পৃষ্ঠাসমূহ

সাহিত্যিক পার্থ সারথি চৌধুরী'র সাক্ষাৎকার



পার্থ সারথি চৌধুরী
পার্থ সারথি চৌধুরী হবিগঞ্জের সাহিত্য অঙ্গনে এক সুপরিচিত নাম। ১৯৫১ সালের ২৫ ডিসেম্বর, ১৩৪৭ বাংলা ৯-ই পৌষ হবিগঞ্জ শহরের বগলা বাজার এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা অঘোর চৌধুরী, মাতা রানী চৌধুরী। হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বাল্যশিা শুরু করে ১৯৬৬ সালে তিনি এস.এস.সি পাশ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন 'মনন গ্রুপের' হবিগঞ্জ শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ও তখনকার সময়ে সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সহ সভাপতি ছিলেন।কলেজ জীবন থেকেই তাঁর সাহিত্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। কলেজে অনুষ্ঠিত বিতর্ক, আবৃতি, স্বরচিত কবিতা, প্রবন্ধ ও উপস্থিত বতৃতায় তিনি বরাবরই ১ম স্থান অধিকার করতেন। হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সাহিত্য পত্রিকা 'অভিযাত্রিক' এ লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৭২-৭৩ সালে সিলেট বার্তা পত্রিকার সাথে যুক্ত হন। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি সিলেট হরিপুর গ্যাস ফ্যাক্টরী হাই স্কুলে শিকতা করেন। এ সময় তিনি সিলেটের সাহিত্য অঙ্গনে বিচরণ করেন। হবিগঞ্জের বহু সাহিত্য সাময়িকী তিনি সম্পাদনা করেন। 'দ্বান্ধিক' ও 'প্রয়াস' তাঁর সম্পাদিত দুটি উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সাময়িকী। ১৯৭৮ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে সাংবাদিকতায় যোগ দেন। দেশবার্তা, যুগভেরী, গ্রাম সুরমা, স্বাধিকার, হবিগঞ্জ সমাচার, হলিডে ও লাল সবুজ পত্রিকায় তিনি নিয়মিত সংবাদ, ফিচার ও কলাম লিখতেন। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পত্রিকায় দীর্ঘদিন নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'বসন্তে বৈশাখ' বের হয়। ১৯৮৪ সালে ২য় কাব্যগ্রন্থ 'শিরীষতলার গাঁথা' বের হয়। পাঁচ শতকেরও অধিক কবিতা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। প্রথম উপন্যাস 'আমৃতু্য বাসনার লোকালয়', 'অধরা অভিসার' ও 'রাত্রির যৌবন' নামে ২টি উপন্যাস লিখেন। তাঁর ধারাবাহিক রম্য রচনা 'অশ্বডিম্ব', 'অচলপত্র', 'রূপান্তর' বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। পার্থ সারথি চৌধুরীর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে তিনি হবিগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গনের ১০০ বছরের ইতিহাস গ্রন্থনা করে 'কল্লোলিত হবিগঞ্জ' নামে একটি বই বের করেছেন। সাপ্তাহিক স্বাধীকারে প্রকাশিত 'অজানা বাঁশির টানে' ভ্রমণ কাহিনী পাঠক মহলে সাড়া জাগায়। 'কাণ্ডকারখানা' নামক প্রকাশিত সর্বশেষ গ্রন্থে তিনি আমাদের সমাজ ও রাষ্ঠ্রীয় জীবনের বিভিন্ন অসঙ্গতির রসাত্বক প্রকাশ করেছেন। কবি পার্থ সারথি চৌধুরীর আরো একটি পরিচয় না বললেই নয়, তিনি একজন ভাল আবৃতিকার ও সুবক্তা। তবে ১৯৮৪'র পর থেকে আজোবদি তিনি স্বেচ্ছায় সাহিত্যের সব শাখা-প্রশাখা থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন।

বটতলা চেয়েছে এই কবির কবিতার ভাষায় তাঁর সাথে আরাপচারিতা চালাতে। যেন 'কবি ও কবিতা' উভয়কে প্রাসঙ্গিক ভাবে উপস্থাপন করা যায়।



আরাপচারিতায় অংশগ্রহণ করেনঃ
তানসেন আমীন আহমেদ রনি সুমন আজাদ



"কতবার বিক্রি হলাম বেচা কেনার হাটে/তাই তো এখন ঘুমিয়ে আছি তেপান্তরের মাঠে"('প্রোফাইল' / বসন্তে বৈশাখ)

্# আপনি এখনো তেপান্তরের মাঠে ঘুমান নি। দিব্যি দিন কাটাচ্ছেন বগলা বাজারের বাসায়। তাই যদি প্রশ্ন করি 'কেমন আছেন' উত্তরে কি বলবেন?

্# হ্যা, ভালোই আছি। তবে চোখে ইদানিং খুব বেশী সমস্যা হচ্ছে। বলতে পারো চোখের ৮০% ই অকেজো।

***********************


"... যখন সবুজ ছিলাম/সোনালী রোদের বন্ধু ছিলাম। এখন/সময়কে খুন করে কী অদ্ভুত খুনী হয়ে গেলাম।"('ঘণ্ঠা বেজে গেছে' / শিরিষ তলার গাঁথা)

্# সেই ১৯৮৩ থেকে আজোবধি সময়কে হয় আপনি খুন করেছেন নয় তো খুন হয়েছেন। এই মধ্যবর্তি সময়ের শিথিলতাকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

্# দেখো, দীর্ঘদিন ধরে আমার শরীরে বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। চোখের সমস্যার কথা তো বলেছি, এছাড়া আমার কিডনীতে সমস্যা ছিলো। বিভিন্ন কারণে আমি সক্রিয় ভাবে লেখালেখি চালিয়ে যেতে পারি নি।

"ঘণ্ঠা বেজে গেছে ট্রেন এখন চলবেই/সময় ঘুমন্ত নয় অনিকেত ঘুমন্ত সত্তায়/চার্বাক ঘুমিয়ে আছেন অনন্ত স্রোতের সাথে/ঈশ্বরের ভালবাসা তীব্র হয়ে উঠে, অতঃপর.../........../ট্রেন তুমি থেমো না, ঘণ্ঠা বেজেছে তোমার"('ঘণ্ঠা বেজে গেছে' / শিরিষ তলার গাঁথা)

্# কবিতার ট্রেনটি জীবনের মতই গতিময়। সেই গতিতে আপনি পিছনে ফেলে এসেছেন এক একটি স্টেশন অর্থাৎ শৈশব- কৈশোর-যৌবন। আর এখন অতিক্রম করছেন বার্ধক্যের সীমানা। আমরা আপনার বেড়ে উঠার কাল অর্থাৎ ফেলে আসা দিনগুলোর কথা শুনতে চাই।

্# আমার শৈশবের অনেকটাই আবদ্ধ পরিবেশে কেটেছে। তোমরা জানলে অবাক হবে যে, আমি আমার জীবনে প্রথম কামড়াপুর গিয়েছি পাঁচ বছর পূর্বে। ছোট বেলা থেকেই বাহিরের পরিবেশের সাথে না মেশার ফলে এটা হয়েছে। আমার বাসার পেছনেই রেল লাইন ছিল। যখন থেকে বেরুতে শুরু করলাম, তখন রেলগাড়ি, রেল লাইন আমাকে ভীষণ টানতো। রেল লাইন ধরে হাঁটতাম। কখনো কখনো টিকেট ছাড়াই চলে যেতাম পরবর্তি স্টেশনে। এ সময়টা বেশ উপভোগ্য মনে হত। পরে ক্রমশ আবদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য বিদ্রোহ করতে শুরু করি। সে সময় লুকিয়ে সিগারেট খাওয়া, সিনেমা দেখা, রাত জেগে যাত্রা দেখা; সবই করেছি।

্# কিভাবে লেখালেখি শুরু করেন? কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন কি?

্# আমি ছোট বেলা থেকেই আবদ্ধ ঘরে বেড়ে উঠেছি। সে সময় থেকেই দেখে এসেছি আমাদের ঘরে অনেক অনেক বই। আমার বাবা, কাকা,, দাদা-দাদী, পিসিমা সবাই বই পড়তেন, পত্রিকা পড়তেন। এভাবে আমিও বইপত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি। আমার এক নানা যিনি ছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন সময়ের সংস্কৃতের একজন বড় পন্ডিত। ঐ পরিবারেও সংস্কৃতি চর্চাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হত। আমাদের বাড়িসহ ঐ বাড়ির অনুষ্ঠানাদি প্রত্য করার সুযোগ আমার হত। তাছাড়া আমার বাবার কাকাতো ভাইদের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি বিশ্বভারতীর তিন বারের উপাচার্য এবং ইন্ডিয়া গর্ভনমেন্টের অডিটর জেনারেল। উনার নাম ডঃ িিতশ চৌধুরী। আরেকজন ছিলেন উনার ছোট ভাই, যিনি 'ইউরোপের ইতিহাস' নামে একটা বই লিখেছিলেন। এই পণ্ডিত ব্যক্তিদের প্রভাব আমার উপর প্রত্য বা পরো ভাবে পড়েছে।




"কিছু কিছু স্মৃতি আছে; আমার কিছু কিছু/স্মৃতির শহর আছে, গভীর বিজন হৃদয় পটে/বিস্মৃতিরই খেলাঘরে।"('কিছু কিছু স্মৃতি আছে' / শিরিষ তলার গাঁথা)

্# আপনার স্মৃতির শহরের স্মৃতির মানুষগুলোর কথা বলুন, হবিগঞ্জে তৎকালীন কবিতা-প্রিয়দের সংগঠন 'শব্দ-শিল্পী'র কথা বলুন।

্# 'শব্দ-শিল্পী' প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ হওয়ার পূর্বে, পাকিস্তান আমলেই। আমরা কবি দেওয়ান গোলাম মোর্তাজা'র বাসায় বসতাম। আমাদের মধ্যে ছিলেন বৃন্দাবন কলেজের বাংলার অধ্যাপক বশীরুল হক, আব্দাল করিম, মোস্তফা শহীদ এম পি, সুর বিতানের সেক্রেটারী আজিজ, ইসমাইল তরফদার। মহিলা একজন ছিলেন_ রৌশন আরা রেবা। আমরা প্রতি সপ্তাহে অথবা ১৫ দিনে একবার ঘরোয়া ভাবে কবি সাহেবের বাসায় বসতাম। কেউ কবিতা বা গল্প নিয়ে এলে এখানে তা পাঠ করা হতো এবং এর উপর আলোচনা হত। আরও দুজন ছিলেন আমাদের সঙ্গে এডঃ নাজমুল হক নোমান, যিনি মনে হয় মারা গেছেন, আর অন্যজন আরিফ চৌধুরী; ভালো লিখতেন। মহিলার সংখ্যাও নগন্য ছিল না। প্রতি সপ্তাহেই আলোচনা হত। একটা পত্রিকা ছিল 'মৌলিক গনতন্ত্র' এটা আসলে আইয়ূব খাঁর মুখপত্র ছিল, তবে এতে শিল্প-সাহিত্যের নানা দিক নিয়েও আলোচনা হত। এভাবেই অনানুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় 'শব্দ-শিল্পী'। পরবর্তিতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সংগঠনটি আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এ সময় বৃন্দাবন কলেজের বাংলার শিক মতীন্দ্র সরকার, প্রফেসর মুক্তাদির, আব্দুল্লাহ (এখন মনে হয় অধ্যাপক হয়েছে) এবং প্রচুর সংখ্যক তরুণ-তরুণী আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়। আরো একজন শিক আমাদের সঙ্গে ছিলেন; বাবু নৃপেন্দ্র লাল দাশ। স্বাধীনতার পূর্বে সংগঠনের প্রতি উনার ব্যাপক অবদান ছিল। অনেক তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সবার নাম এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না। তবে মহিবুল হুসেন জিতু, দিলদার হোসেন দুলাল (এখন মনে হয় জজ হয়ে গেছে), মানিক দেব, ইসমাইল, আজিজ, শাহান উদ্দিন ছিল। শাহানারা নামে একটা মেয়েও ছিল। সংগঠনটা চলার জন্য মাসিক একটা চাঁদা ছিল।

্# সংগঠনের মূল উদ্দেশ্যটা কি ছিল?

্# সাহিত্য, স্রেফ সাহিত্য; আর কিছু না। এখানে সাহিত্য নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হত, মাঝে মাঝে ম্যাগাজিন বের করার চেষ্টা করা হত। আমাদের মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা একটু খারাপ ছিল অথচ ভালো লিখত তাদের বই বের করার জন্য আর্থিকভাবে সাহায্য করা হত।

্# সংগঠনের আর্থিক সহায়তায় বই প্রকাশ করেছেন এমন দু-এক জনের নাম মনে আছে?

্# হঁ্যা। চুনারুঘাটের গিরীশ রঞ্জন নাথ'র একটা বই প্রকাশ করা হয়েছিল। এ ছাড়াও আমরা বিভিন্ন গর্জিয়াস অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। বিভিন্ন জন্ম দিবস, মৃতু্য দিবসের অনুষ্ঠান ব্যাপকভাবে পালন করা হত। অনেক সময় ঘরোয়া ভাবে পালন করা হলেও আনুষ্ঠানিকতা ছিল। আমাদের এ সংগঠন থেকে প্রচুর সংখ্যক ছেলেমেয়ে সাহিত্যাঙ্গনে উঠে এসেছে। এখন যে উঝ হিসেবে রিটায়ার করেছে শেখ ফজলে এলাহী বাচ্চু সেও ব্যাপক ভাবে এটাতে ছিল। এভাবে... মনে কর, বিভিন্ন সময়ে 'শব্দশিল্পী'র প্রায় শ'খানেক সদস্য হয়েছিল। প্রবীণদের মধ্যে এডঃ নূরুল হক সাহেব এবং এম পি আবু লেইছ মুবিন সাহেবের মামা কবি শামসুদ্দিন সাহেব, তিনিও ছিলেন। আমার স্পষ্ট মনে নেই_ 'শব্দশিল্পী'র ইতিহাস কোন একটা কাগজে লিখেছিলাম, জিতুও মনে হয় লিখেছিল।

্# আপনার কথা থেকে বলা যায় 'শব্দশিল্পী' হবিগঞ্জের তৎকালীন সাহিত্য অঙ্গন নিয়ন্ত্রন করত?

্# হ্যাঁ, ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এটা ঠিক ছিল। তারপর আর সে ভাবে থাকে নি। সেই সময় কবি সাহেবের উদ্যোগে বিভিন্ন গুণি ব্যাক্তি হবিগঞ্জে এসেছেন। একজনের নাম বলা যেতে পারে; পটুয়া কামরুল হাসান, যিনি এরশাদকে 'বিশ্ব বেহায়া' বলেছিলেন। 'শব্দশিল্পী'র একটা অনুষ্ঠানে তিনি এসেছিলেন।

্# আপনার ভাষ্য মতে জানা যায়, ঐ সংগঠনে বিভিন্ন বয়সের লোকজন জড়িত ছিলেন। তাহলে পরবর্তিকালে সংগঠনের কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ার কারণ কি? কোন আইডিওলজিক্যাল কারণে এটা ভেঙ্গেছিল কি?

্# ঠিক আইডিওলজিক্যাল কারণে নয়। সব বিষয় বলা ঠিক না...। আসলে আমাদের সংগঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতার্দশের লোক থাকলেও আমরা চাইতাম শিল্প সাহিত্যের ত্রে হিসেবে 'শব্দশিল্পী' নিরপে থাকুক। এছাড়া আমরা চাইতাম কবি সাবকে একজন প্রতিষ্ঠান বিরোধী লোক হিসেবে দেখতে।

্# কবি দেওয়ান গোলাম মোতর্াজা কি এই সংগঠনের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন?

্# হ্যাঁ। উনাকে কেন্দ্র করেই এটা গড়ে উঠেছিল। যদিও অরগানাইজে আমি বা আমার সঙ্গী কয়েকজন ছিল। আমি সব সময়ই সংগঠনের সঙ্গে ছিলাম। অসুস্থ হওয়ার পর আমি চলে আসি। আমাদের মধ্যে অনেকেই চাকুরী নিয়ে, ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ বিদেশ চলে যান, আবার অনেকে মারাও গিয়েছেন।

্# 'শব্ধশিল্পী'র পরবর্তীতে হবিগঞ্জে এ ধরণের আর কোন সংগঠন না দাঁড়ানোর কারণটা কী?

্# ভাল অরগানাইজারের অভাব। এটা তো হল অনেকটা 'ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো'র মত ব্যাপার। সবাই এতে আসতে চায় না। একটা বিষয় বুঝতে হবে, সাহিত্য এমন একটা ব্যাপার যেখানে সংগঠন করে বা আড্ডা দিয়ে সাহিত্য হয় না, তোমাকে যা করতে হবে তা হল নিজের পড়ালেখার উপর ভিত্তি করে নিজেকে গড়ে তোলতে হবে। একটা সংগঠন করে তুমি কিছু পদ পেতে পারো কিন্তু তোমার মধ্যে যদি চড়ঃবহঃরধষরঃু বা শৃজনশীলতা না থাকে তবে সত্যিকার সাহিত্য বেড়িয়ে আসবে না। চড়ঃবহঃরধষরঃু থাকলে এটা অঁঃড়সধঃরপধষষু প্রকাশিত হবেই। 'শব্দশিল্পী' না থাকলেও আজকে যারা লেখালেখি করছে তাদের অনেককেই পাওয়া যেত। কিছু কিছু েেত্র সংগঠন হয়তো তাগিদ দিয়ে দাঁড় করানোর পেছনে একটা অবদান রাখে। আমি বা কবি সাব আমরা 'শব্দশিল্পী' না করলেও আমাদের লেখা এভাবেই সৃষ্টি হত।
খুব যে বেশী লেখালেখি হয়েছে তা-তো নয়। বিষয়টা হচ্ছে বাস্তবতা। হয়তো একজন চাকরী করে, তার সময় কোথায়? তার মনে হয়তো খেলা করে অনেক বিষয় কিন্তু সময় সুযোগের অভাবে লেখালেখি করতে পারে না। সবাই তো আমার মত বেকার থাকে না, তাই না?

্# আপনি বলেছেন, 'একজন লেখকের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে কিন্তু সাহিত্যের েেত্র সে নিরপে থাকবে'_ এটা কি সম্ভব?

্# না...না; নিরপেতা থাকবে অরগানাইজেশনের েেত্র। লেখার েেত্র একজন তার মতাদর্শ অবশ্যই ব্যক্ত করার অধিকার রাখে। কিন্তু যখন কোন সংগঠন করার প্রশ্ন আসে তখন সেেেত্র সংগঠনকে টিকিয়ে রাখার জন্য নিরপেতা প্রয়োজন। আমার কথা হলো, এটা একটা প্লাটফর্ম এখানে নিজেদেরকে গোষ্টিভুক্ত করে কোন রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তি থাকবে না। আমি বিশ্বাস করি; সাহিত্য মানে প্রগতিশীলতার চর্চা। প্রগতিশীল হলে সংগঠনে আসবে, না হলে আসবে না।

্# আপনি বললেন, সাহিত্য মানে প্রগতিশীলতার চর্চা, কিন্তু বর্তমানে অনেক সাহিত্যই প্রতিক্রিয়াশীলতার বাহনে পরিণত হয়েছে...

্# হ্যাঁ, এটা ঠিক। সাহিত্যের নামে এসব হচ্ছে। আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলি; দুয়েকটা সংগঠনে আমি ছিলাম, একটা সময় দেখলাম সংগঠনের নামে যা হচ্ছে তাতে আমার থাকা চলবে না। আমি চলে এলাম।

্# এরকমও হয়েছে, একজন বক্তব্য দেয়ার পরে অন্যজন মঞ্চে উঠে এসে বলল যে, এটা উনার ব্যক্তিগত বক্তব্য; আমাদের সংগঠনের নয়।

্# হাঃ হাঃ... ঘটনাটা শুনেছি।

"...স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়/তবুও দেয়াল ভাঙ্গতে চাইনা।"('একজন মধ্যবিত্ত আমি' / বসন্তে বৈশাখ)

্# আপনার এই উক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আপনার পরাজয় নাকি সব কিছু মেনে নেয়ার ব্যর্থ অজুহাত বলে ধরে নেব?

্# এই উক্তি যে আমার েেত্র প্রযোজ্য তা না। এখানে টোটাল মধ্যবিত্ত সমাজ, তার যে চরিত্র, চরিত্রের স্বরূপ, পুরো চারিত্রিক অবস্থানটা প্রকাশিত হয়েছে। মধ্যবিত্ত সমাজের বৈশিষ্ট্যটা কি? সে সংগ্রাম চায়, সে আন্দোলন চায় কিন্তু সে নিজে এটাতে জড়িত হতে চায় না। সে পরিবর্তনে শামিল হয় না; সে ভীতু! সামাজিক পরিবর্তনে তার মানসিক অবদান আছে কিন্তু শারীরিকভাবে সে অনুপস্থিত।

্# তবে কি মধ্যবিত্ত আপোষকামী?

্# হ্যাঁ, অবশ্যই আপোষকামী। সেজন্য-ই তো এদেশে এখন পর্যন্ত কোন সমাজ বিপ্লব হয় নি! ভারত বর্ষের কথা চিন্তা কর। এখানে সচেতন শ্রমজীবি মানুষের সংখ্যা সব সময়ই কম। মধ্যবিত্তের সংখ্যাই বেশী। মধ্যবিত্তের শ্রেণীগত অবস্থান তাকে বিপ্লবী হতে দেয় না, যদিও বা দুয়েকজন বিপ্লবী হতে চেয়েছে, আমার মতে 'রোমান্টিক বিপ্লবী' হয়েছে। যেমন; চারু মজুমদার.... আব্দুল হক সাহেব, তোহা সাহেবদের অবস্থাও ছিল সে রকম।

্# মধ্যবিত্তের প েতার শ্রেণী চরিত্র ডিঙ্গিয়ে কি বিপ্লবী হওয়া সম্ভব?

্# হ্যাঁ, মাঝে মধ্যে এটা হয়েছে। যেমন; কমরেড মোজাফফর আহমদ, মণি সিং, অজয় ভট্টাচার্য্য এদের েেত্র এটা সম্ভব হয়েছে।

্# আপনি কি প্রতিষ্ঠান বিরোধী?

্# হ্যাঁ, আমি প্রতিষ্ঠান বিরোধী। আসলে এখানে প্রতিষ্ঠান বলতে আমি বুঝি দঊংঃধনষরংযসবহঃ্থ। আমাদের 'শব্দশিল্পী' কোন প্রতিষ্ঠান ছিল না। এটা ছিল একটা প্লাটফর্ম। এখানে কোন বাধ্য-বাধকতা ছিল না। যেমন; চাঁদা দেয়ার ব্যাপারে বা সদস্য হওয়ার ব্যাপারে কিংবা লেখার ব্যাপারে।


***********************



"ভয়ে ভয়ে এবার চোখ খুলো। দেখছোনা/মধ্য প্রাচ্যের আকাশে এখন বারুদের ঝড়/কাল বোশেখীর মতো ফুঁসে ফুঁসে উঠছে।"('উনিশশ' পঁচাশী খ্রষ্ঠাব্দ' / বসন্তে বৈশাখ)

্# আজো আমরা ভয়ে ভয়ে চোখ খুলি। মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে এখনো বারুদের টাটকা গন্ধ। একজন সচেতন কবির কাব্য সৃষ্টিতে সমকালীন চিন্তা স্থান পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। তারপরও আমরা এর কারণটা জানতে চাচ্ছি?

্# হয়তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয় নি, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেছে কিন্তু পরিপ্রেতি তো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। আমরা দেখি, একতরফা একটা ব্যাপার হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত প েএকতরফা কোথায়? আজকের যে আলকায়েদা, তা কি ঐ বৃহৎ শক্তির জন্য একটা বিদ্রোহী শক্তি হিসেবে আত্ন-প্রকাশ করেনি? করেছে। আলকায়েদা'র আর্দশকে আমি সমর্থন করি না কিন্তু তার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীতাকে আমি প্রসংশা করি।

্# মধ্যপ্রাচ্যের অশান্তি কি কোন দিন দূর হবে না?

্# হ্যাঁ, হতে পারে। মানুষ যদি দাঁড়িয়ে যায় তবে শান্ত হবে। হয়তো আপোষও করতে হতে পারে, যেমন ধর নেপালের অবস্থা। সেখানে এমন একটা পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল যাতে যে কোন সময় কমিউনিস্টরা মতায় আসতে পারত, কিন্তু একটা আপোষ হয়ে গেল। কমিউনিজমই যে সঠিক তা-ই বা বলি কি করে? সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গে কেন? যেখানে বলা হল শ্রমিক শ্রেণীর একনায়কত্ব সেখানে পারিবারিক একনায়কত্ব কেন আসে? মাওয়ের পারিবারিক একনায়কত্ব কেন আসবে? স্ট্যালিনের পারিবারিক একনায়কত্ব কেন আসবে? চসেস্কুর পারিবারিক একনায়কত্ব কেন আসবে? প্রশ্ন হল এসেই যাচ্ছে...। আমি এক সময় কমিউনিজমের পূজারী ছিলাম কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি এখনো অনুরূপভাবে কমিউনিজমের পূজা করব। আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে শ্রমিক শ্রেণীর হাতে মতা কোথায়? যারা আন্দোলন করে নেতা হল তারা তো অন্য ধরণের একটা রাজতন্ত্র কায়েম করেছে।

্# শ্রমিক শ্রেণী থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি এখন এলিট হয়ে গেছেন, তারা শ্রমিকের সঙ্গে নেই...

্# হ্যাঁ, তাই হয়েছে।

্# 'যে কোন তত্ত্ব-ই একটা সময়ে এসে তার কার্যকারিতা হারায়' মাকর্সবাদের েেত্র উক্তিটি কতটা প্রযোজ্য?

্# দেখ, কমিউনিজমের মূলতত্ত্বটা কি? তা হল_ দ্বান্ধিক বস্তুবাদ। দ্বান্ধিক বস্তুবাদটা কি? তা হল; থিসিস-এন্টিথিসিস ঞযবহ সিনথিসিস। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া এটা চলতেই থাকবে। এ েেত্র যা হয়েছিল, যেখানেই কমিউনিস্টরা মতায় গিয়েছিল, মতায় গিয়ে তারা প্রক্রিয়াটি থামিয়ে দিল। মতাবানরা শাসক গোষ্টিতে পরিণত হল। সোভিয়েত ইউনিয়নে ট্রটস্কির একটা বিরোধিতা ছিল। ট্রটস্কি বলেছিল, একটা দেশে কমিউনিজম চালু হলেই কমিউনিজম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় না; অনবরত প্রক্রিয়ায় সারা বিশ্বেকেই এক বিশ্ব করে নিতে হবে। এটাতে অবাস্তবতা থাকলেও তত্ত্বের দিক থেকে এটা খুব সুন্দর। ব্যাপারটা হল যে, মাকর্স এর কথাগুলো তো সব েেত্র অনুসরণ করা হয় নি। মাও চেষ্টা করেছিলেন; ব্যর্থ হয়েছেন। আজকে যাকে মাওইজম বলে এটা ফালতু কথা, এটা ঠিক না, এটা মার্কসইজমই। আজকে চীনে কি অবস্থা? চীন তো সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে আছে। চীনে নামে কমিউনিস্ট পার্টি আছে কিন্তু তা পুঁজিবাদের আখড়া। এক সময় শোনা যেত চীনে না খেয়ে মানুষ মারা যায় না, এখন শত শত মানুষ না খেয়ে মারা যায়। বিষয়টা হল যে, মাকর্স এর নীতিটা সঠিক ভাবে অনুসরণ করা হয় নি, যে সময় যে দল মতায় গেছে কমিউনিজমের নামে তারা নির্দিষ্ট ধিু তে শাসন করেছে।

্# ভবিষ্যতে মার্কসবাদ'র চেয়ে ভালো তত্ত্ব কি আমরা আশা করতে পারি?

্# এটা সময়ের ব্যাপার। তবে আমি মনে করি, তত্ত্বের দিক দিয়ে বিচার করলে মার্কসবাদ অনন্য। যতদিন বিশ্ব-ভ্রমাণ্ড থাকবে ততোদিন মার্কসবাদের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। এটা হল তত্ত্বের দিক কিন্তু বাস্তবতা তো অন্য জিনিস। যেমন কাউকে যদি বিপ্লবের কথা, সংগ্রামের কথা বলা হয় আর অন্য দিকে ল ল টাকা দেয়া হয়, তবে সে টাকাটাকেই বেশী মূল্য দেবে। একটা রূপান্তর ঘটানোর জন্য যে প্রচণ্ড শক্তির প্রয়োজন তা সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় নি। মানুষ সাধারণত ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার টার্গেট নিয়েই বেশী ভাবে, সমগ্র মানব জাতির কল্যানের বিষয়টা চিন্তা করা সহজ সাধ্য বিষয় নয়।






"এশিয়ার বেকার যুবকের হৃৎপিণ্ড লাফাচ্ছে/অন্ধ প্রকোষ্ঠে, উষ্ণ রক্ত-চাপে ভেঙ্গে যাচ্ছে যুবতীর/স্বপ্নময় অহংকার। ওখানে চকচকে সূর্য বড়ো বেমানান/অনুজ্জ্বল।"('তুমিও ফেরাবে মুখ' / শিরিষ তলার গাঁথা)

্# আপনার কবিতার রচনাকালের সাথে আমাদের জন্ম থেকে এখন যে বয়েসে আছি, সেই সময়টুকুর ফারাক। তবুও আজোও কি ওখানে চকচকে সূর্যটা মানায়?

্# সমগ্র বিশ্বের প্রোপটে সময়টা ছিল শীতল যুদ্ধের কাল। এক দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন অন্যদিকে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ। যেকোন মুহূর্তে একটা পারমাণবিক যুদ্ধ বাধার সম্ভাবনা ছিল। সেই সময়টাতে সমগ্র পৃথিবীতে বেকারত্ব বেড়ে গেল, বিভিন্ন স্থানে দুর্ভি ছড়িয়ে পড়েছিল_ এক কথায় গোটা সময়টা ছিল অস্থিতিশীল।

্# তৎকালীন প্রোপটে কবিতাটি লিখা হলেও বর্তমানে এর প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু?

্# সত্যিকার মুক্তি বলতে যা বুঝায় তা তো এখনো আসে নি। একটা পরিবর্তন হয়েছে, পরিবর্তনটা কি? তোমার হাতে একটা মোবাইল এসেছে, একটা কম্পিউটার বেড়েছে। অথর্াৎ নতুন নতুন প্রযুক্তি এসেছে।

্# আমরা প্রযুক্তির দিক দিয়ে অগ্রসর হয়েছি...

্# না, প্রযুক্তিটা এখানে মিস ইউজ হচ্ছে। আমরা পরিপূর্ণ ভাবে প্রযুক্তিটার ব্যবহার করতে পারছি না। এই প্রযুক্তিটা আমাদের দিকে কে ঠেলে দিল? আমাদের ডেভেলপমেন্ট এর পূর্বেই যে আমাদের হাতে প্রযুক্তি চলে এসেছে এর পেছনে কে? টাকাটা কোথায় যায়? মোবাইলের একটা টাকাও কি বাংলাদেশে থাকে? সমগ্র বাংলাদেশে যে মোবাইল কোম্পানীগুলো আছে, মুখে যে নামেই চলুক না কেন, সবগুলোর মালিক বিদেশীরা। প্রতি মুহুর্তে যে কি পরিমান টাকা চলে যাচ্ছে সেটা অকল্পনীয় ব্যাপার। প্রযুক্তি ব্যবহারে আমার কি লাভবান হচ্ছি? ওরা তো আমার পকেট কেটে নিয়ে যাচ্ছে! আমি আবেগের বশবতর্ী হয়ে মোবাইলে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বললাম কিন্তু টাকাটা তো অন্যের হাতে চলে যাচ্ছে। আর সরকারের ট্যাঙ্রে পরিমাণটা লাভের তুলনায় সামান্যই।


***********************

"সঞ্চয়িতা ফেলে রাখি টেবিলে;/মানসী কিংবা নলিনীর সাথে/মিলাতে পারি না জীবন, আমি/যা দেখি_ সবই অব্সীন!"('জনান্তিক' / শিরিষ তলার গাঁথা)

্# জীবনের এই যে বৈপরিত্যঃ দৃষ্ঠিভঙ্গির ভিন্নতা, পূর্বসূরির সাথে উত্তরসূরির মত পার্থক্য কিংবা দ্বন্দ্ব; সাংস্কৃতিক বিবর্তনে এটা ঘটেই। আপনি ব্যাপারটাকে কোন দৃষ্ঠিভঙ্গিতে দেখেন?

্# দৃষ্টিভঙ্গির বৈপরিত্য থাকবেই। এটা পজেটিভ বা নেগেটিভ দুটোই হতে পারে। এই ভিন্নতা থাকেই; এটাই নিয়ম।



***********************

এবার অন্য একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইবো, আপনার বসন্তে বৈশাখ কবিতায় আপনি বলেছেন_
"মাটির নরোম বুকে শিকড়ের অনিবিড়/অমতায় যে গাছ মরে যায়/হিসেবী সংসারে কে রাখে তার খবর?"('বসন্তে বৈশাখ'/ বসন্তে বৈশাখ)

্# 'নগর জীবনে মমত্বের বাধন খুবই নাজুক। যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাচ্ছে, যান্ত্রিকতা কিংবা আধুনিকতা মানুষকে ক্রমশঃ আত্নকেন্দ্রিক করে দিচ্ছে'_ এই অভিযোগ থেকে চলমান প্রজন্মকে আপনি কি করে রেহাই দেবেন?

্# হ্যাঁ, আমাদের যৌথ পরিবারভিত্তিক যে সমাজ; তা ক্রমশ ভেঙ্গে যাছে। আমাদের যৌথ পরিবারে শোষণ, নির্যাতন যা ছিল তাকে আমরা ধামা চাপা দিয়ে রাখতাম। আমরা একজনের মতামত অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে চাইতাম। পরিবারে যিনি কর্তা অথর্াৎ যার সবের্াচ্চ মতা ছিল অন্য সদস্যরা তার কথা শুনতে বাধ্য হত। যৌথ পরিবারে মমত্ববোধের একটা ব্যাপার ছিল কিন্তু অন্য দিকে বিচার করলে অনেক যৌথ পরিবারই ব্যক্তিসত্বার বিকাশে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়টা আমি নিজের জীবনে প্রতি পদে পদে অনুভব করেছি। আমি বার-তের বছর বয়স পর্যন্ত আমার ঘরের বারান্দার বাহিরে যেতে পারিনি। বাইরে যাবার কোন অধিকার আমার ছিল না।

্# এখন যে কথাটা বলা হয়ে থাকে, তা হল_ যান্ত্রিকতার নামে, আধুনিকতার নামে মানুষ অমানবিক হয়ে যাচ্ছে। এখানে মনস্তাত্তি্বক কারণও থাকতে পারে। আমরা জীবনের একটা পর্যায় পর্যন্ত পরিবারের উপর নির্ভরশীল থাকি। তারপর যখন অর্থনৈতিক ভাবে নির্ভরশীল হয়ে যাই তখন যৌথ পরিবার ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসি। অধিকাংশ েেত্র বাহ্যিক মমত্ববোধের নামে যা থাকে তা হল নির্ভরশীলতা।

্# এটার কারণ হল সমাজ বিকাশ প্রক্রিয়া যে যে কারণে বাধাগ্রস্থ হয়; সেই কারণে রাষ্ট্রও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে আবার সমাজ পিছিয়ে যাচ্ছে। আর সমাজ পিছিয়ে যাওয়া মানে পরিবার পিছিয়ে যাওয়া। এেেত্র দেখা যায় আমাদের পরস্পরের প্রতি সন্দেহ, ভয়, সম্মানবোধহীনতা এসব কারণই এর জন্য দায়ী। বর্তমানে 'যান্ত্রিকতা' বলতে যা বুঝানো হয় তা আমাদের সুশীল সমাজ কতর্ৃক একটা দাঁড় করানো সংজ্ঞা। তা অস্পষ্ট। যান্ত্রিকতা মানবিকতার পথে কোন বাধা হতে পারে না।


***********************



"হে আমার ঋত্তিক মা করো/আজো যদি জানতে চাও/'বৎস' বড়ো হলে তুমি কি হবে?/সবিনয় বলবোঃ/আপনার যমদূত হবো স্যার।"('ঋত্তিক মা করো' / বসন্তে বৈশাখ)

্# আমরা জানতে চাচ্ছি, পার্থ সারথি চৌধুরী কি তাঁর গুরুর যমদূত হতে পেরেছিল?

্# এটা তো বিদ্রোহী হওয়া। আত্ন সমর্পণ তো সেখায় নত হওয়ার কথা। অনেকেই সততার কথা বলে সততা রাখেন নি। আজকে ইয়াজউদ্দিন সাহেবের কথা চিন্তা কর, নিজের ব্যাপারে যিনি সৎ নন। তবে কবিতার কথা এসেছে অন্য অর্থে।


***********************

"একুশ আজ মোহন মন্দির/একুশ আজ ধ্রুপদী প্রজ্ঞা"('মহাকালের কাব্য' / বসন্তে বৈশাখ)

্# আজ যখন ধ্রুপদী প্রজ্ঞার মন্দিরের বেদীতে অন্যান্যের পাশাপাশি পা পড়ে একাত্তরের ঘাতকদেরও _ তখন কেমন লাগে?

্# একটা জিনিস হল, মানুষের মনের পরিবর্তন হতে পারে। এক সময় আমি ঘোরতর কমিউনিস্ট ছিলাম, আর আজকে আমি কমিউনিজমকে ঘৃণা না করলেও গ্রহণও করতে পারি না। অনেক সময় মানুষ পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেক কিছুর সাথে আপোষ করে। কিন্তু যারা ঘোরতর অপরাধী যেমন; গোলাম আজম, নিজামী। ওরা তো স্বতন্ত্র, ওরা তো ঘাতকদের স্রষ্টা। কিন্তু অনেক সময় আমরা অনেক সাধারণ মানুষকেও দোষারোপ করি। অনেক ডাকাত মুক্তিযোদ্ধ করেছে আবার অনেক মুক্তিযোদ্ধাও ডাকাতি করেছে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে দেখেছি যুদ্ধের পর তারা অনেক বাজে কাজ করেছে। আবার অনেকে বাধ্য হয়ে রাজাকার হয়েছিল কিন্তু লোক হিসেবে খারাপ ছিল না। এটা পারস্পরিক অবস্থার প্রেেিত বিবেচ্য।


***********************



"বিবর্ণ প্রহরে ঈশ্বর মরে যায় মুহূর্তে মুহূর্তে।"('ঘণ্ঠা বেজে গেছে' / শিরিষ তলার গাঁথা)

্# আমরা যদি ধরে নিই শুধু বেঁচে তাকে ঈশ্বরের সৃষ্ট স্রষ্টামানবের সৃষ্টি, তবে একজন লেখকের সৃষ্ঠি তাঁকে ভবিষ্যতের নিকট কতটা জীবন্ত করে রাখতে পারে বলে আপনার ধারণা ?

্# একটা জিনিস আমি দৃঢ় কণ্ঠে বলি, আমি বড় লেখক নই; অত্যন্ত ুদ্র লেখক। তবে আমি যা-ই লিখেছি তাতে মানুষের চিন্তার খোরাক দিতে চেয়েছি। গতানুগতিক ব্যাপারগুলো আমার ভাল লাগে না। একটা লেখাতে যদি মেটারিয়ালস না থাকলো তবে আমি পড়ব কেন?

***********************
অক্ষর-রূপান্তরেঃ
তানসেন আমীন