পৃষ্ঠাসমূহ

বাংলাদেশে প্রকাশ্যে নারী নির্যাতন ও একজন আয়নাল চেয়ারম্যান


২৬জুন বদরগঞ্জে এক সালিস বৈঠকের নামে এক ফতোয়াবাজীর ঘটনায় হ্যাপী ও সাঈদাকে চরিত্রহীন অপবাদ দিয়ে প্রকাশ্যে তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। এরপর তাদের মাওলানা ডেকে এনে তওবা পড়ানো হয়। এই খবরটি বাংলাদেশের অনেক পত্রিকা এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এসেছে। টিভিতে প্রকাশ্যে দেখানো হয়েছে দুই নারীকে জনসমখ্যে লাঠি দিয়ে পিটানো হচ্ছে। গ্রামবাসী সবাই গোল হয়ে বসে প্রত্যক্ষ করেছেন এই সালিশের নামে অমানুষিক বর্বরতা। তারপর আবার যখন একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের রিপোর্টাররা সংবাদ সংগ্রহ করতে যায়, তখন বিচারকারী আয়নাল চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের মারধর করে অবরোদ্ধ করে রাখে।
কথা হচ্ছে একটি দেশে বিদ্ধমান আইন এবং বিচার ব্যবস্থা চলমান থাকা অবস্থায় কোনো একটি এলাকার প্রভাবশালীরা কিভাবে এবং কোন সাহসের আইন নিজেদের হাতে তুলে নেয়। আবার অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর, এতো মিডিয়ায় চলে আসার পর ঘটনার মূল হোতা আয়নাল চেয়ারম্যান কিভাবে ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকে? এই হোতাদের পরিচয় এবং বিচার কি বাংলাদেশে সম্ভব নয়? কথা হচ্ছে, জন প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা কেউই তো আইনের উর্ধ্বে নয়। তাই যারা বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর কাশীগঞ্জ গ্রামে সালিসের নামে ফতোয়া দিয়ে দুই নারীকে প্রকাশ্যে অমানুষিক নির্যাতন করেছে তারা হিংস্র পশুর সামিল। তাই তাদের দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হওয়া কি উচিত নয়? তা না হলে এ দেশের নারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতা ও হুমকির মধ্যে পড়বে। এ ধরনের অপরাধ প্রবনতা আরও বেড়ে যাবে।


হ্যাপি ও সাঈদাকে এখনও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা নিতে দেয়া হয়নি। তাদের বাজারে যেতে এবং পাড়া মহল্লায় কারও বাড়ি যাওয়ার বিষয়ে বিধি নিষেধ জারি করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে। নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে কিছু বললে তাদের সন্তানসহ আত্মীয় স্বজনদের হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। একটি সভ্য সমাজে এধরণের নির্যাতন কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থ করতে হবে। মূলহোতারা যত শক্তিশালীই হোকনা কেন তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনিছুল ইসলাম মন্ডল বলেছেন, 'এটা একটা ছোট ঘটনা। এর চেয়ে বড় ঘটনা দেশে ঘটছে।' তিনি বিষয়টিকে ছোট ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা কখনোই একজন জন প্রতিনিধির কাছ থেকে আশা করা যায়না। একজন জনপ্রতিনীধি যদি ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য এমন মন্তব্য করেন, তাহলে দেশে তো এ ধরণের ঘটনা দিনদিন বৃদ্ধিই পাবে। এমন ঘটনা অমানবিক। নারীর প্রতি চরম অবমাননা এবং নারী অগ্রগতির অন্তরায়। এর সঠিক এবং সুষ্ট বিচার সবাই কামনা করেন। ঘটনার মূল হোতা আয়নাল চেয়ারম্যানকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিতে হবে। সেই সাথে হ্যাপি ও সাইদার জীবনের নিরাপত্তা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

গানঃ চোখের ভেতর নোনাজলের আজব কারখানা

চোখের ভেতর নোনাজলের আজব কারখানা
অঝরধারায় ঝরে পরে বাধা মানে না।