এর দ্বারা পোস্ট করা
suMon azaD (সুমন আজাদ)
শাবিপ্রবি বন্দ। এ কথাটা এখন সবার জানা। কিন্তু কেউই জানেন না, খুলবে কবে। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর ক্যাম্পাস আজ নিথর। নিথর ক্যাম্পাসে শুধু হেঁটে বেড়ায় কিছু বিষণম্ন শিক্ষার্থী। অসহায় চোখগুলো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে চারপাশের জড় দালানগুলো। আর জড় পদার্থগুলোকে দেখে শুধু মনে পড়ে এমন স্বভাবের কিছু মানুষের কথা, যাদের জন্য আজ থেমে আছে সাড়ে ৬ হাজার ছাত্রছাত্রীর সুন্দর ভবিষ্যতের অগ্রযাত্রা। কী এমন ঘটেছিল যার জন্য আজ চার মাসেরও বেশি সময় ধরে শাবিপ্রবি অচল?
চলুন জানা যাক সেদিনের কথা : আর সব স্বাভাবিক দিনের মতো সেদিনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরেছে সবাই। বিভিন্ন ডিপার্টমেনাউটর পরীক্ষা ছিল কাছাকাছি সময়। আর তাই যে যার মতো করে প্রস্থুতি নিচ্ছেল। সন্দ্যার পরপরই রটে যায়, শাবির কিছু ছাত্রকে পাঠানটুলায় রাকীব-রাবেয়া কলেজে আটকে রাখা হয়েছে। সহপাঠী বন্দুদের এমন অবস্থার খবর শুনে কেউই বসে থাকতে পারেনি। তিন কিলোমিটার দূর থেকে ছাত্র হলগুলোর ছাত্ররা ছুটে আসে রাকীব-রাবেয়া মেডিকেলের সামনে। সময়ের ব্যবধানে সেখানে আগেই পুলিশ অবস্থান নেয়। পুলিশের সঙ্গে মেডিকেল কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে যখন ছাত্রদের কথা কাটাকাটি চলছে, তখন আগ্রহী কিছু ছাত্র গেটের ভেতরে ঢুকে এগুতে চাইলে পেছন থেকে গুলি করে পুলিশ। গুলির সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কয়েকটি তাজা প্রাণ। পুলিশের আকস্টি্মক আক্রমণে সবাই যেন হতবাক। তাৎক্ষণৎ আহত ছাত্রদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য কোনো গাড়ি না পেয়ে পুলিশের কাছে গাড়ি চাইলে তারা তা দিতে অপারগতা জানায়। যেন তারা ক্রসফায়ার করে ফেলে রেখেছে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের দেহ!
এসব ঘটনা পর্যন্ত আমাদের উপাচাযরাউর কোনো ভূমিকাই ছিল না! সঙ্গত কারণেই সহপাঠীদের হাসপাতালে রেখে এসে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা সেই রাতেই উপাচাযরাউর বাসভবন অবরোধ করে। পরে পুলিশের গুলিতে আহত শামীম মারা গেলে সব শিক্ষার্থী উপাচাযরাউর পদত্যাগ দাবি করে। অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের মুখে এক সময় তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, যা ছিল সেই মুহহৃতরাউ প্রত্যাশিত। তখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্দ ঘোষণা করলে সবাই ভাবে যে গ্রীষ্ফ্মের ছুটির পর খুলে যাবে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই উপাচার্য আবার স্বপদে ফিরে এলেন। তাই আবারো নতুন করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয় শাবিপ্রবি নিয়ে। পরে উপাচাযরাউর পদত্যাগ ও শামীম হত্যাসহ যাবতীয় ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদনেস্নর দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ধর্মঘটের ডাক দেয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনে যেসব শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কিংবা বাম ধারার তারা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপাচাযরাউর পদত্যাগই একমাত্র সমাধান মনে করে তারা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। ডানপন্থি শিক্ষকরা এ পরিস্থিতিতে উপাচাযরাউর পক্ষে অবস্থান নিলেও সব শিক্ষকই চান শিক্ষা কার্যক্রম যেন শুরু হয়। তবে আশ্চর্য এক কারণে উপাচার্য আজো বহাল আছেন। কিন্তু র্বতমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একটা বিষয় সুনিশ্চিত, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মুখোমুখি দুটি দল। এক. যারা ভিসির পদত্যাগ দাবি করছে। দুই. ভিসি নিজে। কারণ ভিসির পদত্যাগের জন্য যারা আন্দোলন করছে তাদের আন্দোলন ভিসি পদত্যাগ করলেই থেমে যাবে। অপরদিকে যারা সরকারপন্থি বা ভিসির পক্ষে, তারা কখনোই ভিসি পদত্যাগ করলে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করবে না। কারণ ভিসি যখন প্রথমবার পদত্যাগ করেন তখন তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো আন্দোলন হয়নি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, সিলেটের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এই শাবিপ্রবি নিয়ে নেতাদের নিষ্ফি্ক্রয়তা। আজ পর্যন্ত কোনো মন্ত্রী-এমপি শাবি নিয়ে একটি কথাও বলেননি। সরকারি কিংবা বিরোধীদলীয় নেতা-নেত্রীরা মুখে কুলুপ এঁটে আছেন। তারা একবারও এই সাড়ে ছয় হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা নিজেদের মূল্যবান কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন না! অথচ এদেরও ভোট আছে! আছে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ছোট-বড় একটা পরিবার। যারা নিশ্চয়ই ব্যালটে সিল দিতে এ কথা মনে রাখবেন? বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যথেষ্ঠ যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে থাকে এক একজন শিক্ষার্থী। এসব মেধাবী ছাত্রছাত্রী শিক্ষাজীবনে বারবার বাধাগ্রস্ত হলে সঙ্গত কারণেই হতাশ হয়ে পড়ে। আমাদের মতো দেশে শিক্ষাজীবন শেষে এক একজন শিক্ষার্থীর যে ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে, তা মোটেও সুখকর নয়। তারপরও যদি মেধাবী মাথাগুলো ব্যর্থতার দায়ে এখনই নুয়ে পড়ে, তার দায় কে নেবে? উপাচার্য যে এলেন কে গেলেন_ এতে আমাদের মতো সাধারণ ছাত্রছাত্রীর মাথাব্যথার তেমন কিছু নেই। আমরা শুধু চাই বিশ্ববিদ্যালয় চলুক তার আপন গতিতে। আর সেই গতিধারার সঙ্গে ভালো মিলিয়ে চলুন তারুন্যের স্বপম্নবুনন। এক একটি চোখ জ্বলজ্বল করে উঠুক সম্ভাবনার দু্যতি নিয়ে। শাবি ক্যাম্পাস থেকে শুরু হোক তারুন্যের জয়যাত্রা। আর সেই জয়যাত্রার পালে কখনো যেন না লাগে একটিও অনাকাঙ্খিত পালক।
নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাবিপ্রবি, সিলেট
সমকাল
প্রকাশিত লেখার লিংক
চলুন জানা যাক সেদিনের কথা : আর সব স্বাভাবিক দিনের মতো সেদিনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরেছে সবাই। বিভিন্ন ডিপার্টমেনাউটর পরীক্ষা ছিল কাছাকাছি সময়। আর তাই যে যার মতো করে প্রস্থুতি নিচ্ছেল। সন্দ্যার পরপরই রটে যায়, শাবির কিছু ছাত্রকে পাঠানটুলায় রাকীব-রাবেয়া কলেজে আটকে রাখা হয়েছে। সহপাঠী বন্দুদের এমন অবস্থার খবর শুনে কেউই বসে থাকতে পারেনি। তিন কিলোমিটার দূর থেকে ছাত্র হলগুলোর ছাত্ররা ছুটে আসে রাকীব-রাবেয়া মেডিকেলের সামনে। সময়ের ব্যবধানে সেখানে আগেই পুলিশ অবস্থান নেয়। পুলিশের সঙ্গে মেডিকেল কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে যখন ছাত্রদের কথা কাটাকাটি চলছে, তখন আগ্রহী কিছু ছাত্র গেটের ভেতরে ঢুকে এগুতে চাইলে পেছন থেকে গুলি করে পুলিশ। গুলির সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কয়েকটি তাজা প্রাণ। পুলিশের আকস্টি্মক আক্রমণে সবাই যেন হতবাক। তাৎক্ষণৎ আহত ছাত্রদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য কোনো গাড়ি না পেয়ে পুলিশের কাছে গাড়ি চাইলে তারা তা দিতে অপারগতা জানায়। যেন তারা ক্রসফায়ার করে ফেলে রেখেছে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের দেহ!
এসব ঘটনা পর্যন্ত আমাদের উপাচাযরাউর কোনো ভূমিকাই ছিল না! সঙ্গত কারণেই সহপাঠীদের হাসপাতালে রেখে এসে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা সেই রাতেই উপাচাযরাউর বাসভবন অবরোধ করে। পরে পুলিশের গুলিতে আহত শামীম মারা গেলে সব শিক্ষার্থী উপাচাযরাউর পদত্যাগ দাবি করে। অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের মুখে এক সময় তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, যা ছিল সেই মুহহৃতরাউ প্রত্যাশিত। তখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্দ ঘোষণা করলে সবাই ভাবে যে গ্রীষ্ফ্মের ছুটির পর খুলে যাবে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই উপাচার্য আবার স্বপদে ফিরে এলেন। তাই আবারো নতুন করে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয় শাবিপ্রবি নিয়ে। পরে উপাচাযরাউর পদত্যাগ ও শামীম হত্যাসহ যাবতীয় ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদনেস্নর দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ধর্মঘটের ডাক দেয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনে যেসব শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কিংবা বাম ধারার তারা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপাচাযরাউর পদত্যাগই একমাত্র সমাধান মনে করে তারা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। ডানপন্থি শিক্ষকরা এ পরিস্থিতিতে উপাচাযরাউর পক্ষে অবস্থান নিলেও সব শিক্ষকই চান শিক্ষা কার্যক্রম যেন শুরু হয়। তবে আশ্চর্য এক কারণে উপাচার্য আজো বহাল আছেন। কিন্তু র্বতমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একটা বিষয় সুনিশ্চিত, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মুখোমুখি দুটি দল। এক. যারা ভিসির পদত্যাগ দাবি করছে। দুই. ভিসি নিজে। কারণ ভিসির পদত্যাগের জন্য যারা আন্দোলন করছে তাদের আন্দোলন ভিসি পদত্যাগ করলেই থেমে যাবে। অপরদিকে যারা সরকারপন্থি বা ভিসির পক্ষে, তারা কখনোই ভিসি পদত্যাগ করলে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করবে না। কারণ ভিসি যখন প্রথমবার পদত্যাগ করেন তখন তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো আন্দোলন হয়নি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, সিলেটের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এই শাবিপ্রবি নিয়ে নেতাদের নিষ্ফি্ক্রয়তা। আজ পর্যন্ত কোনো মন্ত্রী-এমপি শাবি নিয়ে একটি কথাও বলেননি। সরকারি কিংবা বিরোধীদলীয় নেতা-নেত্রীরা মুখে কুলুপ এঁটে আছেন। তারা একবারও এই সাড়ে ছয় হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা নিজেদের মূল্যবান কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন না! অথচ এদেরও ভোট আছে! আছে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ছোট-বড় একটা পরিবার। যারা নিশ্চয়ই ব্যালটে সিল দিতে এ কথা মনে রাখবেন? বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যথেষ্ঠ যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে থাকে এক একজন শিক্ষার্থী। এসব মেধাবী ছাত্রছাত্রী শিক্ষাজীবনে বারবার বাধাগ্রস্ত হলে সঙ্গত কারণেই হতাশ হয়ে পড়ে। আমাদের মতো দেশে শিক্ষাজীবন শেষে এক একজন শিক্ষার্থীর যে ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে, তা মোটেও সুখকর নয়। তারপরও যদি মেধাবী মাথাগুলো ব্যর্থতার দায়ে এখনই নুয়ে পড়ে, তার দায় কে নেবে? উপাচার্য যে এলেন কে গেলেন_ এতে আমাদের মতো সাধারণ ছাত্রছাত্রীর মাথাব্যথার তেমন কিছু নেই। আমরা শুধু চাই বিশ্ববিদ্যালয় চলুক তার আপন গতিতে। আর সেই গতিধারার সঙ্গে ভালো মিলিয়ে চলুন তারুন্যের স্বপম্নবুনন। এক একটি চোখ জ্বলজ্বল করে উঠুক সম্ভাবনার দু্যতি নিয়ে। শাবি ক্যাম্পাস থেকে শুরু হোক তারুন্যের জয়যাত্রা। আর সেই জয়যাত্রার পালে কখনো যেন না লাগে একটিও অনাকাঙ্খিত পালক।
নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাবিপ্রবি, সিলেট
সমকাল
প্রকাশিত লেখার লিংক
লেবেলসমূহ:
নির্বাচিত কলাম