‘পরম্পরা’ কবিতার শুর“তে একটা নিয়মের পরম্পরা লক্ষ্য করা যায়। মাত্রার
নিয়ম মেনে প্রতি চরণে অন্তমিল; আমাদের কবিতায় ছন্দের অর্থাৎ মাত্রার
প্রাচুর্য এবং বাধ্যবাদকতা আর তার মান্যকাল কিংবা আজ্ঞাবহকালের কথা
মনে করিয়ে দেয়। যখন অন্তমিলকে-ই অনেক কবিতা-প্রেমি মতান্তরে কবিতা-
শাসকরা মনে করতেন আসল জিনিস অর্থাৎ ‘প্রকৃত কবিতা’।
ফেরার ই”েছ প্রবল রোমান্টিক আবহের প্রতীকি বিন্যাস। বিষয়ে, ভাষার
উপলব্ধিতে, বর্ণনায়- এই সময়ের কবিতা।
ফে.ই- কবিতার প্রথম পংক্তি যদি কবির নিজের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে ভাব ঠিক
আছে শুধু যতি চিহ্নের সমস্যা ছাড়া। কেননা, কবি নিজেকে এড্রেস করলে
কমা ব্যবহার করবেন কেন? আর যদি সার্বজনিন করতে চান অর্থাৎ কথক নিজে
হয়ে পাঠককে এড্রেস করা তাহলে ঝামেলা হয়ে গেল। তৃতীয় স্ট্রোঞ্জায় নিজের
উপ¯ি’তি কবিতাটিতে ভাবকে এলোমেলো করে দিয়ে কবিতা হওয়ার পক্ষেই অš
—রায় হয়ে দাঁড়াল! সুরীন্দ্রনাথ ছন্দ সম্পর্কে সেই যে উক্তি করেছিলেন,
সাধারণত, মাত্রা ঠিক রাখতে এবং ছন্দে থাকতে একটা অভ্যাস গড়ে তুললেই
লাভবান হওয়া যায়। আর সেই অভ্যাসটা হ”েছ শব্দ বিন্যাসের বিজোড়ে
বিজোড় গাঁথ, জোরে গাঁথ জোড়। এর ফলে গদ্যরীতির কবিতায় অক্ষবৃত্তের
ছন্দত মুক্তক ছন্দ সাবলিল হয়ে উঠল।
কবিতা পড়ছি আর লক্ষ্য করছি, “এই রীতি ভর করেছে মামুনের কবিতায়।
কিš‘ তিনি হয়ত ঠিক করেছেন ব্যাকরণ জেনে লিখবেন না। যার ফলে ই”ছায় কি
অনি”ছায় ছন্দ্র পতন হ”েছ। অবশ্য একে মাত্রা পতন-ই বলা ভাল। যদিও ব্যাকরণ
মেনে লিখা কবির একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। আর আমি মনে করি না প্রকৃত
কবিতার জন্য এটা কোন ফ্যাক্টর।
“যেটা শিকার”- শারীরিক আবহের কবিতা। মাত্র দুটি উদ্বৃতিতে
কবিতাটি রচিত হয়েছে। প্রথমটির কথক কবি নিজে। দ্বিতীয়টি নিজেই
চিহ্নিত করে দিয়েছেন। ফ্রয়েডের লিবিডো যখন প্রভাব বিস্তার করছে তখন
কবি অন্য ঠোঁটের গীতিকাব্য আকঁলেন জ্বলজ্যান্ত ভাষায়
“তারার ফসিলে কোনদিন
অমাবস্যা পেলে
ডেকে নিও রাতের গুহায়।
তবে এই কবিতাতেও আবার সেই কথক বিরম্বনা কথকের এলোমেলো বিস্ত
ারে কবি না পাঠক বিভ্রান্ত প্রশ্নসাপেক্ষ।
তার অনেকগুলো কবিতাতেই সঞ্চারী পড়ে মনে হয়েছে এগুলোই সব, আর
কিছর দরকার নেই। অনেক ক্ষেত্রে কবিতার ভেতরে প্রবেশের পূর্বের মনে হয়েছে
বাকীগুলো বোধহয় বিস্তার। তার সঞ্চারীগুলোর দু’বার আবেদন আমাকে
এমনটা ভাবতে বাধ্য করেছে।
স্যাটায়ার ধর্মী কবিতা হ”েছ গিয়ে দুগ্ধবতী সিরিজের শেষ কবিতা। এই ৩
নাম্বার কবিতাটিতে ব্যাঙ্গের স্বার্থকতা প্রকাশ পেয়েছে
“ প্রান্তরে দাহ দাহ আগুন শাসনে
গাঙ্গেয় অববাহিকা ভূগোলের হিসাব খাতায়
বিশ্বের তৃতীয় বধূ, দুগ্ধবতী হয়।”(দ্র“ত)
এখানে পিতার আদলে অভিভাবক দেশগুলোর চরিত্র চিত্রন তাদের দাদাগিরির
ছাপচিত্র। সুন্দরভাবে অংকিত হয়েছে। পোষ্ট কলোনিয়াল চিন্তা।
“আমরা..............কিনে যাই” স্যাটায়ারের মধ্যে নিজেদের অপ্রাপ্তি ও
ব্যর্থতার নিরঙ্কুশ প্রকাশ মনে করিয়ে দেয় পূর্ববর্তী প্রজন্মের একটি
শক্তিশালী বৈশিষ্টের কথা। আর অসঙ্কোচ আত্ম-উন্মোচন-ই ছিল নব্বই দশকের
কবিকূলের উলেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যের সাথে কাজী নাসির মামুনের
কবিতার স্বার্থকতা কোথায়? খুঁজলে সহজেই চোখে পড়ে, “সাহসী আত্ম
বিশেষন” প্রক্রিয়াটি। নাসির কবিতাকে “আমরা” শব্দটির ব্যবহার করে
তাকে দিয়েছেন সার্বজনীনতার আস্বাদ আর প্রতিনিধত্ব করেছেন শূণ্য
দশকের সকলের। নিজেদের উন্মোচন করেই ক্ষান্ত হননি, বিশেষণ করেছেন ব্যক্তির
সহজাত স্বার্থকতার। মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন, দাঁড় করিয়েছেন- মিরর
অফ মাইন্ড (মান্ড মিররের)। সেলফ জাজমেন্ট এর।
“আর এই মান্ড মিররের দেখা পাওয়া যায় কবির পরবর্তী কবিতা,
আত্মকামে আমার........... আমার” এ। কবিাতর প্রথম পংক্তি “আয়না লাবণ্য
ধরে আমার ছায়ার।”
ছন্দ পতন কিংবা মাত্রার হিসেবের গড়মিল রয়েছে এমন অভিযোগ
উপ¯’াপন করতে চাইলে সব কবিতার দিকে হাত না বাড়িয়ে একটা কবিতা
থেকেই দেখানো যাবে, যেমন- “বসন্তে মায়ের কথার ফুলঝুড়ি” কবিতাটি
অক্ষরবিত্ত ছন্দের। আর অক্ষরবিত্ত ছন্দে শব্দের প্রথম যুগ্ম ধ্বনি একমাত্রার মূল্য
পায়। আর সেই হিসেবে- একদিন/সলতে/ভাসতে/ছিঁড়ে যায়। মাত্রা কিংবা
ছন্দ প্রসঙ্গ আসত না যদি না কাজী নাসির মামুনের কবিতায় ঐ
প্রবণতাটা না থাকত। কথা হ”েছ নিয়ম না মানলে নাই, কিš‘ মেনে যদি ভুল
থাকে তা কি একজন কবির জন্য দুঃখজনক নয়? সেখানে শূণ্য দশকের
পতাকাবাহীদের মধ্যে তিনি একজন।
প্রাণি প্রার্থনা
লাটিম তাড়িত বালক
ঃ কিশোর বা কৈশোরিক।
সঞ্চিত সোলক
ঃ বুক বা যুবতী মেয়েরা।
গোপন অহম
ঃ মাস্টারবেশনে আগ্রহী করে তুলে এমন কিছু।
সময়সড়ক
ঃ সেশনজত
গতির বাইজি
ঃ সময়/বয়স
বোতল
ঃ যৌনাঙ্গ।
তরলবন্দিজিন
ঃ প্রজননের উপাদান
সচল স্পপেজ
ঃ শুয়ে থাকা।
ফেরারি গোলাপ ঃ গণিকা
শৃগাল চতুর
ঃ শেয়ালের কুমির শাবল ভক্ষণের কৌশল/এক জিনিস বারবার
দেখিয়ে ঠকানো।
হাইরোগিফিক্স ঃ
কুকুরী- প্রচলিত অর্থ খুঁজলে ভয়াবহ অর্থ দাঁড়ায়। কিছু লুপ্ত অর্থ
বুঝতে পারলে হৃদয়ে চিন করে উঠবে।
“কুকুরীর জন্য সংবেদনা”- এই একটি কবিতার আলোচনা লিখেই মনে হয় দিস্তার পর দিস্তা শেষ করা যাবে। এই প্রসঙ্গে বুঃ বসুর কথা মনে পড়ছে। তিনি ১৯৪০ সালে......................। এখন বদ্ধদেব বসু থাকলে বলা যে, দ্যাখেন
বস, বাউলা সাহিত্যে একজন কবি আবারো রোমান্টিক আবহে প্রেমের
কবিতা অত্যন্ত সাহসের সাথে প্রথম কাব্যগ্রন্তেই সন্নিবেশ করেছেন।
পারলে এই কবিতাটিকে “লখিন্দরের গান” থেকে বাদ দেন তো কিংবা সমগ্র
প্রেমবাহিত কবিার ইতিহাস থেকে বাদ দিয়ে দ্যাখেন তো। কেন জানি আজ
কবিতাটি নিয়ে গর্ব করতে ই”েছ হ্েচছ। (আবেগী উ”চারণ)
পতনে কালিন্দি নিশায় ঃ
১। অতিরিক্ত যাতচিহ্ন দৃশ্যে বেঘাত ঘটায়। অনেকের ফরমেটে স্বরবৃত্ত ছন্দের
অনেকটাই দুর্বল বিস্তার।
২। নারী দেহের বর্ণনায় আগ্রাসনের পুরনো আখ্যান রূপকের আশ্রয়ে
প্রতিপাদ্য হয়ে উঠে।
৩। উপনিবেশিক শাসব ব্যব¯’া ও উত্তর উপনিবেশিক চিন্তার সঞ্চার ঘটেছে
(১) অংশে। কিš‘ ঐ আাচর স্বরবৃত্তের আদলে থাকতে গিয়ে অন্তমিল আর অমিল
অনেকটা অগোছালো করে তুলেছি কবিতাটির অংশ বিশেষকে।
ডাহুক সয়েছি ক্ষয়....
(৮+৬) স্তবকের ১৮ মাত্রার প্রচলিত সনেটগু”ছ। কাজী নাসির মানুষের কবিতা
পড়ে মনে হয় পেটার্ন গত কোন বৈচিত্র্যের প্রতি তেমন একটা নিরীক্ষাপ্রবণ
নন তিনি। আর প্রচলিত ব্যাকরণীয় অনুসঙ্গ বিনিমার্নের প্রতি খুব একটা
ঝোঁক নেই। তবে নিয়মে থাকার একটা সাধারণ প্রবণতা ঠিকই আছে। তবে
এ-ও সত্য নিকটবর্তী দশকের দার্শনিক বি”িছন্নতা, প্রতিষ্ঠান মুখি
হওয়া না হওয়ার দোদুল্যমানতা, কবিতার সামাজিকরণ নিয়ে নিজেদের মধ্যে
তৈরী হওয়া কনট্রাডিকশন (১) বাংলাদেশেও ক্ষীণ ও ধীর পদ্ধতিতে এই রণকৌশল
গ্রহণ করেছেন প্রতিষ্ঠান বিরোধী নব্বইয়ের কবিগণ। এটা শুভ লক্ষণ ও সঠিক
কৌশল। কেননা, কবিতার আস্বাদ গ্রহণের অধিকার সকল পাঠকের। “যেহেতু
কবিতার আস্বাদ গ্রহণের অধিকার সকলের আছে বলে নব্বইয়ের অনেক কবিদের
বিশ্বাস তাই কবিতার ভাষাও বোধ সকলের গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা ছিল। কিš‘
তারা তা করেন নি। শিল্প অসম্মত মৌলিক কবিতাকে আপতঃদৃষ্টিতে দুর্বোধ্য
ও দুরূহ বলে মনে হত। কোনো মৌলিক কবিতা অন্তদৃষ্টি সম্পন্নতার কারণে
সাধারণের কাছে অদ্ভূত ও দুর্বোধ্য বলে মনে হতেই পারে।” আর তার পক্ষে
যুক্তি হিসেবে উপ¯’াপন করা হয়েছে র্যাঁেধা সুচীন্দ্রনাথদের কথা। কিš‘
তথাগত প্রাতিষ্ঠানিক কাগজের গতানুগতিক ধারার পাঠকরা র্যাঁধো
সুধীন্দ্র পড়েন না। আর কন্ট্রাডিকশনটা এখানেই। এক দিকে সকলের কাছে
পৌঁছার জন্য রণ কৌশলে পরিবর্তনে অজুহাত অন্যদিকে দুর্বোধতা। যার
ফলে বিভক্তি ও কাব্যিক বি”িছন্নতা ছিল নব্বইয়ের সাধারণ ব্যাপার।
বি”িছন্ন নিরীক্ষার ফলে ¯’ায়িত্ব পায়নি কোন আলাদা বৈশিষ্ট্যের কবিতা
ধারা। আর যে লোকজধারার ব্যবহার নব্বইয়ের কবিতায় নতুন এসেছে বলে মনে
করা হয়, তার জবাব পাওয়া যায় আল মাহমুদ, ওমর আলী, রফিক আজাদের কবিতার
দিকে তাকালে। সবচেয়ে বড় কথা রাজনৈতিক উদাসীনতার ফলে মৌলবাদের
প্রশ্রয় ও বেরে উঠার অন্তরায় হিসেবে কোন শক্তিশালী আদর্শিক বৈশিষ্ট
দাঁড় করতে না পারা। এটা মূলত ঘটেছে প্রতিষ্ঠানের দ্বার¯’ হয়ে একাই থানায়
সবাই মিলে খাবার গ্রহণের ফলে।
আর পূর্ববর্তী দশকের কিংবা সহযাত্রী অগ্রজনের প্রভাব ও ভাবের নিজস্ব স্বাতন্ত্রে জন্য। শূণ্য দশকের অনেককে অত্রিম করতে হয়েছে সংশয়ী সময়কাল। যারা একটু সময় নিয়ে বই প্রকাশ করেছেন আমার মনে হয় তারাই
ভালোবাসি দানবের মতো/অভ্রভেদী পাখি
প্রিমিটিভিজম এর উদাহরণ।
“নদী” কবিতাটি আশির দশকের প্রকরণ সবর্স কবিতার গন্ধমাখা।
কৈশোরিক ও যৌবনের স্মৃতি আক্রান্ত ভাবাবেগ ভরা। যা কবিতার চেয়ে
বিবৃতির সংমিশ্রণ, অন্যান্য কবিতার বৈশিষ্ট্যের সাথে ঠিক যায় না।
তেমনি যায় না স্বববৃত্ত ছন্দের অন্তমিলের প্রতি মনোযোগী কবিতাগুলো
(কুমুরের ফুল হয়ে আয় ইত্যাদি)।
কবিতার প্রতি একজন কবির প্রেম নিজের উরসের মত। অনেক ক্ষেত্রেই
স্মৃতিতাড়িত, মানবিক দুর্বলতা অতিক্রম করে কবিতা নির্বাচন সম্ভব হয়
না। ফলে শূণ্যের একজন উলেখযোগ্য থেকে গুর“ত্বর্পূ হয়ে উঠা কবিকেও
সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।
অন্তমিল ও সনেটের প্রতি ঝোক বেশী কাজী নাসির মামুনের। অথচ তা যদি মাত্রাগত কিংবা পংক্তিগত কিংবা স্তবকে বৈচিত্র থাকতো তাহলে মেনে নেয়া যেত। একমাত্র শব্দের গুপ্তাব¯’া ও বিষয়ের কেন্দ্রিকীকরণ উপর ভর দিয়ে ভাব-কবিতার তরীখানা কতদূরই বা নেয়া সম্ভব?
হুমায়ূন আজাদ কবিদের তিনটি ভাগে ভাগ করে ছিলেন আর তা হল...........
মামুন যতিচিহ্নের ব্যাপারে আগ্রহী। আর তার এই আগ্রহ বহুত নিয়ে
প্রকাশ পেয়েছে প্রচলিত সনেটরীতির ক্ষেত্রে।
তার সিরিজ কতিবাগুলোতে একটি ্রবণতা লক্ষ্য করা যায় তা হল সিরিজের
বিন্যাসে ডিসকনটিনিটি অর্থাৎ অধারাবাহিকতা। কনটিনিটি ভাঙ্গা
যদিও পোস্ট-মডার্ন মন মানসিকতার বৈশিষ্ট্য, তবে তা যদি হয় একই
কবিতার ক্ষেত্রে। কিš‘ এখানে কবি সিরিজে বিন্যাসে এমনটা করলেন কেন,
ভাববার বিষয়। এখানে কবিতার ডিসকনটিনিটি গ্রš’টা ধরা দি”েছ
বিপরীতার্থে। কবির ভিন্ন সময়ে লিখিত (সম্ভবত) এলামেলো চিন্তার
ধারাবাহিক প্রতি¯’াপন হিসেবে সিরিজের নির্মাণ অনেকটা আরোপিত
প্রস্তাবের নমুনা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
কাজী নাসির সম্পর্কে একটি অ¯’ায়ী এবং ভাব বিস্তারী মন্তব্য করা যায় এমন যে, “এই কবি নিয়ম ভাঙ্গার কোন নিয়ম নিয়ে কাব্য জগতে আসেন নি পক্ষান্তরে নিয়মের বাহিরে যাবারও যেতন একটা প্রয়াস চালান নি। শুধু মেধার পূরণ ঘটাতে চেয়েছে প্রথম বইটিতে।
শব্দ নির্মাণে আগ্রহী কবি আরো একটি দিকে এগিয়েছে ডিসকভার এর
নেশায় আর তা হল ইরোটিসিজম। যৌনতার ক্রিফটগ্রাফিক নির্মাণ, শূণ্য
দশকের উত্থানশীল কবিতার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের উলেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে
নিঃসন্দেহে আলোচিত হবে।
“লখিন্দরের গান” সিরিজের সনেটের প্যাটার্ন কবিতাটির বিষয়ব¯‘র আবহের
সাথে মিলানোর প্রয়াস মনে হয়েছে পোস্ট-কলনিয়াল কনসেপ্টে বিষয়কে ঐ
বিষয়ের প্রেক্ষিতে দেখা এবং সাবরটার্নকে গুর“ত্ব দেয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়।
কিš‘ পরবর্তীতে ডিসকনটিনিটি বিশেষত সিরিজহ বিস্তারে অন্য
ভাবনায় ফেলে দেয়। তাহলে কি প্যাটার্ন নির্মাণে আদো কবির তেন আবহ
তৈরীর ই”েছ কাজ করে নি শুধু আমার নিজস্ব ভাবনা।
লখিন্দরের গান পড়ে ভাবছিলাম বেহুলার কথা। যেন এমন আর কি, আজও বাড়ি ফেরা
হল া। এজন্য দুঃখ নেই। শুধু কথা থাকে বেড়ালটা আজো দরজার কাছে বসে
থাকবে। অর্থাৎ যন্ত্রিকতার বাহিরের অনূভব। যেন তারপরও তার কথা মনেপড়ে
টাইপ কিছু। অনেকটা মহিলাদের মেটার্নটি বু-কালীন সময়ের মত। মাতৃ
ত্বের নীল সময়ে অযাচিত দুঃখবোধে কেঁদে উঠে হৃদয়।
মিয়া বাড়ির বৈঠক খানায় যজ্ঞ বুড়ির গালগল্প পড়ে রঙধনুর সাত বড় হাতের
মুঠোয় পাওয়া মানে পাউয়ার এর আধিপত্যের কথা মনে পড়ল। আর মনে পড়ল
মিশেল ফুকোর পাউয়ার থিউরিটি। যা মানুষকে শাসন করে মানসিক শারীকি
ও রীতি প্রকৃতির মাধ্যমে।
নব্বইয়ের কবিরা ভেবেছিলেন, সুখ তাদের একান্ত বিষয় তা কখনোই
সামাজিক নয়। সমাজ সভ্যতার রাজনীত কিংবা বিশ্বের সাথে এর কোন
সংশিষ্টতা নেই। কিš‘ শূণ্য এখন পর্যন্ত মনে হ”েছ এই ভাবনাটির সাথে
একাত্ত নয়। কেননা বিষয়িক বৈচিত্রতা আত্ম-সমালোচনা তাও যদি পোস্ট
কলনিয়াল ভাবধারার আবর্তিত হয়।
নব্বইয়ের যে সকল কবিতা এখনও সমান সক্রিয় এবং প্রতিস্ঠিত নিজস্ব
স্বরে কবিতা চর্চা করে বলেছেন মূলত তাদের প্রেক্ষিতেই শূণ্যের ভিক্তিকরণ।
যারা অতি কিংবা এখনও নিজের স্বরটি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন নি সঙ্গত
কারণে তাদেরকে আলোচনায় না আনাটাই যুক্তিযুক্ত। কারণ সচরাচর প্রতিষ্ঠিত
নিজস্ব স্বরেই কবিতা অব্যাহত রাখেন কবিরা।
পিতার সৌধের নিজে ভূমিষ্ঠ কুকুর
নাম লিকে নিজেদের
তবে সুখ কোন মহিষের নাম?
ভরসার মাতৃত্বকোড়ে প্রলোভন অবশিষ্ট থাকে।
ত.স.কো.ম.না
রাজনৈতিক মহত্বের বলি, জাতির পিতা ও তার বলিদান, আমরা আজ জনে জনে
জানি। গজিয়ে উঠা পরগাছারা আজ বিরাট মহিরূহ সমান। নিজেদের নাম
এরা ইতিহাসে ই”েছ মত উঠা”েছ, মুছে দি”েছ।
দেশের আর্তসামাজিক প্রেক্ষাপট অতীত ইতিহাস, ইতিহাসের কলঙ্ক ও সেই
কলঙ্কের শেকড়সহ পুনর“ত্থান সবকিছু চমৎকার ভাবে উঠে এসেছে। “তবে
সুখ....... কবিতায়। উত্থানশীল কবিতার বৈশিষ্ট্য ধারণ করে ক্রিপ্টোগ্রাফি
রচনায় স্বাক্ষর রেখেছেন কাজী নাসির মামুন।
শূন্য দশকে এসে আবার হৃদয়তাড়িত অনুভূতিগুলো গভীর সিম্ফোনী নিয়ে
কবিদের লেখায় জেগে উঠছে। আর সঙ্গত কারণেই তা ক্রিপ্টোগ্রাফিকভাবে।
অনুভূতি ধরা দি”েছ অনেকটা মেনেলা সিনেমার সেই শেষ সংলাপের মত
“আমি এই জীবনে অনেক মেয়েদের সাথে মিশেছি। অনেককেই ভাল লেগেছে।
তারা আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আমাকে মনে রাখবে তো? আমি বলেছি রাখব।
শুধু ঐ মেয়েটাকে কখনোই ভুলব না যে আমাকে কোনদিন বলেনি আমাকে মনে
রেখ।”
ডাইমেনশনাল সময়ে মনও বহুগামী হয়। আবার অসংকুচে বিশেষণ করে।
সোসাল ফ্লিক্সিবিলিটি ও কিংবা উদার নৈতিকতার পরিপূর্ণ ছাপ কেবল
শূণ্যের সাহসী তারণ্যের রচনাকেই খোঁজা যেতে পারে।
রাজা গোপালের শাসনামল, বাইকামুলী দাসী, কংক দাশী, থিবিস, মহান্ত।
এলিয়ট যেমন ফ্রিভার্স এর পাশপাশি কবিতায় মুক্ত ছন্দের সাথে লিরিক এর
ব্যবহার করেছেন তেমনি কাজী নাসির মামুনের কবিতায়ও দেখা যায়।
নাসির মামুনের কবিতা শুর“ হয়েছে পরম্পরা দিয়ে। যা শুর“ টিএস এলিয়টের
দ্যা লাভ সং অব জে আলফ্রেট প্র“ফক কবিতাটির স্টাইল-এ। যদিও বাংলা
সাহিত্যের এলিয়টের প্রভাব এলিয়ট চর্চা নতুন কিছু নয়। রবী ঠাকুর থেকে
জীবনানন্দ সবাই কোন কোন ভাবে এলিয়ট দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।
বইয়ে শিরোনাম কবিতাটি মামুন লিখেছেন মিথলজিকেল এসপেক্ট নিয়ে।
সিরিজ কবিতাটির সূচনা সনেটের আঙ্গিকে দেখে মিথের বৈশিষ্ট্যের সাথে
আঙ্গিকে কবি কবিতাটি সামঞ্জস্য আনতে চেয়েছেন বলে মনে হয়। কিš‘ এর
অধারাবাহিকতা (ডিসকনটিনিয়াস) পাঠককে এলোমেলো ভাবনার সামনে
দাঁড় করিয়ে দেয়। সিরিজ কবিতা কিংবা দীর্ঘ কবিতা স্বভাবতই কবির
কাছে একটুস বেশী মনোযোগ দাবি করে।
সূর্যই নাটের গুর“
“লখিন্দর বেহুলা জাগাও, কুলনাশা মরা দেশ।”
ও পাখি ও বৃক্ষ,
ও আমার লাটিম ঘুরানো মাঠ
দেখাবো সাহস?
লখিন্দরের গান শেষ হয় এভাবে
মাছে বাতে স্বপ্নমোড়া গুপ্ত পুলসেরাত;
আমার দখল নেবে কে আছে এমন?
বাঙালির জাতিয়তাবোধের দৃপ্ত উ”চারণের মধ্য দিয়ে এর অবিনাশী স্রোতের
প্রতিকূলে দাঁড়াতে চেয়েছেন কাজী নাসির মামুন। লক্ষ্য করছি উত্তরে
উপনিবেশিক চেতনা জাগ্রত হ”েছ আমাদের মধ্যে। আর এই জাগ্রহত চেতনার
সারনীতি ক্রমশঃ লম্বা হ”েছ ধৃষ্ট লাঠিয়ালদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পা”েছ,
যা আমাদের পরিচয় করিয়ে দি”েছ নিজের সাথে নিজেকে।
সুমন চট্টোপাধ্যায়ের “জাতিস্মর” গানে সুন্দর একটা কলি আছে।
“.......... বেহুলারা কখনো বিধবা হয় না
এটা বাংলার রীতি।”
এর দ্বারা পোস্ট করা
suMon azaD (সুমন আজাদ)
লেবেলসমূহ:
আলোচনা-সমালোচনা