটি বাংলাদেশের অনেক পত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এসেছে। টিভিতে প্রকাশ্যে দেখানো হয়েছে দুই নারীকে জনসমখ্যে লাঠি দিয়ে পিটানো হচ্ছে। গ্রামবাসী সবাই গোল হয়ে বসে প্রত্যক্ষ করেছেন এই সালিশের নামে অমানুষিক বর্বরতা। তারপর আবার যখন একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের রিপোর্টাররা সংবাদ সংগ্রহ করতে যায়, তখন বিচারকারী আয়নাল চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের মারধর করে অবরোদ্ধ করে রাখে।
কথা হচ্ছে একটি দেশে বিদ্ধমান আইন এবং বিচার ব্যবস্থা চলমান থাকা অবস্থায় কোনো একটি এলাকার প্রভাবশালীরা কিভাবে এবং কোন সাহসের আইন নিজেদের হাতে তুলে নেয়। আবার অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর, এতো মিডিয়ায় চলে আসার পর ঘটনার মূল হোতা আয়নাল চেয়ারম্যান কিভাবে ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকে? এই হোতাদের পরিচয় এবং বিচার কি বাংলাদেশে সম্ভব নয়? কথা হচ্ছে, জন প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা কেউই তো আইনের উর্ধ্বে নয়। তাই যারা বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর কাশীগঞ্জ গ্রামে সালিসের নামে ফতোয়া দিয়ে দুই নারীকে প্রকাশ্যে অমানুষিক নির্যাতন করেছে তারা হিংস্র পশুর সামিল। তাই তাদের দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হওয়া কি উচিত নয়? তা না হলে এ দেশের নারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতা ও হুমকির মধ্যে পড়বে। এ ধরনের অপরাধ প্রবনতা আরও বেড়ে যাবে।
হ্যাপি ও সাঈদাকে এখনও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা নিতে দেয়া হয়নি। তাদের বাজারে যেতে এবং পাড়া মহল্লায় কারও বাড়ি যাওয়ার বিষয়ে বিধি নিষেধ জারি করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে। নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে কিছু বললে তাদের সন্তানসহ আত্মীয় স্বজনদের হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। একটি সভ্য সমাজে এধরণের নির্যাতন কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থ করতে হবে। মূলহোতারা যত শক্তিশালীই হোকনা কেন তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনিছুল ইসলাম মন্ডল বলেছেন, 'এটা একটা ছোট ঘটনা। এর চেয়ে বড় ঘটনা দেশে ঘটছে।' তিনি বিষয়টিকে ছোট ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা কখনোই একজন জন প্রতিনিধির কাছ থেকে আশা করা যায়না। একজন জনপ্রতিনীধি যদি ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য এমন মন্তব্য করেন, তাহলে দেশে তো এ ধরণের ঘটনা দিনদিন বৃদ্ধিই পাবে। এমন ঘটনা অমানবিক। নারীর প্রতি চরম অবমাননা এবং নারী অগ্রগতির অন্তরায়। এর সঠিক এবং সুষ্ট বিচার সবাই কামনা করেন। ঘটনার মূল হোতা আয়নাল চেয়ারম্যানকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিতে হবে। সেই সাথে হ্যাপি ও সাইদার জীবনের নিরাপত্তা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
লেবেলসমূহ:
সাম্প্রতিক বিষয়
এর দ্বারা পোস্ট করা
suMon azaD (সুমন আজাদ)
চোখের ভেতর নোনাজলের আজব কারখানা
অঝরধারায় ঝরে পরে বাধা মানে না।
অঝরধারায় ঝরে পরে বাধা মানে না।
লেবেলসমূহ:
লিরিকস
এর দ্বারা পোস্ট করা
suMon azaD (সুমন আজাদ)
সিনেমা দেখার প্রতি আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু অনেক সময় সুযোগ ও সামর্থের অভাবে দেখতে পারিনি কাঙ্খিত সিনেমাগুলি। আজ যখন সুযোগ ও সামর্থ দুটাই আছে, তখন সময়টাকে নিজের করে পাওয়া কষ্টের হয়ে দাড়িয়েছে। তারপরও দেখা হয়। কিন্তু যা হয় না তা হল ব্লগারদের সাথে শেয়ার করা। চলুন তাহলে আজ সেই শেয়ারের কাজটা শেষ করে নেই আমার জন্মদিনটাকে সামনে রেখে।
সিনেমা দেখার প্রতি আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু অনেক সময় সুযোগ ও সামর্থের অভাবে দেখতে পারিনি কাঙ্খিত সিনেমাগুলি। আজ যখন সুযোগ ও সামর্থ দুটাই আছে, তখন সময়টাকে নিজের করে পাওয়া কষ্টের হয়ে দাড়িয়েছে। তারপরও দেখা হয়। কিন্তু যা হয় না তা হল ব্লগারদের সাথে শেয়ার করা। চলুন তাহলে আজ সেই শেয়ারের কাজটা শেষ করে নেই আমার জন্মদিনটাকে সামনে রেখে।
১০ দেশের ১০ পরিচালকের ১০টি সিনেমা
আসলে সিনেমা বাছাই করা বিরাট কাজ। ব্লগ থেকে যখন সিনেমা বিষয়ক পোস্টগুলো পড়ি তখন খুব অবাক হই এই ভেবে যে ব্লগাররা কি করে সিলেকশন করেন! ইংরেজি ভাষাভাষির সিনেমাগুলোর মধ্যে আমেরিকা অন্যতম। স্ট্যানলি কুবরিক, অরসন ওয়েলস, ক্লিন্ট ইস্টউড, মার্টিন স্কোরসেজি, ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা, ডি ডব্লিউ গ্রিফিথি, স্টিভেন স্পিলবার্গ, জেমস ক্যামেরন, উডি অ্যালেনদের থেকে কোনো একজনকে বেছে নেয়া অনেক মুশকিল। তাই ভাবলাম এদের নিয়ে আলাদাভাবে পোস্ট দেয়া যায় কি-না পরে দেখা যাবে। আপাতত এই পোস্টটা দেই-
সিনেমা দেখার আগে সংক্ষিপ্ত ভাবে একটু প্রস্তুতি নিয়ে নেয়া যাক।
মুভিগুলো ডাউনলোড করার জন্য আইডিএম ব্যবহার করতে পারেন। রোদন রহমানের এই পোস্ট থেকে প্যাচসহ ফাইলটা ডাউনলোড করে নিন। (বিঃ দ্রঃ প্যাচ আইডিএম ইন্সটল করলে কখনো আপডেট দিবেন না, তাহলে সারাজীবন চালাতে পারবেন!)
আর যারা মুভিগুলো অনলাইনে দেখবেন ভাবছেন আর মেগাভিডিও টাইপ সাইটগুলোর টাইম লিমিটেশন নিয়ে চিন্তিত, তারা এই সফ্টটা ইন্সটল করে ডেস্কটপে রেখে দিন আর নিশ্চিন্তে দেখতে থাকুন।
আমার দেয়া মুভি সাইটগু লো থেকে দেখতে বা নামাতে যদি কোনো প্রবলেম হয় তাহলে আরো বিভিন্ন সাইটগুলোর সাহায্য নিতে পুশকিন এর এই পোস্টটির সহায়তা নিতে পারেন।
যারা হার্ড কপির মাধ্যমে (ডিভিডি) মুভিগুলো দেখবেন ভাবছেন, তাদের জন্য আপাতত শুধু শুভ কামনা রইলো।
রাশিয়ান পরিচালক ও সিনেমা
Andrei Tarkovsky (আন্দ্রেই তার্কভ্স্কি)
(1932 - 1986)
Born April 4, Zavrazhe, Ivanono, Russia
সিনেমার গুরু থেকে শিশ্য মুটামুটি সবাই তার্কভস্কি’র নাম শুনেছে। প্রখ্যাত সোভিয়েত চলচ্চিত্র পরিচালক, লেখক এবং অপেরা পরিচালক।তিনি সর্বকালের সেরা ১০০ জন চলচ্চিত্র পরিচালকের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন ছলচিত্রের কবি। জীবন ও স্বপ্নের প্রতিফলন নির্মাণেই ছিল তাঁর নেশা। তার্কভ্স্কির করা সেরা সিনেমাগুলো হচ্ছে, আন্দ্রে রুবলেভ, সোলিয়ারিস, স্টকার এবং মিরর।পরিচালনার পাশাপাশি তার্কভ্স্কি চিত্রনাট্য রচনা, চলচ্চিত্রের তত্ত্ব প্রণয়ন এবং মঞ্চ পরিচালক হিসেবে সাফল্য অর্জন করেছেন। প্রায় সবগুলো সিনেমাই সোভিয়েত ইউনিয়নে নির্মাণ করেছেন। শুধু শেষ দুটি সিনেমা দেশের বাইরে করা। শেষ দুটি সিনেমা ইতালি ও সুইডেনে নির্মাণ করেছেন। তার চলচ্চিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল খ্রিস্টীয় আধ্যাত্মিকতা ও অধিবিদ্যাগত চিন্তাধারা, অতি দীর্ঘ দৃশ্যায়ন, সাধারণ সিনেমার মত নাটকীয় গঠন বা কাহিনীর অভাব এবং মনে রাখার মতো চিত্রগ্রহণ।
তাঁর উল্লেখ্যযোগ্য কিছু সিনেমাঃ
Ivan's Childhood (1962)*, Andrei Rublev (1966)*, Solaris (1972)*, Stalker (1979)* Worth a Look: The Mirror (1976)*, The Sacrifice (1986)* Approach with Caution: Nostalghia (1983)*
দি মিরর
সিনেমাটির বিষয় তার্কভস্কির ছেলেবেলা। তাই ঘটনার প্রতিফলন এবং বিগত স্বপ্নের ইমেজ তার্কভস্কির ক্যামেরায় কবিতার মত হয়ে ধরা দিয়েছে। তার্কভস্কি অবশ্য নিজে বলেছেন যে, মিররে নিজের ছেলেবেলা বিষয়ে কথা বলার কোনো আগ্রহ আমার ছিল না। আমি তাদের প্রতি আমার ফিলিং কী, তাদের সঙ্গে আমার রিলেশনশিপ কী.. এগুলোই চেয়েছি। তিনি তাঁর বাবার কবিতার মধ্য দিয়ে নিজেকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন তার ফেলে আসা সময়ের মাধ্যমে। যারা একটু সিম্বলিক সিনেমা পছন্দ করেন, কাব্যিকতা পছন্দ করেন, তারা ১৯৭৬ এ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি দেখতে পারেন।
(সিনেমার পরিচিতিতে যদি কাহিনী/রিভিউ চলে আসে, তাহলে সেই সিনেমা দেখার প্রতি আমার আগ্রহ কমে যায়। আমার মত হয়তো অনেকেই আছেন, তাই সেই বিষয়টি মাথায় রেখে পরিচিতি দেবো।)
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
ফরাসী সিনেমা ও পরিচালক
Robert Bresson (রবার্ট ব্রোসো)
(1901 - 1999 Born September 25)
Bromont-Lamothe, Puy-de-Dôme, Auvergne, France
ফ্রান্সের ভিন্নধারার রূপকার হচ্ছেন তিনি। যাকে চেনা যায় ‘এ ম্যান এস্কেপড’ সিনেমার পরিচালক হিসেবে। চলচিত্রে মেটাফর এর সবোর্কৃষ্ঠ ব্যবহার লক্ষ করা যায় রবার্ট ব্রোসো এর সিনেমায়। তিনি কাজ করতেন অপেশাদার অভিনেতা-অভিনেত্রিদের নিয়ে। রবার্ট ব্রোসো তাঁর নিজের কাজ সম্পর্কে বলেন, "My movie is born first in my head, dies on paper; is resuscitated by the living persons and real objects I use, which are killed on film but, placed in a certain order and projected on to a screen, come to life again like flowers in water." - Robert Bresson
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
Les Dames du Bois de Boulogne (1945)*, Diary of a Country Priest (1950)*, A Man Escaped (1956)*, Pickpocket (1959)*, Au hasard Balthazar (1966)*, Mouchette (1966)*, L'Argent (1983)* Les Anges du peche (1943), Trial of Joan of Arc (1962), Une Femme douce (1969), Four Nights of a Dreamer (1972), Lancelot du Lac (1974)*, The Devil Probably (1977)
এ ম্যান এস্কেপডঃ
সিনেমাটি আদ্রে দিভিগ নামক এক বন্দীর স্মৃতি নিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযদ্ধের সময় তাকে বন্দি করে রাখা হয় নার্সি জেলে। সেখান থেকে সে পালানোর চেষ্ঠা করে। যুদ্ধকালীন সময়ে কারাগারের ভেতরে এক বন্দি পালানোর চেষ্ঠা করছে। যুদ্ধের যে ভিন্ন প্রকাশ থাকতে পারে যুদ্ধ না দেখিয়েও এই ছবিটা তার প্রমাণ। যারা এডভেন্চার পছন্দ করেন, যারা করেন না, সবার জন্যই দেখার মত একটা মুভি। একজন্ পরিচালক কতটুকু পারফেক্টশনিস্ট হলে এমন মুভি বানাতে পারেন, এ ম্যান এস্কেপড না দেখলে বিশ্বাস হত না।
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
জাপানিজ সিনেমা ও পরিচালক
Akira Kurosawa (আকিরা কুরোসাওয়া)
1910 - 1998
Born March 23, Omori, Tokyo, Japan
আকিরা কুরোসাওয়াকে বলা হয় সবচেয়ে সফল শেক্সপিরিয়ান চলচ্চিত্রকার। আরেক পারফেকশনিস্ট। যুদ্ধ বিদ্ধস্ত তৎকালীন জাপানে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। তাই তার সিনেমার অনেকটা জুড়ে থাকে জাপানী ঐতিহ্য, শিল্প ও সংস্কৃতি নিয়ে নাটকীয় পরিবেশনা। আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের চিত্রায়ন তার ছবির অন্যতম আকর্ষণ। ১৯৯০ সালে কুরোসাওয়া তার সামগ্রিক সাফল্যের জন্য অস্কার পুরস্কার লাভ করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
Rashomon (1950)*, Ikiru (1952)*, The Seven Samurai (1954)*, Ran (1985)* Recommended: Drunken Angel (1948), Stray Dog (1949)*, Throne of Blood (1957)*, The Hidden Fortress (1958), High and Low (1963)*, Dodes'ka-den (1970) Worth a Look: One Wonderful Sunday (1947), The Quiet Duel (1949)**, The Idiot (1951), I Live in Fear (1955), The Lower Depths (1957), The Bad Sleep Well (1960), Yojimbo (1961)*, Sanjuro (1962), Red Beard (1965)*, Dersu Uzala (1975)*, Kagemusha (1980)*, Akira Kurosawa's Dreams (1990), Rhapsody in August (1990), Madadayo (1993)
রশোমনঃ
এক সামুরাই যোদ্ধা নিহত হয়। তার নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ একজনকে ধরে। আদালতের কাছে এই খুনের ঘটনা বর্ণনা করে ৩ জন। এই ৩ জন আবার বর্ণনা করে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। অথাৎ একটা রহস্য তৈরি হয় হত্যাকান্ড নিয়ে। অনেকটা বুদ্ধিদীপ্ত এবং রহস্যময় সিনেমা হল রশোমন।
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
ইরানি সিনেমা ও পরিচালকঃ
Majid Majidi (মাজিদ মাজিদি)
April 17, 1959, Tehran, Iran.
ইরানের চলচ্চিত্রের কথা উঠলেই যার নাম মনে পড়ে তিনি হলেন, আব্বাস কিরোস্তামি। কিন্তু এছাড়াও ইরানি সিনেমায় আরো যারা প্রাণপুরুষ তাদের মধ্যে মাজিদ মাজিদি অন্যতম। মাজিদির যে বৈশিষ্টের কারণে তিনি বিখ্যাত তা হল কম সংলাপ ব্যবহার করে ক্যামেরার ভাষায় কথা বলার প্রবণতা। মাজিদি সবচেয়ে বেশী পরিচিতি লাভ করেন অস্কার মনোনয়নপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘চিলড্রেন অফ হেভেন’ এর জন্য। সেই বছর বিদেশী ভাষার সিনেমা গ্রুপে ইতালির রবার্তো বেনিনির ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ পুরস্কার জিতে নেয়।
১৯৭৯ সালে ইরানী বিপ্লবের পর চলচ্চিত্রের দিকে আগ্রহী মাজিদ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করা শুরু করেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া মোহসেন মাখমালবাফের ‘বয়কট’ । তিনি শিশুতোষ ও দৃশ্যপ্রধান সিনেমা তৈরি করে থাকেন। তাঁর সিনেমায় তিনি কাহিনীকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে একের পর এক সিম্বল এর খেলা খেলতে থাকেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
father(1996), God will come (1996), Children of Heaven (1997), The color of paradise (1999), Baran (2001), The willow tree (2005), The song of sparrows (2008),
দি কালার অব প্যারাডাইজঃ
মাজিদির ‘চিল্ড্রেন অব হেভেন’ চমৎকার এবং অনেক চর্চিত একটি সিনেমা। তাই একটু সরে তাঁর দি কালার অফ প্যারাডাইজ এর কথা বলছি। যদিও এটাও কম চর্চিত এবং অবলোকিত নয়। মাজিদ মাজিদির এই "The Color of Paradise" ছবিটি পরিচয় করিয়ে দেয় শিশুদের ইনোসেন্স আর ভাগ্য ও মানবতার পরিহাসের সাথে। ছবিটি আরো সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে সুন্দর অভিনয় আর শৈল্পিকতার কারনে। মাজিদ মাজিদিকে আমার ভাল লাগে তার ক্যামেরার মাধ্যমে কথা বলার ধরণের কারণে। সিনেমা হচ্ছে ভিজুয়াল মাধ্যম, সেখানে কথার পাশাপাশি দৃশ্যগুলোও যদি কথা হয়ে ফুটে উঠে না তাহলে কি হয়? এই মুভিটি নিয়ে অনেক ব্লগার লিখেছেন, তাই আর আলাদা করে লিখছি না। তবে শেষ দৃশ্যের পিতা পুত্রের যে সিম্বলিক টেক নিয়েছেন মাজিদ মাজিদি, তা মনে দাগ কেটে যায়।
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
ইতালিয় সিনেমা ও পরিচালক
Vittorio de Sica (ভিত্তোরিও দে সিকা)
1902 - 1974 Born July 7, Sora, Latium, Italy
বলতে চেয়েছিলাম আমার অনেক প্রিয় সিনেমা রবার্তো বেনিনির ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ এর কথা। কিন্তু শরীরের কথা বলার আগে যিনি মানুষের আত্মাকেও ভিডিও করতে পারেন তার কথা বলা দরকার। চরম বাস্তবতা দিয়েও শিল্প সৃষ্টি করা যায়, কিন্তু তা কতটা কালোর্ত্তীন হয় জানা না থাকলেও সমস্যা নেই। “বাইসাইকেল থিফ” (১৯৪৮) সেই উদাহরণ নিয়ে আছো সিনেমাপ্রেমিদের মনে গেথে আছে। ইতালিয়ান সিনেমায় অভিনেতাদের অভিনয়ের মহিমা আর পরিচালকদের মুন্সিয়ানার সূত্রপাত ভিত্তোরিওদের হাত ধরেই। ভিত্তোরী দে সিকা ইতালিয়ান নিওরিয়েলিজম আন্দোলনের একজন অগ্রনায়ক।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
The Children Are Watching Us (1944), Bicycle Thieves (1948)*, Umberto D. (1952)* Shoeshine (1946)*, Two Women (1960) Worth a Look: Miracle in Milan (1951)*, The Gold of Naples (1954), The Condemned of Altona (1962), The Garden of the Finzi-Continis (1971) Duds: Indiscretion of an American Wife (1953)
বাইসাইকেল থিফ
১৯৪৮ এর ইতালির এক চাকুরীহীন পিতা এন্টনি রিচ্চি (ল্যাম্বার্তো মাজিওরানি)। বহু কস্ট করে এক চাকরী জোগাতে পারল । কিন্তু চাকরীর একমাত্র শর্ত, সাইকেল থাকা লাগবে । আর্থিক দৈনদশার মাঝে সাইকেল কিভাবে পাবে সে! সাইকেল ক্রয় এবং পরে সেই সাইকেল হারিয়ে যাওয়া এবং পিতাপুত্র মিলে খুঁজতে থাকা; ঘটনাটা শুধু এভাবে হলে সাধারণই ছিল, কিন্তু এর নিমার্ণ যে হয়েছে ভিত্তোরীর হাতে। তা কি আর সাধারণ হতে পারে? তাই এই খোঁজা পর্বটাই ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়ে গেছে!
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
স্প্যানিস সিনেমা ও পরিচালক
PEDRO ALMODÓVAR (পাদ্রো আলমোডোভার)
25 September 1949
Calzada de Calatrava, Ciudad Real, Spain
অস্কার জয়ী স্প্যানিশ চলচিত্র পরিচালক। সাধারণত য়ৌন নান্দনিকতাকে কেন্দ্র করে সিনেমা বানিয়ে থাকেন। তাঁর সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্প্যানিস পরিচালক তিনি। কমপ্লেক্স নেরোটিভ ও ম্যালোডামা নিয়ে কাজ করেন বেশী। সাইকোসেক্সোয়াল থ্রিলারধর্মী সিনেমার জন্য তিনি ‘স্প্যানিশ হিচকক’ নামে পরিচিত।
আরো কিছু সিনেমাঃ
Matador (1986, Sp.), La Ley del Deseo/Law of Desire (1987, Sp.), Women on the Verge of a Nervous Breakdown (1988, Sp.), ¡Átame!/Tie Me Up! Tie Me Down! (1990, Sp.), Tacones Lejanos/High Heels (1991, Sp.), Kika (1993, Sp.), La Flor de Mi Secreto/The Flower of My Secret (1995, Sp.), Carne Trémula/Live Flesh (1997, Sp.), Todo Sobre Mi Madre/All About My Mother (1999, Sp.), Hable Con Ella/Talk to Her (2002, Sp.), La Mala Educación (2004, Sp.) (aka Bad Education), Volver (2006, Sp.), Broken Embraces/Los Abrazos Rotos (2009, Sp.).
ম্যাটাডোর
তার উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে ‘ম্যাটাডোর’ অন্যতম। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েই এই সিনেমাটা দেখেছিলাম। এখন মনে দাগ কেটে আছে। সাইকো থ্রিলারধর্মী এই সিনেমাটি পাদ্রো আলমোডোভার অনন্য সৃষ্টি।
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
পোলিশ সিনেমা ও পরিচালক
Billy Wilder (বিলি ওয়াইল্ডার)
1906 - 2002 Born June 22, Sucha beskidzka, Poland
অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বছর তিনি চলচ্চিত্র জগতের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাকে হলিউড স্বর্ণযুগের অন্যতম প্রভাবশালী ও কৃতী চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে অভিহিত করা হয়। ওয়াইল্ডারের অনেক ছবিই দর্শক ও সমালোচকদের কাছে বিপুল প্রশংসিত হয়েছে। শক্তিশালী চিত্রনাট্য ও পরিপূর্ণ কাহিনীকে গুরুত্ব দিতেন বিলি ওয়াইল্ডার। রাজনীতির ও সমাজের বদলে তিনি ছিলেন মানব সচেতন। গতানুগতিক বিনোদনের মধ্যেও তিনি শিল্পের জন্ম দিয়েছিলেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
Five Graves to Cairo (1943), Double Indemnity (1944)*^, The Lost Weekend (1945)^, Sunset Blvd. (1950)*^, Ace in the Hole (1951)*^
সাম লাইক ইট হট
বিলি ওয়াইল্ডার পরিচালিত কমেডি চলচ্চিত্র, যা ১৯৫৯ সালে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটির প্রধান চরিত্রে অবিনয় করেছেন মেরিলিন মনরো, টোনি কার্টিস এবং জ্যাক লেমন। রবার্ট থিওরেন ও মাইকেল লোগানের একটি ছোটগল্প অবলম্বনে এর চিত্রনাট্য লিখেছেন যৌথভাবে বিলি ওয়াইল্ডার ও আই এ এল ডায়মন্ড। লোগান এর আগেই একটি জার্মান চলচ্চিত্রের জন্য তার গল্পটি লিখেছিলেন। সেই জার্মান চলচ্চিত্রটির নাম ছিল ফানফারেন ডের লিবে (Fanfaren der Liebe)। তবে সেই কাহিনীতে কোন গ্যাংস্টার ছিল না। অনেকে অবশ্য এ কারণেই ওয়াইল্ডারের এই চলচ্চিত্রকে রিমেক (remake) বলে আখ্যায়িত করেন।
ফরাসি কমেডি চলচ্চিত্র লা কাজ ও ফল (La Cage aux Folles)-এর বিশ্বব্যাপী সাফল্যের পর ইউনাইটেড আর্টিস্ট্স ১৯৮১ সালে চলচ্চিত্রটি পুনরায় নিমার্ণ করে। ২০০০ সালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট সাম লাইক ইট হট-কে সর্বকালের সেরা মার্কিন কমেডি চলচ্চিত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে। এই ছবিতে মেরিলিন মনরোর মনকাড়া অভিনয় আর সৌন্দর্য্য দেখার মত!
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
ব্রিটিশ সিনেমা ও পরিচালক
Alfred Hitchcock (আলফ্রেড হিচকক)
1899 – 1980
Born August 13, Leytonstone, London, England
চলচ্চিত্র ইতিহাসে তাকেই প্রথম থ্রিলার কিংবা ভৌতিক ছবির সফল ও আধুনিক রূপকার ধরা হয় । আজও তার মুভি গুলো দর্শক, সমালোচকদের চিন্তার খোরাক জোগায় । হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়া মুভি গুলোর আবেদন আজও বিন্দুমাত্র কমেনি । তিনি ১৯৬০ সালে বিখ্যাত মনোজাগতিক বিকৃতি বিষয়ক চলচ্চিত্র সাইকো নির্মাণ করেন যা বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তবে সেরা পরিচালক হিসেবে কখনই একাডেমি পুরস্কার পাননি হিচকক। তার ১৯৪০ সালের মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার রেবেকা সেরা চিত্র হিসেবে একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিল। তার করা এটিই একমাত্র চলচ্চিত্র যা সেরা চিত্রের পুরস্কার জয় করে। ড্যাফনে দ্যু মঁরিয়ের বিখ্যাত উপন্যাস রেবেকা অবলম্বনেই এটি নির্মাণ করেছিলেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
The 39 Steps (1935)*, Rebecca (1940)*, Shadow of a Doubt (1943)*#, Notorious (1946)*#, Strangers on a Train (1951)*#, Rear Window (1954)*, Vertigo (1958)*, North by Northwest (1959)*, Psycho (1960)*, The Birds (1963)*, Marnie (1964)* The Lodger (1926), Rich and Strange (1932), The Man Who Knew Too Much (1934), Sabotage (1936), The Lady Vanishes (1938)*, Foreign Correspondent (1940), Mr. & Mrs. Smith (1941), Suspicion (1941)#, Saboteur (1942), Lifeboat (1944), Spellbound (1945)#, Rope (1948), I Confess (1953), Dial M for Murder (1954), To Catch a Thief (1955), The Man Who Knew Too Much (1956), The Wrong Man (1956)*#, Frenzy (1972), Family Plot (1976)
সাইকো
'দ্য মোমেন্ট অব সাইকো' উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয় 'সাইকো'। উপন্যাসের লেখক মন্তব্য করেছিলেন, 'যে কোনো আমেরিকান থ্রিলারধর্মী ছবির জন্য এর প্রতিটি উত্তেজক দৃশ্য একেকটি নির্দেশনা হয়ে থাকবে। এটা ছবির জগতটা পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।' যারা থ্রিলার পছন্দ করেন তাদের কাছে সাইকো ছবির দৃশ্যগুলো সেই রকম লাগবে।
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
চেকোস্লোভাকিয়ার সিনেমা ও পরিচালক
Milos Forman (মিলশ ফরমান)
1932 - Born February 18, Cáslav, Czechoslavakia
মিলশ ফরমানকে পৃথিবী মনে রাখবে দু’টা মুভির জন্য; ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কুকুস নেস্ট এবং আমাদেউস। মিউজিক প্রিয় মানুষ এবং যারা মিউজিক নিয়ে কাজ করেন তারা মোৎজার্ট কি জানেন। আর তাঁর স্রষ্টাকে নিয়ে কাজ করার সাহস কেমন সাহসীর থাকতে পারে, তা ও জানেন। চেকোস্লোভাকিয়ান এই পরিচালক ৩বার অস্কার মনোনিত হয়ে ২বারই অর্জন, ৪বার প্লোব এওয়ার্ড এ মনোনীত হয়ে ৩বার, ২বার কান এর জন্য মনোনীত হযে ১বার পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর সিনেমার নামের পাশে পুরস্কার হিসাবটা দেখলে মনে হয় তিনি বুঝি সিনেমা বানান পুরস্কার নেয়ার জন্যই! আর সেই পুরস্কারের সাথে থাকে দর্শকদের পূর্ন সমর্থন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
Loves of a Blonde (1965)*, Taking Off (1971), One Flew Over the Cuckoo's Nest (1975)* The Firemen's Ball (1967)*, The People vs. Larry Flynt (1996) Worth a Look: Black Peter (1964), Hair (1979), Ragtime (1981), Amadeus (1984)*, Man on the Moon (1999)
ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কুকুস নেস্ট
মিশেল ফকোর ম্যাডনেস এন্ড সিভিলাইজেশন থেকে একজনই পালাতে পেরেছিল- ‘ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কুকুস নেস্ট’ অনেকদিন মনে থাকার মত সিনেমা। একজন পূর্বে, আরেকজন পশ্চিমে যায়- কিন্তু পূর্ব-পশ্চিম সবদিকেই দাড়িয়ে থাকে সমাজ। পালিয়ে যায় একজন, সমাজ ছেড়ে দূরে কোথাও।
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
ইন্ডিয়ান সিনেমা ও পরিচালক
Satyajit Ray (সত্যজিৎ রায়)
1921 - 1992 Born May 2,
Calcutta, West Bengal, India
সত্যজিৎ এর ক্লোজ-আপ এর মাধ্যমে মানুষের মুখমণ্ডলে মানবতা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন। তার “অপু ত্রয়ী” সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্ল্যাসিকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। সত্যজিৎ পুরো একটি দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের মেরুদণ্ড নির্মাণ করেছেন। পরিচালনা, চিত্রনাট্য, আবহ সঙ্গীত, চিত্রগ্রহণ, পোস্টার তৈরী, শিল্প নির্দেশনা সব দিকেই ছিলেন সমান পারদর্শী।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
Aparajito (1956)*, The Music Room (1958)*, The World of Apu (1959)*, Charulata (1964)* Recommended: Pather Panchali (1955)*, Kanchenjungha (1962), The Big City (1963), Days and Nights in the Forest (1969)*, Distant Thunder (1973), Pikoor Diary [TV] (1981) Worth a Look: Devi (1960), Two Daughters (1961), Siddhartha and the City (1970), The Home and the World (1984)**, The Branches of the Tree (1990)
পথের পাঁচালী
কাশবনের ভেতর দিয়ে রেল দেখার জন্য অপু ও দূর্গার দৌড়ে যাওয়া কিংবা পুকুরে ছুড়ে ফেলা সেই ঢিল; যারা দেখেননি তারা এর কোনো অর্থই খুঁজে পাবেন না।
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
....................................................................................
সিনেমা দেখার প্রতি আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু অনেক সময় সুযোগ ও সামর্থের অভাবে দেখতে পারিনি কাঙ্খিত সিনেমাগুলি। আজ যখন সুযোগ ও সামর্থ দুটাই আছে, তখন সময়টাকে নিজের করে পাওয়া কষ্টের হয়ে দাড়িয়েছে। তারপরও দেখা হয়। কিন্তু যা হয় না তা হল ব্লগারদের সাথে শেয়ার করা। চলুন তাহলে আজ সেই শেয়ারের কাজটা শেষ করে নেই আমার জন্মদিনটাকে সামনে রেখে।
১০ দেশের ১০ পরিচালকের ১০টি সিনেমা
আসলে সিনেমা বাছাই করা বিরাট কাজ। ব্লগ থেকে যখন সিনেমা বিষয়ক পোস্টগুলো পড়ি তখন খুব অবাক হই এই ভেবে যে ব্লগাররা কি করে সিলেকশন করেন! ইংরেজি ভাষাভাষির সিনেমাগুলোর মধ্যে আমেরিকা অন্যতম। স্ট্যানলি কুবরিক, অরসন ওয়েলস, ক্লিন্ট ইস্টউড, মার্টিন স্কোরসেজি, ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা, ডি ডব্লিউ গ্রিফিথি, স্টিভেন স্পিলবার্গ, জেমস ক্যামেরন, উডি অ্যালেনদের থেকে কোনো একজনকে বেছে নেয়া অনেক মুশকিল। তাই ভাবলাম এদের নিয়ে আলাদাভাবে পোস্ট দেয়া যায় কি-না পরে দেখা যাবে। আপাতত এই পোস্টটা দেই-
সিনেমা দেখার আগে সংক্ষিপ্ত ভাবে একটু প্রস্তুতি নিয়ে নেয়া যাক।
মুভিগুলো ডাউনলোড করার জন্য আইডিএম ব্যবহার করতে পারেন। রোদন রহমানের এই পোস্ট থেকে প্যাচসহ ফাইলটা ডাউনলোড করে নিন। (বিঃ দ্রঃ প্যাচ আইডিএম ইন্সটল করলে কখনো আপডেট দিবেন না, তাহলে সারাজীবন চালাতে পারবেন!)
আর যারা মুভিগুলো অনলাইনে দেখবেন ভাবছেন আর মেগাভিডিও টাইপ সাইটগুলোর টাইম লিমিটেশন নিয়ে চিন্তিত, তারা এই সফ্টটা ইন্সটল করে ডেস্কটপে রেখে দিন আর নিশ্চিন্তে দেখতে থাকুন।
আমার দেয়া মুভি সাইটগু লো থেকে দেখতে বা নামাতে যদি কোনো প্রবলেম হয় তাহলে আরো বিভিন্ন সাইটগুলোর সাহায্য নিতে পুশকিন এর এই পোস্টটির সহায়তা নিতে পারেন।
যারা হার্ড কপির মাধ্যমে (ডিভিডি) মুভিগুলো দেখবেন ভাবছেন, তাদের জন্য আপাতত শুধু শুভ কামনা রইলো।
রাশিয়ান পরিচালক ও সিনেমা
Andrei Tarkovsky (আন্দ্রেই তার্কভ্স্কি)
(1932 - 1986)
Born April 4, Zavrazhe, Ivanono, Russia
সিনেমার গুরু থেকে শিশ্য মুটামুটি সবাই তার্কভস্কি’র নাম শুনেছে। প্রখ্যাত সোভিয়েত চলচ্চিত্র পরিচালক, লেখক এবং অপেরা পরিচালক।তিনি সর্বকালের সেরা ১০০ জন চলচ্চিত্র পরিচালকের মধ্যে অন্যতম। তিনি ছিলেন ছলচিত্রের কবি। জীবন ও স্বপ্নের প্রতিফলন নির্মাণেই ছিল তাঁর নেশা। তার্কভ্স্কির করা সেরা সিনেমাগুলো হচ্ছে, আন্দ্রে রুবলেভ, সোলিয়ারিস, স্টকার এবং মিরর।পরিচালনার পাশাপাশি তার্কভ্স্কি চিত্রনাট্য রচনা, চলচ্চিত্রের তত্ত্ব প্রণয়ন এবং মঞ্চ পরিচালক হিসেবে সাফল্য অর্জন করেছেন। প্রায় সবগুলো সিনেমাই সোভিয়েত ইউনিয়নে নির্মাণ করেছেন। শুধু শেষ দুটি সিনেমা দেশের বাইরে করা। শেষ দুটি সিনেমা ইতালি ও সুইডেনে নির্মাণ করেছেন। তার চলচ্চিত্রের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল খ্রিস্টীয় আধ্যাত্মিকতা ও অধিবিদ্যাগত চিন্তাধারা, অতি দীর্ঘ দৃশ্যায়ন, সাধারণ সিনেমার মত নাটকীয় গঠন বা কাহিনীর অভাব এবং মনে রাখার মতো চিত্রগ্রহণ।
তাঁর উল্লেখ্যযোগ্য কিছু সিনেমাঃ
Ivan's Childhood (1962)*, Andrei Rublev (1966)*, Solaris (1972)*, Stalker (1979)* Worth a Look: The Mirror (1976)*, The Sacrifice (1986)* Approach with Caution: Nostalghia (1983)*
দি মিরর
সিনেমাটির বিষয় তার্কভস্কির ছেলেবেলা। তাই ঘটনার প্রতিফলন এবং বিগত স্বপ্নের ইমেজ তার্কভস্কির ক্যামেরায় কবিতার মত হয়ে ধরা দিয়েছে। তার্কভস্কি অবশ্য নিজে বলেছেন যে, মিররে নিজের ছেলেবেলা বিষয়ে কথা বলার কোনো আগ্রহ আমার ছিল না। আমি তাদের প্রতি আমার ফিলিং কী, তাদের সঙ্গে আমার রিলেশনশিপ কী.. এগুলোই চেয়েছি। তিনি তাঁর বাবার কবিতার মধ্য দিয়ে নিজেকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন তার ফেলে আসা সময়ের মাধ্যমে। যারা একটু সিম্বলিক সিনেমা পছন্দ করেন, কাব্যিকতা পছন্দ করেন, তারা ১৯৭৬ এ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি দেখতে পারেন।
(সিনেমার পরিচিতিতে যদি কাহিনী/রিভিউ চলে আসে, তাহলে সেই সিনেমা দেখার প্রতি আমার আগ্রহ কমে যায়। আমার মত হয়তো অনেকেই আছেন, তাই সেই বিষয়টি মাথায় রেখে পরিচিতি দেবো।)
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
ফরাসী সিনেমা ও পরিচালক
Robert Bresson (রবার্ট ব্রোসো)
(1901 - 1999 Born September 25)
Bromont-Lamothe, Puy-de-Dôme, Auvergne, France
ফ্রান্সের ভিন্নধারার রূপকার হচ্ছেন তিনি। যাকে চেনা যায় ‘এ ম্যান এস্কেপড’ সিনেমার পরিচালক হিসেবে। চলচিত্রে মেটাফর এর সবোর্কৃষ্ঠ ব্যবহার লক্ষ করা যায় রবার্ট ব্রোসো এর সিনেমায়। তিনি কাজ করতেন অপেশাদার অভিনেতা-অভিনেত্রিদের নিয়ে। রবার্ট ব্রোসো তাঁর নিজের কাজ সম্পর্কে বলেন, "My movie is born first in my head, dies on paper; is resuscitated by the living persons and real objects I use, which are killed on film but, placed in a certain order and projected on to a screen, come to life again like flowers in water." - Robert Bresson
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
Les Dames du Bois de Boulogne (1945)*, Diary of a Country Priest (1950)*, A Man Escaped (1956)*, Pickpocket (1959)*, Au hasard Balthazar (1966)*, Mouchette (1966)*, L'Argent (1983)* Les Anges du peche (1943), Trial of Joan of Arc (1962), Une Femme douce (1969), Four Nights of a Dreamer (1972), Lancelot du Lac (1974)*, The Devil Probably (1977)
এ ম্যান এস্কেপডঃ
সিনেমাটি আদ্রে দিভিগ নামক এক বন্দীর স্মৃতি নিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযদ্ধের সময় তাকে বন্দি করে রাখা হয় নার্সি জেলে। সেখান থেকে সে পালানোর চেষ্ঠা করে। যুদ্ধকালীন সময়ে কারাগারের ভেতরে এক বন্দি পালানোর চেষ্ঠা করছে। যুদ্ধের যে ভিন্ন প্রকাশ থাকতে পারে যুদ্ধ না দেখিয়েও এই ছবিটা তার প্রমাণ। যারা এডভেন্চার পছন্দ করেন, যারা করেন না, সবার জন্যই দেখার মত একটা মুভি। একজন্ পরিচালক কতটুকু পারফেক্টশনিস্ট হলে এমন মুভি বানাতে পারেন, এ ম্যান এস্কেপড না দেখলে বিশ্বাস হত না।
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
জাপানিজ সিনেমা ও পরিচালক
Akira Kurosawa (আকিরা কুরোসাওয়া)
1910 - 1998
Born March 23, Omori, Tokyo, Japan
আকিরা কুরোসাওয়াকে বলা হয় সবচেয়ে সফল শেক্সপিরিয়ান চলচ্চিত্রকার। আরেক পারফেকশনিস্ট। যুদ্ধ বিদ্ধস্ত তৎকালীন জাপানে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। তাই তার সিনেমার অনেকটা জুড়ে থাকে জাপানী ঐতিহ্য, শিল্প ও সংস্কৃতি নিয়ে নাটকীয় পরিবেশনা। আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের চিত্রায়ন তার ছবির অন্যতম আকর্ষণ। ১৯৯০ সালে কুরোসাওয়া তার সামগ্রিক সাফল্যের জন্য অস্কার পুরস্কার লাভ করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
Rashomon (1950)*, Ikiru (1952)*, The Seven Samurai (1954)*, Ran (1985)* Recommended: Drunken Angel (1948), Stray Dog (1949)*, Throne of Blood (1957)*, The Hidden Fortress (1958), High and Low (1963)*, Dodes'ka-den (1970) Worth a Look: One Wonderful Sunday (1947), The Quiet Duel (1949)**, The Idiot (1951), I Live in Fear (1955), The Lower Depths (1957), The Bad Sleep Well (1960), Yojimbo (1961)*, Sanjuro (1962), Red Beard (1965)*, Dersu Uzala (1975)*, Kagemusha (1980)*, Akira Kurosawa's Dreams (1990), Rhapsody in August (1990), Madadayo (1993)
রশোমনঃ
এক সামুরাই যোদ্ধা নিহত হয়। তার নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ একজনকে ধরে। আদালতের কাছে এই খুনের ঘটনা বর্ণনা করে ৩ জন। এই ৩ জন আবার বর্ণনা করে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। অথাৎ একটা রহস্য তৈরি হয় হত্যাকান্ড নিয়ে। অনেকটা বুদ্ধিদীপ্ত এবং রহস্যময় সিনেমা হল রশোমন।
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
ইরানি সিনেমা ও পরিচালকঃ
Majid Majidi (মাজিদ মাজিদি)
April 17, 1959, Tehran, Iran.
ইরানের চলচ্চিত্রের কথা উঠলেই যার নাম মনে পড়ে তিনি হলেন, আব্বাস কিরোস্তামি। কিন্তু এছাড়াও ইরানি সিনেমায় আরো যারা প্রাণপুরুষ তাদের মধ্যে মাজিদ মাজিদি অন্যতম। মাজিদির যে বৈশিষ্টের কারণে তিনি বিখ্যাত তা হল কম সংলাপ ব্যবহার করে ক্যামেরার ভাষায় কথা বলার প্রবণতা। মাজিদি সবচেয়ে বেশী পরিচিতি লাভ করেন অস্কার মনোনয়নপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘চিলড্রেন অফ হেভেন’ এর জন্য। সেই বছর বিদেশী ভাষার সিনেমা গ্রুপে ইতালির রবার্তো বেনিনির ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ পুরস্কার জিতে নেয়।
১৯৭৯ সালে ইরানী বিপ্লবের পর চলচ্চিত্রের দিকে আগ্রহী মাজিদ বিভিন্ন চলচ্চিত্রে অভিনয় করা শুরু করেন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া মোহসেন মাখমালবাফের ‘বয়কট’ । তিনি শিশুতোষ ও দৃশ্যপ্রধান সিনেমা তৈরি করে থাকেন। তাঁর সিনেমায় তিনি কাহিনীকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে একের পর এক সিম্বল এর খেলা খেলতে থাকেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
father(1996), God will come (1996), Children of Heaven (1997), The color of paradise (1999), Baran (2001), The willow tree (2005), The song of sparrows (2008),
দি কালার অব প্যারাডাইজঃ
মাজিদির ‘চিল্ড্রেন অব হেভেন’ চমৎকার এবং অনেক চর্চিত একটি সিনেমা। তাই একটু সরে তাঁর দি কালার অফ প্যারাডাইজ এর কথা বলছি। যদিও এটাও কম চর্চিত এবং অবলোকিত নয়। মাজিদ মাজিদির এই "The Color of Paradise" ছবিটি পরিচয় করিয়ে দেয় শিশুদের ইনোসেন্স আর ভাগ্য ও মানবতার পরিহাসের সাথে। ছবিটি আরো সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে সুন্দর অভিনয় আর শৈল্পিকতার কারনে। মাজিদ মাজিদিকে আমার ভাল লাগে তার ক্যামেরার মাধ্যমে কথা বলার ধরণের কারণে। সিনেমা হচ্ছে ভিজুয়াল মাধ্যম, সেখানে কথার পাশাপাশি দৃশ্যগুলোও যদি কথা হয়ে ফুটে উঠে না তাহলে কি হয়? এই মুভিটি নিয়ে অনেক ব্লগার লিখেছেন, তাই আর আলাদা করে লিখছি না। তবে শেষ দৃশ্যের পিতা পুত্রের যে সিম্বলিক টেক নিয়েছেন মাজিদ মাজিদি, তা মনে দাগ কেটে যায়।
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
ইতালিয় সিনেমা ও পরিচালক
Vittorio de Sica (ভিত্তোরিও দে সিকা)
1902 - 1974 Born July 7, Sora, Latium, Italy
বলতে চেয়েছিলাম আমার অনেক প্রিয় সিনেমা রবার্তো বেনিনির ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’ এর কথা। কিন্তু শরীরের কথা বলার আগে যিনি মানুষের আত্মাকেও ভিডিও করতে পারেন তার কথা বলা দরকার। চরম বাস্তবতা দিয়েও শিল্প সৃষ্টি করা যায়, কিন্তু তা কতটা কালোর্ত্তীন হয় জানা না থাকলেও সমস্যা নেই। “বাইসাইকেল থিফ” (১৯৪৮) সেই উদাহরণ নিয়ে আছো সিনেমাপ্রেমিদের মনে গেথে আছে। ইতালিয়ান সিনেমায় অভিনেতাদের অভিনয়ের মহিমা আর পরিচালকদের মুন্সিয়ানার সূত্রপাত ভিত্তোরিওদের হাত ধরেই। ভিত্তোরী দে সিকা ইতালিয়ান নিওরিয়েলিজম আন্দোলনের একজন অগ্রনায়ক।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
The Children Are Watching Us (1944), Bicycle Thieves (1948)*, Umberto D. (1952)* Shoeshine (1946)*, Two Women (1960) Worth a Look: Miracle in Milan (1951)*, The Gold of Naples (1954), The Condemned of Altona (1962), The Garden of the Finzi-Continis (1971) Duds: Indiscretion of an American Wife (1953)
বাইসাইকেল থিফ
১৯৪৮ এর ইতালির এক চাকুরীহীন পিতা এন্টনি রিচ্চি (ল্যাম্বার্তো মাজিওরানি)। বহু কস্ট করে এক চাকরী জোগাতে পারল । কিন্তু চাকরীর একমাত্র শর্ত, সাইকেল থাকা লাগবে । আর্থিক দৈনদশার মাঝে সাইকেল কিভাবে পাবে সে! সাইকেল ক্রয় এবং পরে সেই সাইকেল হারিয়ে যাওয়া এবং পিতাপুত্র মিলে খুঁজতে থাকা; ঘটনাটা শুধু এভাবে হলে সাধারণই ছিল, কিন্তু এর নিমার্ণ যে হয়েছে ভিত্তোরীর হাতে। তা কি আর সাধারণ হতে পারে? তাই এই খোঁজা পর্বটাই ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়ে গেছে!
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
স্প্যানিস সিনেমা ও পরিচালক
PEDRO ALMODÓVAR (পাদ্রো আলমোডোভার)
25 September 1949
Calzada de Calatrava, Ciudad Real, Spain
অস্কার জয়ী স্প্যানিশ চলচিত্র পরিচালক। সাধারণত য়ৌন নান্দনিকতাকে কেন্দ্র করে সিনেমা বানিয়ে থাকেন। তাঁর সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্প্যানিস পরিচালক তিনি। কমপ্লেক্স নেরোটিভ ও ম্যালোডামা নিয়ে কাজ করেন বেশী। সাইকোসেক্সোয়াল থ্রিলারধর্মী সিনেমার জন্য তিনি ‘স্প্যানিশ হিচকক’ নামে পরিচিত।
আরো কিছু সিনেমাঃ
Matador (1986, Sp.), La Ley del Deseo/Law of Desire (1987, Sp.), Women on the Verge of a Nervous Breakdown (1988, Sp.), ¡Átame!/Tie Me Up! Tie Me Down! (1990, Sp.), Tacones Lejanos/High Heels (1991, Sp.), Kika (1993, Sp.), La Flor de Mi Secreto/The Flower of My Secret (1995, Sp.), Carne Trémula/Live Flesh (1997, Sp.), Todo Sobre Mi Madre/All About My Mother (1999, Sp.), Hable Con Ella/Talk to Her (2002, Sp.), La Mala Educación (2004, Sp.) (aka Bad Education), Volver (2006, Sp.), Broken Embraces/Los Abrazos Rotos (2009, Sp.).
ম্যাটাডোর
তার উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে ‘ম্যাটাডোর’ অন্যতম। ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েই এই সিনেমাটা দেখেছিলাম। এখন মনে দাগ কেটে আছে। সাইকো থ্রিলারধর্মী এই সিনেমাটি পাদ্রো আলমোডোভার অনন্য সৃষ্টি।
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
পোলিশ সিনেমা ও পরিচালক
Billy Wilder (বিলি ওয়াইল্ডার)
1906 - 2002 Born June 22, Sucha beskidzka, Poland
অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বছর তিনি চলচ্চিত্র জগতের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাকে হলিউড স্বর্ণযুগের অন্যতম প্রভাবশালী ও কৃতী চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে অভিহিত করা হয়। ওয়াইল্ডারের অনেক ছবিই দর্শক ও সমালোচকদের কাছে বিপুল প্রশংসিত হয়েছে। শক্তিশালী চিত্রনাট্য ও পরিপূর্ণ কাহিনীকে গুরুত্ব দিতেন বিলি ওয়াইল্ডার। রাজনীতির ও সমাজের বদলে তিনি ছিলেন মানব সচেতন। গতানুগতিক বিনোদনের মধ্যেও তিনি শিল্পের জন্ম দিয়েছিলেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
Five Graves to Cairo (1943), Double Indemnity (1944)*^, The Lost Weekend (1945)^, Sunset Blvd. (1950)*^, Ace in the Hole (1951)*^
সাম লাইক ইট হট
বিলি ওয়াইল্ডার পরিচালিত কমেডি চলচ্চিত্র, যা ১৯৫৯ সালে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটির প্রধান চরিত্রে অবিনয় করেছেন মেরিলিন মনরো, টোনি কার্টিস এবং জ্যাক লেমন। রবার্ট থিওরেন ও মাইকেল লোগানের একটি ছোটগল্প অবলম্বনে এর চিত্রনাট্য লিখেছেন যৌথভাবে বিলি ওয়াইল্ডার ও আই এ এল ডায়মন্ড। লোগান এর আগেই একটি জার্মান চলচ্চিত্রের জন্য তার গল্পটি লিখেছিলেন। সেই জার্মান চলচ্চিত্রটির নাম ছিল ফানফারেন ডের লিবে (Fanfaren der Liebe)। তবে সেই কাহিনীতে কোন গ্যাংস্টার ছিল না। অনেকে অবশ্য এ কারণেই ওয়াইল্ডারের এই চলচ্চিত্রকে রিমেক (remake) বলে আখ্যায়িত করেন।
ফরাসি কমেডি চলচ্চিত্র লা কাজ ও ফল (La Cage aux Folles)-এর বিশ্বব্যাপী সাফল্যের পর ইউনাইটেড আর্টিস্ট্স ১৯৮১ সালে চলচ্চিত্রটি পুনরায় নিমার্ণ করে। ২০০০ সালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট সাম লাইক ইট হট-কে সর্বকালের সেরা মার্কিন কমেডি চলচ্চিত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে। এই ছবিতে মেরিলিন মনরোর মনকাড়া অভিনয় আর সৌন্দর্য্য দেখার মত!
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
ব্রিটিশ সিনেমা ও পরিচালক
Alfred Hitchcock (আলফ্রেড হিচকক)
1899 – 1980
Born August 13, Leytonstone, London, England
চলচ্চিত্র ইতিহাসে তাকেই প্রথম থ্রিলার কিংবা ভৌতিক ছবির সফল ও আধুনিক রূপকার ধরা হয় । আজও তার মুভি গুলো দর্শক, সমালোচকদের চিন্তার খোরাক জোগায় । হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়া মুভি গুলোর আবেদন আজও বিন্দুমাত্র কমেনি । তিনি ১৯৬০ সালে বিখ্যাত মনোজাগতিক বিকৃতি বিষয়ক চলচ্চিত্র সাইকো নির্মাণ করেন যা বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তবে সেরা পরিচালক হিসেবে কখনই একাডেমি পুরস্কার পাননি হিচকক। তার ১৯৪০ সালের মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার রেবেকা সেরা চিত্র হিসেবে একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিল। তার করা এটিই একমাত্র চলচ্চিত্র যা সেরা চিত্রের পুরস্কার জয় করে। ড্যাফনে দ্যু মঁরিয়ের বিখ্যাত উপন্যাস রেবেকা অবলম্বনেই এটি নির্মাণ করেছিলেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
The 39 Steps (1935)*, Rebecca (1940)*, Shadow of a Doubt (1943)*#, Notorious (1946)*#, Strangers on a Train (1951)*#, Rear Window (1954)*, Vertigo (1958)*, North by Northwest (1959)*, Psycho (1960)*, The Birds (1963)*, Marnie (1964)* The Lodger (1926), Rich and Strange (1932), The Man Who Knew Too Much (1934), Sabotage (1936), The Lady Vanishes (1938)*, Foreign Correspondent (1940), Mr. & Mrs. Smith (1941), Suspicion (1941)#, Saboteur (1942), Lifeboat (1944), Spellbound (1945)#, Rope (1948), I Confess (1953), Dial M for Murder (1954), To Catch a Thief (1955), The Man Who Knew Too Much (1956), The Wrong Man (1956)*#, Frenzy (1972), Family Plot (1976)
সাইকো
'দ্য মোমেন্ট অব সাইকো' উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয় 'সাইকো'। উপন্যাসের লেখক মন্তব্য করেছিলেন, 'যে কোনো আমেরিকান থ্রিলারধর্মী ছবির জন্য এর প্রতিটি উত্তেজক দৃশ্য একেকটি নির্দেশনা হয়ে থাকবে। এটা ছবির জগতটা পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।' যারা থ্রিলার পছন্দ করেন তাদের কাছে সাইকো ছবির দৃশ্যগুলো সেই রকম লাগবে।
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
চেকোস্লোভাকিয়ার সিনেমা ও পরিচালক
Milos Forman (মিলশ ফরমান)
1932 - Born February 18, Cáslav, Czechoslavakia
মিলশ ফরমানকে পৃথিবী মনে রাখবে দু’টা মুভির জন্য; ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কুকুস নেস্ট এবং আমাদেউস। মিউজিক প্রিয় মানুষ এবং যারা মিউজিক নিয়ে কাজ করেন তারা মোৎজার্ট কি জানেন। আর তাঁর স্রষ্টাকে নিয়ে কাজ করার সাহস কেমন সাহসীর থাকতে পারে, তা ও জানেন। চেকোস্লোভাকিয়ান এই পরিচালক ৩বার অস্কার মনোনিত হয়ে ২বারই অর্জন, ৪বার প্লোব এওয়ার্ড এ মনোনীত হয়ে ৩বার, ২বার কান এর জন্য মনোনীত হযে ১বার পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর সিনেমার নামের পাশে পুরস্কার হিসাবটা দেখলে মনে হয় তিনি বুঝি সিনেমা বানান পুরস্কার নেয়ার জন্যই! আর সেই পুরস্কারের সাথে থাকে দর্শকদের পূর্ন সমর্থন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
Loves of a Blonde (1965)*, Taking Off (1971), One Flew Over the Cuckoo's Nest (1975)* The Firemen's Ball (1967)*, The People vs. Larry Flynt (1996) Worth a Look: Black Peter (1964), Hair (1979), Ragtime (1981), Amadeus (1984)*, Man on the Moon (1999)
ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কুকুস নেস্ট
মিশেল ফকোর ম্যাডনেস এন্ড সিভিলাইজেশন থেকে একজনই পালাতে পেরেছিল- ‘ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কুকুস নেস্ট’ অনেকদিন মনে থাকার মত সিনেমা। একজন পূর্বে, আরেকজন পশ্চিমে যায়- কিন্তু পূর্ব-পশ্চিম সবদিকেই দাড়িয়ে থাকে সমাজ। পালিয়ে যায় একজন, সমাজ ছেড়ে দূরে কোথাও।
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
ইন্ডিয়ান সিনেমা ও পরিচালক
Satyajit Ray (সত্যজিৎ রায়)
1921 - 1992 Born May 2,
Calcutta, West Bengal, India
সত্যজিৎ এর ক্লোজ-আপ এর মাধ্যমে মানুষের মুখমণ্ডলে মানবতা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন। তার “অপু ত্রয়ী” সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্ল্যাসিকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। সত্যজিৎ পুরো একটি দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের মেরুদণ্ড নির্মাণ করেছেন। পরিচালনা, চিত্রনাট্য, আবহ সঙ্গীত, চিত্রগ্রহণ, পোস্টার তৈরী, শিল্প নির্দেশনা সব দিকেই ছিলেন সমান পারদর্শী।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাঃ
Aparajito (1956)*, The Music Room (1958)*, The World of Apu (1959)*, Charulata (1964)* Recommended: Pather Panchali (1955)*, Kanchenjungha (1962), The Big City (1963), Days and Nights in the Forest (1969)*, Distant Thunder (1973), Pikoor Diary [TV] (1981) Worth a Look: Devi (1960), Two Daughters (1961), Siddhartha and the City (1970), The Home and the World (1984)**, The Branches of the Tree (1990)
পথের পাঁচালী
কাশবনের ভেতর দিয়ে রেল দেখার জন্য অপু ও দূর্গার দৌড়ে যাওয়া কিংবা পুকুরে ছুড়ে ফেলা সেই ঢিল; যারা দেখেননি তারা এর কোনো অর্থই খুঁজে পাবেন না।
অনলাইনে দেখার জন্য
ডাউনলোড করার জন্য
টরেন্ট নামানোর জন্য
....................................................................................
লেবেলসমূহ:
চলচ্চিত্র